কলকাতা শহরতলির বিদ্যাসাগর ও বাঘা যতীন হাসপাতাল ‘প্রত্যন্ত’ এলাকায়। অথচ সুন্দরবনের সন্দেশখালি বা হিঙ্গলগঞ্জ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র নয়! আবার মালদহ ও বহরমপুর জেলা হাসপাতাল ‘দুর্গম এলাকা’র তালিকায় ঢুকলেও করিমপুর বা তেহট্ট হাসপাতাল তার বাইরে!
কোনও বেসরকারি সংস্থার তথ্য নয়। খোদ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নথিতেই রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালকে এ ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যা দেখে চোখ কপালে উঠছে অনেকেরই।
দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসকদের কাজে উৎসাহদানের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য দফতর ওখানে কর্মরত ডাক্তারদের স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় অতিরিক্ত (প্রতি বছরের জন্য ১০%) নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপরন্তু স্থির হয়েছে, ওই সব তল্লাটের হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের জন্য ডিপ্লোমা কোর্সে ৫০% আসন সংরক্ষিত থাকবে।
আর কোন কোন হাসপাতালের ডাক্তারেরা ওই সুযোগ পাবেন, তা নির্দিষ্ট করে স্বাস্থ্য দফতর যে তালিকা বানিয়েছে, তাতেই সৃষ্টি হয়েছে বিস্তর বিভ্রান্তি, সঙ্গে ক্ষোভও। কারণ, সেই তালিকা অনুযায়ী শহরাঞ্চলের বিভিন্ন হাসপাতাল, এমনকী মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারেরাও ‘প্রত্যন্ত’ তালিকায় ঢুকে বাড়তি নম্বরের সুযোগ পাচ্ছেন। অথচ সত্যিই ভৌগলিক ভাবে প্রত্যন্ত ও দুর্গম বহু জায়গায় কর্মরত চিকিৎসকদের তা জুটছে না!
এই ‘অনিয়মের’ প্রতিবাদ জানিয়ে ডান-বাম নির্বিশেষে সরকারি চিকিৎসকেরা এ বার চিঠি লিখেছেন স্বাস্থ্য-সচিবকে। এমন ভুল কী করে হল? সরকারি-সূত্রের ব্যাখ্যা: স্বাস্থ্য দফতরের তরফে রাজ্যের ‘দুর্গম ও প্রত্যন্ত’ এলাকা চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু হয়েছিল বিগত বামফ্রন্ট আমলে। মাপকাঠি ছিল অনেক রকম। যেমন, জেলা সদর থেকে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের দূরত্ব, যেতে কত সময় লাগে, কী ধরনের যানবাহন পাওয়া যায়, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার আগেই সরকার বদল হয়ে যায়। আর নতুন সরকার এসে প্রত্যন্ত এলাকা চিহ্নিতকরণ সম্পূর্ণ না-করেই তড়িঘড়ি নির্দেশিকা জারি করে দেওয়ায় এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে বলে দফতর-সূত্রের দাবি। নির্দেশিকায় নদিয়া, বর্ধমান, উত্তর চব্বিশ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি জেলাকে ‘দুর্গম’ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ-সহ সুন্দরবনের অনেক ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কিংবা করিমপুর-তেহট্টের মতো প্রকৃত অর্থে প্রত্যন্ত জায়গা বাদ পড়েছে। স্বাস্থ্যকর্তারাও মানছেন, নির্দেশিকা জারির আগে ঠিকঠাক ‘হোমওয়ার্ক’ না-করাতেই এই বিপত্তি। রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “ভুলটা কোথায়, ধরা গিয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা শুধরে নেওয়া হবে।”
বস্তুত ত্রুটিগুলো দ্রুত শুধরে না-নিলে সরকারেরই বড় সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা। কারণ, সে ক্ষেত্রে ওই ছ’জেলায় সরকারি ডাক্তারেরা ভবিষ্যতে আর কাজ করতে যাবেন না বলে চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন ইতিমধ্যে জানিয়ে রেখেছে। |