ছ’মাসে পতন ৮০০ পয়সা
উল্কাগতিতে পড়ছে টাকার দাম
ল্কার গতিতে পড়ছে টাকার দাম। মঙ্গলবারও ফের ৩৯ পয়সা কমে পতনে নতুন নজির গড়েছে টাকা। এর ফলে দিনের শেষে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে ৫৩.২৩/২৪ টাকা।
এক দিকে ইউরোপের আর্থিক মন্দার প্রভাব, অন্য দিকে দেশের আর্থিক অবস্থার অবনতি, এই দুইয়ের জাঁতাকলে পড়ে টাকার দাম গত ছ’মাসের মধ্যেই পড়ে গিয়েছে ৮০০ পয়সার বেশি। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আরও পড়তে পারে টাকা।
মূলত ডলারের জোগান কমে যাওয়ার ফলেই টাকার দাম হু হু করে পড়ছে। যেমন: প্রথমত, মন্দার কবলে পড়া উন্নত দুনিয়ায় ভারতের রফতারির বাজার পড়ে যাওয়ায় ডলারের আয় কমেছে। দ্বিতীয়ত, আমদানির খরচ বেড়ে যাওয়ায় ডলার খরচ বাড়ছে। তৃতীয়ত, বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলি ভারতের বাজার থেকে লগ্নি তুলে নেওয়াও ডলারের জোগান কমার অন্যতম কারণ।
অবস্থা সামাল দেওয়ার দাওয়াই বাতলাতে পারছে না কেউই। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ইতিমধ্যেই বিদেশি মুদ্রায় ঋণ নেওয়ার ঊর্ধ্বসীমা বৃদ্ধি, ব্যাঙ্কে বিদেশি মুদ্রার আমানতে সুদ বাড়ানো-সহ আরও কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু তাতে এখনও তেমন ফল মেলেনি।
ঠিক এই পরিপ্রেক্ষিতেই টাকার মূল্য হ্রাসে লাগাম পরাতে এক দিকে বিদেশি মুদ্রার খরচ কমানো এবং অন্য দিকে তার আয় বাড়ানোর উপরেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে জোর দিতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জোগান বাড়ানোরই অন্যতম উপায় ডলার বা সাধারণ ভাবে বৈদেশিক মুদ্রার আমানত বৃদ্ধি। আর, এই লক্ষ্যেই সুদ বাড়ানোর পুরনো পন্থাকেই এখনও পছন্দ করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। শিল্পমহলের বিপরীতে হেঁটে তাঁরা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গেই গলা মিলিয়ে সুদ বাড়ানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন। তাঁদের মতে সুদ আরও বাড়লে ভারতের পক্ষে ডলারের আমানত টানা সহজ হবে। যেমন, অনাবাসী ভারতীয় এবং অন্যরা এ দেশে ডলার রাখতে উৎসাহিত হবেন।
কিন্তু সুদ আবারও বাড়লে শিল্পের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। তাই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষে ওই পদক্ষেপ করা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয়ও রয়েছে তাঁদের।
টাকার দাম কমাটাকে আপৎকালীন অবস্থা হিসাবে মনে করছেন ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞ এবং ইউকো ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর বি কে দত্ত। তিনি বলেন, “সবার আগে প্রয়োজন টাকার দামের পতন রোধ করা। সুদের হার বাড়ালে এটা সম্ভব হতে পারে। এটা ঠিক, সে ক্ষেত্রে শিল্পে ঋণের খরচ আরও বাড়বে। তবে শিল্পের সমস্যা কমাতে এক দিকে রফতানি ক্ষেত্রে বাড়তি উৎসাহ দেওয়া যেতে পারে। অন্য দিকে দেশের শিল্প সংস্থাকে সুবিধা দিতে উৎপাদন শুল্ক কমানো-সহ আরও কিছু প্যাকেজের কথাও কেন্দ্রীয় সরকারের ভেবে দেখা উচিত।”
তবে সুদের হার বাড়ানোকে দাওয়াই হিসেবে মেনে নিলেও ভিসি কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিজয় চন্দকও বলেন, “শিল্পোৎপাদন কমে যাওয়ার বিরূপ প্রভাব সরাসরি পড়বে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপির উপর। তাই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষে ওই পদক্ষেপ করা আর সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।” আমদানিতে লাগাম পরানো নিয়ে তিনি বলেন, “তেল আমদানি কমানো সম্ভব নয়। কিন্তু সোনা আমদানি কমিয়ে ডলারের খরচ কমানো যেতে পারে। আমাদের দেশে প্রায় ৮০০ টনের মতো সোনা প্রতি বছর আমদানি করা হয়। কালোবাজারে পড়ে থাকা বিদেশি মুদ্রা উদ্ধারের জন্য স্বেচ্ছা ঘোষণা বা ‘ভলান্টারি ডিসক্লোজার স্কিম’ ফের চালু করার কথাও ভেবে দেখতে পারে সরকার।” ডলারে বন্ড ছেড়েও বৈদেশিক মুদ্রার জোগান বাড়ানো সম্ভব।
তবে টাকার দাম পড়ার সমস্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। কারণ হিসাবে তাঁরা মনে করেন, ইউরো-সহ সমস্ত মুদ্রার তুলনাতেই ডলারের দাম বাড়ছে। তার প্রভাব ভারতে পড়বে। এ ছাড়া ইউরোপে আর্থিক সমস্যা ক্রমেই জটিল হচ্ছে। ফলে আমেরিকার মতো ইউরোপের রেটিংও কমিয়ে দিতে পারে বিভিন্ন মূল্যায়ন সংস্থা। যার নিট ফল, ওই সব দেশে ভারতের রফতানি হ্রাস। যা কিনা আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে ঘাটতি আরও বাড়িয়ে দেবে।
এই পরিস্থিতিতে ১৬ ডিসেম্বর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ঋণনীতির পর্যালোচনায় বসছে। তারা কী ব্যবস্থা নেয়, সে দিকেই এখন সকলের নজর। ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞ এবং ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, “আর সময় নষ্ট না করে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এ বার কিছু সাহসী পদক্ষেপ করা জরুরি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.