সম্পাদকীয় ১...
কর্কট-ক্রান্তি
শ্চিমবঙ্গের মানচিত্র হইতে মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট দলটি দ্রুত মিলাইয়া যাইতেছে। কিন্তু, তাহারা যে ঘুণপোকার চাষ করিয়াছিলেন, তাহার প্রবল পরাক্রম হইতে এই রাজ্যের এখনও নিস্তার নাই। সর্বগ্রাসী রাজনীতির ঘুণপোকা। সি পি আই এম পশ্চিমবঙ্গ নামক ভাগ্যের হাতে পরাভূত রাজটির সর্বস্তরে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করিয়াছিল। সেই চেষ্টার সাফল্য প্রশ্নাতীত। এই রাজ্যের কোনও প্রাথমিক স্কুলের গভর্নিং বডির নির্বাচনও রাজনীতির রঙ ব্যতীত অসম্ভব। ভাইয়ে-ভাইয়ে কাজিয়া বাঁধিলে নেতারা ফয়সলা করিয়া দেন, স্বামী-স্ত্রীর বিবাদেও পার্টিই মধ্যস্থ। এই ‘অ-লাভজনক’ ক্ষেত্রগুলিও যখন রাজনীতি সাগ্রহে দখল করিয়াছে, তখন বালি-সিমেন্ট জোগান দেওয়ার অতি লাভজনক এবং জায়মান ক্ষেত্রটি যে লোভনীয় হইবে, তাহাতে সন্দেহ কী? যত দিন সি পি আই এম এই রাজ্যে (স্বমহিমায়) ছিল, তত দিন এই লাভের অধিকাংশ গুড় আলিমুদ্দিনের স্নেহধন্যদের দিকে ধাবিত হইয়াছিল। সি পি আই এম এখন অতীত, যাবৎ ‘সিন্ডিকেট’-এর সাইনবোর্ডে ঘাসফুল ফুটিয়াছে। কিন্তু, সি পি আই এম যে রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম দিয়াছিল, তাহার বিনাশ নাই। পশ্চিমবঙ্গবাসীমাত্রেই অভিজ্ঞতায় জানেন, এই ‘সিন্ডিকেট’ রাজারহাট-নিউটাউনের একান্ত নহে কর্কট রোগের ন্যায় তাহা রাজ্যের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়াইয়া পড়িয়াছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলিয়াছেন, তিনি তাঁহার দলের সহিত সিন্ডিকেটের যোগ ভাঙিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সাধু। কিন্তু তাঁহাকে সর্বাগ্রে বুঝিতে হইবে, এই রোগ কেবলমাত্র উপরিভাগের নহে কর্কট রোগের শিকড় অনেক গভীরে পৌঁছায়। তাঁহাকে রোগের মূলোচ্ছেদ করিতে হইবে। তাঁহার দল, সেই দলের নেতা-কর্মীরা এই সমাজেরই অংশ। তাঁহারা মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টির তৈরি করা আধিপত্যের সংস্কৃতিতে লালিত। অতএব, তাঁহাদের প্রকৃত রোগমুক্ত করিতে হইলে দলীয় আধিপত্যের ভূতটি ঝাড়াইতে হইবে। কাজটি কঠিন, নিঃসন্দেহে। মুখ্যমন্ত্রী যতই দাবি করুন যে তাঁহার দলের ৯৯.৯৯ শতাংশ কর্মীই ভাল বাস্তব তাঁহার পাটিগণিত মানিতে নারাজ। বহু লোক রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ হয় শুধুমাত্র দলের আধিপত্যের ভাগ পাইবার আশায়। দলীয় পরিচয় তাহাদের যথেচ্ছাচারের ছাড়পত্র। তাহারা কাহারা, এই প্রশ্নের উত্তরে ঠগ বাছিতে গাঁ উজাড় হওয়ার বহুব্যবহৃত প্রবচনটি স্মরণীয়। তাহারা দলও ছাড়িবে না, সিন্ডিকেটও না। কাজেই, দলে থাকিতে হইলে সিন্ডিকেট ছাড়িতে হইবে এই ফতোয়া, তাহার যাবতীয় সদিচ্ছা সত্ত্বেও অসার হওয়ারই সম্ভাবনা। মুখ্যমন্ত্রী যদি সত্যই ‘সিন্ডিকেট’ ও রাজনীতির অশুভ যোগাযোগ ভাঙিতে চাহেন, তাহার একটিই দাওয়াই প্রশাসনকে রাজনৈতিক রঙ-নিরপেক্ষ হইতে হইবে। যে আইন ভাঙিবে, যে জুলুম করিবে, পুলিশ তাহার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা করিবে দুর্ভাগা পশ্চিমবঙ্গে যদি কখনও এই নিয়ম প্রতিষ্ঠিত হয়, তবেই এই অশুভ চক্র ভাঙিতে পারে।
মুখ্যমন্ত্রীর শুভার্থীরা প্রশ্ন করিতে পারেন এই ব্যাধিটি যখন সামাজিক, তখন তাহার উপশমের দায়টি মুখ্যমন্ত্রীর স্কন্ধে আরোপ করা কেন? সমাজ মন্থনের ফলে এই বিষ উঠিয়াছে। অমৃতভাণ্ডের জন্য ফের সমাজমন্থনই কি পন্থা নহে? প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু এই যুক্তি শুনিলে খুশি হইতেন। কারণ, তিনি ‘নেতা’ ছিলেন না, ‘অনুসরণকারী’ ছিলেন। নেতার কাজ সমাজকে পথ দেখাইয়া লইয়া চলা। সমাজের যেখানে ভুল, তাহা সংশোধন করা, মানুষকে শুধরাইতে বাধ্য করা। বীরসিংহ গ্রামের ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ‘নেতা’ ছিলেন। জ্যোতি বসু তাঁহার দীর্ঘ শাসনকালে কখনও সমাজের পিছু ছাড়েন নাই। সমাজ যে পথে হাঁটিয়াছে, তাহা যতই ভ্রান্ত হউক তিনি অনুসরণ করিয়াছিলেন। সমাজের অগ্রবর্তী হওয়ার বাসনা তাঁহার ছিল না, সাহসের প্রশ্নটি এখন উহ্য থাকুক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি দ্বিতীয় জ্যোতি বসু হইতে চাহেন? যে কোনও সরকারের প্রথম এক বৎসর নাকি ‘মধুচন্দ্রিমা-পর্ব’। শ্রীবন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ইতিমধ্যেই তাহার ৬০.৮২ শতাংশ সময় পার করিয়া ফেলিয়াছে। এই বার প্রতিশ্রুতিকে কাজে রূপায়িত করিবার সময় আসিতেছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রস্তুত?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.