ঢাল নেই, তরোয়াল নেই, নিধিরাম সর্দার! দুর্গাপুরে দমকলের অবস্থা অনেকটা এমনই।
পঞ্চাশের দশকে দুর্গাপুরের লেবারহাটে দমকলের দফতর তৈরি করা হয়। যোগাযোগের সুবিধার জন্য ১৯৮৩ সালে তা শহরের সিটি সেন্টারে একটি নতুন বাড়িতে তুলে আনা হয়। বর্তমানে এই দফতরে মোট ৫টি ইঞ্জিন রয়েছে। একটি ১২ হাজার, একটি ন’হাজার, দু’টি সাড়ে তিন হাজার এবং একটি এক হাজার লিটার জলধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন। দমকলের নিয়ম অনুযায়ী একটি ইঞ্জিন রয়েছে এমন দফতরে কর্মী-আধিকারিক মিলিয়ে প্রায় ৬০ জন থাকা উচিত। কিন্তু ৫টি ইঞ্জিন থাকা দুর্গাপুর দফতরে রয়েছেন মাত্র ১২০ জন কর্মী।
সব থেকে আধুনিক ইঞ্জিনটি ২০১০ সালের ২৫ মার্চ বুদবুদ সেনা ছাউনিতে বিস্ফোরণের আগুন নেভাতে যাওয়ার পথে লরির সঙ্গে মুখোমুখি সর্ংঘষে পড়ে। ক্রেনের সাহায্যে সেটিকে ফিরিয়ে আনা হয় দুর্গাপুরে। তার পর থেকে সেটি আর চালু হয়নি। অথচ ওই ইঞ্জিনে আগুন নেভানোর সব ধরনের আধুনিক ব্যবস্থা ছিল। দ্রুতগামী ওই ইঞ্জিনে জলের ট্যাঙ্ক এবং ফোমের ট্যাঙ্ক, দুই-ই ছিল। তিন তলা উঁচু বাড়িতে পৌঁছনোর মতো মই ছিল।
দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, তার বদলে একটি ইঞ্জিন মিলেছে। তবে তাতে ওই সমস্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। দমকলের কয়েক জন কর্মীই জানান, দুর্গাপুর মহকুমার পরিধি গত কয়েক বছরে যে ভাবে বেড়েছে, তাতে আরও কিছু নতুন ইঞ্জিন প্রয়োজন।
দুর্গাপুর শহরে বহুতলের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স, বড় হোটেল, উঁচু বাণিজ্যিক ভবন ইত্যাদি বেশ কিছু বড় নির্মাণ হয়েছে গত কয়েক বছরে। কিন্তু উঁচু ভবনের আগুন নেভাতে গেলে যা থাকা সব থেকে জরুরি, সেই মই-ই নেই দমকলের কাছে। দমকল সূত্রেই জানা যায়, আগুন নেভানোর জন্য মূলত দু’রকম উচ্চতার মই পাওয়া যায়, ৩০ মিটার ও ৭০ মিটার উচ্চতার। দুর্গাপুরের দমকল কর্মীদের মতে, শহরে যে সব বড় ভবন বা বহুতল রয়েছে, সেগুলিতে আগুন নেভানোর জন্য ৩০ মিটারের মই যথেষ্ট। কিন্তু রাখার জায়গার অভাবে তা-ও নেই।
দমকলের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, বহুতলের থেকেও তাঁরা বেশি চিন্তিত শহরের পুরনো বাজার ও বসতি এলাকা নিয়ে। আধিকারিকদের মতে, শহরের অনেক আবাসনেই পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা রয়েছে। তা ছাড়া, ইদানীং গড়ে ওঠা হোটেল, বহুতল, শপিং মলগুলিতে ‘স্প্রিংলার’ লাগানো রয়েছে। ভবনের সব তলে জলভর্তি পাইপলাইন রয়েছে। বাড়ির নীচে রয়েছে লক্ষাধিক লিটারের জলাধার। বাড়ির কোনও অংশে গড় তাপমাত্রা ৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে চলে গেলেই সেখানে পাইপলাইন ফেটে দ্রুত বেগে জল বেরিয়ে আসবে। নিভে যাবে আগুন। এ ছাড়াও ওই সমস্ত ভবনে স্মোক, ফ্লেম ও হিট ডিটেক্টর লাগানো আছে। দমকল ছাড়পত্র দেওয়ার পরেই পুরসভা এই বাড়িগুলি গড়ার অনুমোদন দিয়েছে।
কিন্তু স্টেশন বাজার, বেনাচিতি বা মামড়ার মতো ঘিঞ্জি বাজার এলাকায় আগুন লাগলে কী ভাবে দমকলের গাড়ি ঢুকবে কারও জানা নেই। বাজার সংলগ্ন বসতি এলাকাও রয়েছে। সেখানে দোতলা ও তিন তলা বাড়ি রয়েছে বেশ কিছু। দমকলের গাড়ি কোনও ভাবে সেখানে পৌঁছলেও উঁচুতে আগুন লাগলে তা কী ভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে, তা নিয়ে সংশয়ে দমকল কর্মীরাই। দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “আমাদের একটি মাত্র ইঞ্জিন রয়েছে, যার জল পৌঁছতে পারে সর্বোচ্চ চার তলা পর্যন্ত। কোনও কারণে সেই ইঞ্জিনটি বিকল হয়ে পড়লে আর কিছু করার থাকবে না।” তাঁর দাবি, অবিলম্বে দুর্গাপুরে একাধিক আধুনিক ইঞ্জিন দেওয়া দরকার।
দুর্গাপুর দমকলের ওসি নিতাই চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শুধু ইঞ্জিন বাড়ালেই হবে না। সেই সঙ্গে কর্মীও বাড়াতে হবে। সঙ্গে ৩০ ফুট লম্বা মই-ও দরকার।” তিনি জানান, এই সব সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছেন তাঁরা। |