সব জটিলতার অবসান ঘটিয়ে শালবনিতে জিন্দল গোষ্ঠীর ইস্পাত প্রকল্প এবং উলুবেড়িয়ায় প্যাটন সংস্থার কোল্ড রোলিং মিল ও ওয়্যারহাউসিং পরিকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে ছাড়পত্র দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। মঙ্গলবার রাজ্যের তরফে এই মর্মে নির্দেশ জারি হয়েছে।
ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের জারি করা ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য দফতরের সুপারিশ মোতাবেক ১৯৫৫-এর ভূমি সংস্কার আইনের ১৪(ওয়াই) ধারা অনুসারে দু’টি সংস্থাকেই ঊর্ধ্বসীমার অতিরিক্ত জমি রাখার ‘ছাড়পত্র’ দেওয়া হল। শিল্পের জন্য জমির ঊর্ধ্বসীমা আইনে এমনিতে সর্বাধিক ২৪ একর ২২ শতক জমি রাখার কথা বলা হয়েছে। তবে কারখানা, চা-বাগানের মতো নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্রে জমির ঊর্ধ্বসীমা সংক্রান্ত বিধি শিথিল করার ক্ষমতা রয়েছে রাজ্য সরকারের। সেই মতো জিন্দল ও প্যাটনকে ঊর্ধ্বসীমার বেশি জমি রাখার অনুমতি দেওয়া হল। তবে, জিন্দল এবং প্যাটন দু’টি সংস্থার ক্ষেত্রেই সরকারি নির্দেশে জানানো হয়েছে যে, নির্দেশ জারির তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। অন্যথায় দু’টি প্রকল্পেরই সমস্ত জমি ফের ১৯৫৫ সালের ভূমি সংস্কার আইনের ১৪(এম) ধারা মোতাবেক জমির ঊর্ধ্বসীমা সংক্রান্ত বিধিনিষেধের আওতায় চলে আসবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে জিন্দলদের সরাসরি কেনা ২৯৪ একর জমি ঊর্ধ্বসীমা আইনের বাধায় পড়েছিল। এই নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে টানাপোড়েন চলে। ঊর্ধ্বসীমার বেশি জমি রাখার অনুমতি দিয়ে নির্দেশ জারির পর প্রশাসনের আশা, এ বার ওই ইস্পাত প্রকল্পের কাজ জোরকদমে শুরু হয়ে যাবে। পাশাপাশি, সরকারের এই ঘোষণার মধ্যে দিয়ে শিল্পমহলের কাছে নতুন বার্তাও দেওয়া গেল বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একাধিক বার মুখোমুখি হয়েছে শিল্পমহল। পুজোর পর এমনই এক অনুষ্ঠানে শিল্পের জন্য জমি পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের নীতি কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন কেউ কেউ।
মুখ্যমন্ত্রী তখন জানিয়েছিলেন, রাজ্যে ‘শিল্প বিপ্লব’ আনা ভবিষ্যতে তাঁর অন্যতম অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়বে। তার কয়েক দিনের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে রাজ্য মন্ত্রিসভার শিল্প বিষয়ক স্থায়ী কমিটির বৈঠক বসে। সেই বৈঠকে জমির ঊর্ধ্বসীমা সংক্রান্ত বিধিনিষেধের বেড়াজালে আটকে থাকা বেশ কয়েকটি প্রকল্পকে ছাড়পত্র দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগের প্রকল্পটি ছিল জিন্দলদের। ওই প্রকল্পে প্রথম দফায় ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ৩০ লক্ষ টন ইস্পাত উৎপাদনের কথা রয়েছে।
ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর তার নির্দেশে শালবনিতে ইস্পাত প্রকল্প তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৪১৭৮ একর জমিই জিন্দলদের হাতে রাখার অনুমতি দিয়েছে। শুধুমাত্র যে ০.৩৬ একর পাট্টা জমি জিন্দলরা নিজেদের হেফাজতে রাখতে চেয়ে আবেদন করেছিল, তা খারিজ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। প্যাটন তাদের কারখানার জন্য উলুবেড়িয়ায় ৫৬ একর জমি চেয়েছিল। তাদেরও জমির ঊর্ধ্বসীমা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। |