মাওবাদী বন্ধ উপেক্ষা করে জনতা ফের সামিল হল ‘শান্তি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে’ আয়োজিত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে। যা থেকে স্পষ্ট জঙ্গলমহলে মাওবাদী-আতঙ্ক
ক্রমশ কাটছে।
মাওবাদীরা রবি ও সোমবার ভারত বন্ধ ডেকেছিল। তার মধ্যেই রবিবার পুরুলিয়ার ‘মাওবাদী ডেরা’ বলরামপুরে হাজার ছয়েক মানুষকে নিয়ে পদযাত্রা করেছিলেন যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। সোমবার তিনি জামবনির ভাতুড়ে ফের ভিড়ে ঠাসা সমাবেশে ‘অস্ত্র ছাড়ো, না হয় জঙ্গল ছাড়ো’ বলে মাওবাদীদের হুঁশিয়ারি দেন। সমাবেশে উপস্থিত তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায় এ দিনের জমায়েত দেখে বলেন, “মাওবাদীরা বন্ধ ডেকেছে। তার মধ্যেও মহিলাদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি, মানুষের এই জমায়েত অভূতপূর্ব। আমাদের মাইন দেখিয়ে লাভ নেই। আমাদের ছেলেরা মাইন গিলে খেতে পারে।” |
জামবনিরই চনসরো গ্রামে গত ১০ মার্চ যৌথ বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছিলেন মাওবাদী নেতা শশধর মহাতো। আর গত ২৪ নভেম্বর জামবনিরই বুড়িশোলে নিহত হয়েছেন কিষেণজি। তাঁকে ‘ভুয়ো সংঘর্ষে হত্যা’ করা হয়েছেএই অভিযোগেই মাওবাদীরা ৪৮ ঘণ্টার ভারত বন্ধ ডেকেছিল। কিন্তু সেই দু’দিনই জঙ্গলমহল মোটের উপর স্বাভাবিক থেকে ওই বন্ধ উপেক্ষা করেছে। উপরন্তু, মাওবাদীদের বিরুদ্ধে একের পর এক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জনতার ঢল বুঝিয়ে দিয়েছে, পরিস্থিতি দ্রুত বদলাচ্ছে। যে প্রবণতাকে ‘জঙ্গলমহলে নতুন জনজাগরণ’ হিসাবে এ দিনের সমাবেশে
ঘোষণাও করেছেন শুভেন্দু। জনতার সেই ঢল দেখিয়েই শুভেন্দুর দাবি, “মাওবাদীদের দিন শেষ হয়ে গিয়েছে। বন্দুক ছাড়ো, নয়তো এলাকা
ছেড়ে পালাও।”
মাওবাদীদের ‘কাপুরুষ’ বলার পাশাপাশি কিষেণজিকে সরাসরি ‘ভয়ানক সন্ত্রাসবাদী’ বলেও এ দিন কটাক্ষ করেছেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, “কে এই কোটেশ্বর রাও বা কিষেণজি? অন্ধ্রপ্রদেশের করিমনগরের কোটেশ্বর অস্ত্র নিয়ে জামবনির বুড়িশোলে কেন এসেছিলেন? এসেছিলেন আরও অনেককে খুন করতে, আরও অনেক সন্ত্রাসের ছক কষতে। পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সেই অপচেষ্টা রুখে দিয়েছে।” আগের সরকারের ‘ভুল নীতি’র ফলেই মাওবাদী সমস্যা বেড়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু। জনতার প্রতি তাঁর আহ্বান, “অস্ত্রধারীদের ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিন। যারা এলাকায় এসে খুন, সন্ত্রাস ও মাইন ফাটানোর ছক কষছে, তাদের খোঁজ পেলেই পুলিশকে অথবা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে জানান।”
অন্য দিকে, কিষেণজিকে হত্যার প্রতিবাদে এ দিন মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে অনশন করেন সুদীপ চোংদার, কল্পনা মাইতি, রাজা সরখেল, প্রশান্ত পাত্র ও ছত্রধর মাহাতোর মতো ৫ বন্দি। একটি মামলায় ঝাড়গ্রাম আদালতে হাজিরা দিতে আসার সময়েও ছত্রধরের গলায় ঝুলতে দেখা যায় ‘ভুয়ো সংঘর্ষে কিষেণজিকে হত্যা করা হয়েছে’ অভিযোগ এবং ‘কর্মরত বিচারপতিকে দিয়ে তদন্তের দাবি’ সম্বলিত প্ল্যাকার্ড। |