দলে মতানৈক্যের জেরে গত বিধানসভা নির্বাচনের কংগ্রেস ছেড়ে আরএসপিতে যোগ দিলেও জৈনুদ্দিন আহমেদের এলাকায় জনপ্রিয়তা অটুট ছিল। এলাকায় কংগ্রেসে ভাঙনও ধরেছিল। সম্প্রতি বিরোধীপক্ষ তাঁকে সরানোর জন্য ছক কষছে বলে দলের সভায় বিধায়কের কাছে আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি। তার পরেই মালদহের চাঁচলের মানিকনগরের প্রাক্তন উপপ্রধান তথা আরএসপি নেতা জৈনুদ্দিন আহমেদের খুনে কংগ্রেসের একাংশের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কংগ্রেসই পরিকল্পনা করে তাঁদের নেতাকে খুন করেছে বলে অভিযোগ আরএসপি-র। অন্য দিকে, আরএসপি’র অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে কংগ্রেস। রবিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ এলাকার একটি চায়ের দোকানে বচসার সময়ে প্রতিবেশী সিদ্দিক শেখ ও তার ছেলে বিশু ভাকরি গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই প্রাক্তন উপপ্রধানকে ছুরি মারে বলে অভিযোগ। চাঁচল হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে ওই আরএসপি নেতার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর রাতে ও এ দিন সকালে উত্তেজিত বাসিন্দারা অভিযুক্তের বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালায়। |
শোকার্ত পরিবার। ছবি: বাপি মজুমদার। |
সমস্ত আসবাবপত্র ভেঙে দেওয়া হয়। খুনের ঘটনায় জড়িত আরও ৩ জনের খোঁজ করছে পুলিশ। মালতিপুরের আরএসপি বিধায়ক আবদুর রহিম বক্সির অভিযোগ, কংগ্রেসের মদতে ধৃতেরা তাঁদের দলের নেতাকে খুন করে। চাঁচল-২ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি হবিবুর রহমান বলেন, “বামেরা ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে। ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরেই ওই ঘটনা বলে মনে হচ্ছে।” চাঁচলের আইসি সাগর সাহা বলেন, “মূল অভিযুক্ত এলাকার পরিচিত দুষ্কৃতী বলে উল্লেখ করেন মৃতের স্ত্রী। খুনের পেছনে রাজনীতি রয়েছে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। পাশাপাশি কী কারণে ওই খুন তাও স্পষ্ট নয়। দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।” সামান্য জমি থাকলেও রাজনীতিই ছিল তাঁর মূল পেশা। দুই স্ত্রী, ৫ মেয়ে, ২ ছেলে। সোমবারও এলাকার পরিবেশ ছিল থমথমে। মহরমের এক দিন আগে এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে। ১৯৯৮ সালে চাঁচল-২ ব্লকের ভাকরি পঞ্চায়েতের কংগ্রেসি উপপ্রধান ছিলেন জৈনুদ্দিন আহমেদ। দলমত নির্বিশেষে প্রত্যেককে সাহায্য করতেন। উপপ্রধান থাকার সময় পেশায় শ্রমিক অভিযুক্ত সিদ্দিক শেখকে ইন্দিরা আবাস যোজনায় ঘর দেওয়ার ব্যবস্থাও করেছিলেন। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় সিদ্দিক ও তার স্ত্রীর চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেছিলেন। রাত সাড়ে ৮টায় পাড়ার চায়ের দোকানে বসেছিলেন জৈনুদ্দিন। মদ্যপ অবস্থায় সিদ্দিক ওই নেতাকে ‘দালাল’ বলে গালাগালি শুরু করেন বলে অভিযোগ। প্রতিবাদ করতে গিয়েই খুন হন ওই আরএসপি নেতা। আরএসপি বিধায়ক বলেন, “গত শুক্রবারই তাঁকে খুন করা হতে পারে বলে আশঙ্কার কথা বলেছিলেন ওই নেতা। গুরুত্ব দিইনি। ঠান্ডা মাথায় ওঁকে কংগ্রেসিরা খুন করেছে। মূল অভিযুক্ত ধরা পড়লেও আড়ালে যে পান্ডারা, তাদের খুঁজে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হবে।” একই দাবি জানান সিপিএমের চাঁচল জোনাল কমিটির সদস্য আজিজুর রহমানও। |