নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
পুলিশ পক্ষপাতিত্ব করছে, এই অভিযোগে সরব হয়েছেন শিলিগুড়ির প্রতারণা মামলায় অভিযুক্ত জীবন বিমা নিগমের কর্মী রাজীব ভদ্র। সম্প্রতি তিনি ওই মামলা জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। রবিবার শিলিগুড়ি জার্নালিস্ট ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে রাজীববাবু দাবি করেন, প্রতারণা মামলার মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার দাবিতে তিনি এবং শিলিগুড়ি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক নন্দদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় একসঙ্গে বেশ কয়েকবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দফতরে গিয়েছিলেন। গ্রেফতার হওয়ার কয়েকদিন আগেও তিনি ও নন্দদুলালবাবু মিলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করেন বলেও রাজীববাবুর দাবি। পরে পুলিশ এই মামলায় প্রতারণার অভিযোগে রাজীববাবুকে গ্রেফতার করে। নন্দদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন গ্রেফতার করা হল না, এই প্রশ্নেই পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন রাজীববাবু ও তাঁর আইনজীবী সুনীল সরকার।
জীবন বিমা নিগমের ওই কর্মী বলেন, “আমার মতো ওই সংস্থার এজেন্ট ছিলেন নন্দবাবুও। ব্যবসার শুরু সময়ে আমরা দু’জনেই মুম্বইয়ে গিয়েছিলাম সংস্থাটি সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে। আমাকে গ্রেফতার করা হল। তাহলে অন্যরা কেন ছাড় পাবে? পুলিশের এই আচরণ পক্ষপাতিত্ব ছাড়া আর কিছু মনে হচ্ছে না।” পাশাপাশি নন্দবাবুর বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকিও দিয়েছেন রাজীববাবু।
রাজীববাবুর তোলা অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন নন্দদুলালবাবু। তিনি বলেন, “আমি প্রথম থেকেই এই মামলায় প্রতারিতদের হয়ে লড়াই করছি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে অনেকেই নিয়ে গিয়েছি। রাজীবও ছিলেন। তবে রাজীব এই সংস্থায় রাজীব আমার চেয়ে অনেক উঁচু পদে ছিলেন। আমি একবার সংস্থাটি সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে মুম্বইয়ে গিয়েছি। ওই সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে রাজীবই যোগাযোগ রাখতেন। আর আমার বিরুদ্ধে কেউ মামলা করতেই পারেন। আদালতে তার জবাব দেব।”
পক্ষপাতিত্বের প্রশ্নে শিলিগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, “এই ধরনের অভিযোগের ভিত্তি নেই। প্রত্যেক অভিযুক্তের বিরুদ্ধেই আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
২০১০ সালে মুম্বইয়ের ওই সংস্থাটি কয়েক মাসে টাকা দ্বিগুণ করে দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে শিলিগুড়িতে ব্যবসা শুরু করে। শিলিগুড়িতে কয়েকজনকে এজেন্ট হিসাবে নিয়োগ করে সংস্থাটি। প্রথম দিকে কিছু লোককে টাকা ফেরত দিলেও তার পরে কয়েক কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে নিয়ে সংস্থাটি পাততাড়ি গোটায় বলে অভিযোগ। বিপাকে পড়েন বহু লগ্নিকারী। এর পরেই সংস্থাটির বিরুদ্ধে চলতি বছরের জুন মাসে মামলা দায়ের হয়। ২১ অক্টোবর মুম্বই থেকে পুলিশ সংস্থার অন্যতম ম্যানেজিং ডিরেক্টর রামশা জীবন সাহেবরাম চৌধুরীকে গ্রেফতার করার পরে একে একে রাজীববাবু ছাড়াও বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী রণবীর দাস, দেবব্রত পালকে গ্রেফতার করে। আরও ৯টি নতুন মামলা দায়ের হয়। বেশ কয়েকটি গাড়ি, জমির দলিল আটক করে পুলিশ। ব্যাঙ্কে লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেনের প্রমাণ মেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। গত ১ ডিসেম্বর জামিনে মুক্তি পান রাজীব। তার আগেই অবশ্য মুক্তি পান অন্যান্য ধৃতেরা।
রাজীববাবুর আইনজীবী সুনীল সরকার অভিযোগ করেন, “পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের সবচেয়ে বড় প্রমাণ, একটি মামলায় রাজীব জামিন পেলেই নতুন একটি মামলায় রাজীবকে গ্রেফতার করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টের বেশ কয়েকটি রায়ে এমন গ্রেফতার বেআইনি বলে প্রমাণিত হয়েছে। আদালতে এই ব্যাপারে তথ্যও পেশ করা হয়েছে।” |