ক্যাম্পাসে অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলা করতে ঠিক কী ধরনের বন্দোবস্ত থাকা দরকার, সে ব্যাপারে পরামর্শ চেয়ে এ বছরের এপ্রিল, জুন ও নভেম্বর মাসে দমকল-কর্তাদের কাছে তিন-তিনটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। জবাব মেলেনি একটিরও।
গত বছরের অক্টোবর মাসে আগুন লেগেছিল প্রেসিডেন্সির রসায়ন গবেষণাগারে। পুড়ে গিয়েছিল বেশ কিছু যন্ত্রপাতি ও গবেষণাপত্র। তার পরেই ঠিক কী কারণে আগুন লেগেছে এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের অগ্নিকাণ্ড এড়াতে গবেষণাগারে কী ধরনের ব্যবস্থা থাকা দরকার, তার সুপারিশ করার কথা ছিল দমকলের। কিন্তু বছর পেরিয়ে গেলেও সেই রিপোর্ট এখনও এসে পৌঁছয়নি প্রেসিডেন্সিতে।
স্টিফেন কোর্ট এবং আমরি হাসপাতাল কলকাতায় দু’বছরে পরপর দু’টি বড়সড় অগ্নিকাণ্ডের পরে তাই ফের নড়েচড়ে বসেছেন কলকাতা ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কারণ, এরই মধ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসে এবং প্রেসিডেন্সির রসায়ন গবেষণাগারে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।
শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছ’টি ক্যাম্পাস। চলতি বছরের মার্চ মাসে হাজরা রোডে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসে আগুন লাগে। তার পরেই দমকলের সাহায্য চান উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। তিনি বলেন, “এ বছর এপ্রিল, জুন এবং নভেম্বরে চিঠি পাঠিয়েছি। কিন্তু একটিরও জবাব আসেনি।” মঙ্গলবার উপাচার্য জানান, দমকলের সহায়তা চেয়ে বিভাগীয় সচিবের কাছে ফের চিঠি পাঠানো হচ্ছে। তার সঙ্গে আগের চিঠিগুলির প্রতিলিপিও পাঠানো হবে। আপাতত একটি বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে ক্যাম্পাসে স্বয়ংক্রিয় অগ্নি-নির্বাপক, স্প্রিঙ্কলার ইত্যাদি লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য।
কিন্তু দমকলের সহায়তা চেয়ে তিনটি চিঠি পাঠানোর পরেও কেন জবাব পায়নি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়? এডিজি (ফায়ার) দেবপ্রিয় বিশ্বাস বলেন, “ওদের প্রেসের ব্যাপারে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। অন্য বিষয়ে এখনও রিপোর্ট দেওয়া যায়নি। চেষ্টা করছি, যাতে দ্রুত তা দেওয়া যায়।”
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আগুন নেভানোর জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে ইউজিসি-র আর্থিক সহায়তা মিলবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য প্রদীপনারায়ণ ঘোষ। এ দিন তিনি জানান, উৎকর্ষের সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পেয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। এ জন্য আপাতত ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে ইউজিসি। তার মধ্যে চার কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে ব্যয় করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর অর্ধেক ব্যয় হবে ক্যাম্পাসের সুরক্ষায়। তার জন্য ভবনগুলিতে একাধিক সিঁড়ি, ঢোকা-বেরোনোর জন্য দু’টি পথের ব্যবস্থা করা, ফায়ার-অ্যালার্ম, স্প্রিঙ্কলার বসানো, বিদ্যুতের তার ঠিকঠাক আছে কি না তা দেখা ইত্যাদি কাজ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রদীপবাবু।
প্রেসিডেন্সি-কর্তারা ঠিক করেছেন, ক্যাম্পাসে আগুন নেভানোর আধুনিক ব্যবস্থা করার দায়িত্ব দেওয়া হবে একটি বেসরকারি সংস্থাকে। উপাচার্য মালবিকা সরকার জানান, ওই সংস্থাটি বহু প্রতিষ্ঠানে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা গড়েছে। কিন্তু রসায়নাগারে আগুন লাগার পরে দমকলের পক্ষ থেকেও তো কিছু সুপারিশ আসার কথা? প্রেসিডেন্সি সূত্রের খবর, বছর পেরিয়ে গেলেও সেই সুপারিশ আসেনি। কিন্তু কেন? এডিজি (ফায়ার)-এর সংক্ষিপ্ত জবাব, “ফাইলের কাজ হচ্ছে।” |