|
|
|
|
দিল্লির সম্মতির অপেক্ষায় |
ঘাটতি মেটাতে ভুটানে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তে চায় রাজ্য |
অশোক সেনগুপ্ত ও পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
হরিপুরে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রস্তাব রাজ্য সরকার বাতিল করে দিয়েছে। কাটোয়ায় এনটিপিসি’র প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পও অনিশ্চিত। এমতাবস্থায় সঙ্কট মোকাবিলায় ভুটানের দ্বারস্থ হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতর ভুটানের আমুচু নদীর উপরে পাঁচশো মেগাওয়াটের একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তুলতে চাইছে, যাতে তার উৎপাদনের সাহায্যে পশ্চিমবঙ্গের ঘাটতি সামাল দেওয়া যায়।
প্রস্তাবিত চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য রাজ্য সরকার আপাতত কেন্দ্রের সবুজ সঙ্কেত চেয়েছে। উল্লেখ্য, নয়াদিল্লি যদি অনুমতি না-দেয়, তা হলে থিম্পু চাইলেও রাজ্য সরকার প্রকল্পটি করতে পারবে না। রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত বলেন, “ভুটানে একটা জলবিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা হয়েছে। এ ব্যাপারে ভুটান সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী সুশীল শিন্ডেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।”
বস্তুত পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা সামাল দেওয়ার মতো নতুন উৎপাদনকেন্দ্র সে ভাবে তৈরি হচ্ছে না। হরিপুরের প্রস্তাবিত হাজার মেগাওয়াটের পরমাণু-বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্ভাবনা ইতিমধ্যে বিলীন। কাটোয়ায় জমি-বিতর্কে এনটিপিসি-র তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভবিষ্যৎও বিশ বাঁও জলে। এই পরিস্থিতিতে ভুটানে প্রস্তাবিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি রাজ্যের বড় ভরসা। মণীশবাবুর কথায়, “তাপবিদ্যুতের চেয়ে জলবিদ্যুতের গুণগত মান অনেক ভাল। দূষণের আশঙ্কাও কম।”
কিন্তু কেন্দ্রের অনুমতি পেলেও রাজ্য সরকারের পক্ষে কি প্রকল্পটি গড়ে তোলা সম্ভব?
মণীশবাবুর দাবি, “জাতীয় জলবিদ্যুৎ নিগম (এনএইচপিসি) যদি ভুটানে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র গড়তে পারে, তবে রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরও পারবে। কারণ, রাজ্যের বিদ্যুৎ সংস্থাগুলোর এই জাতীয় কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে।” রাজ্যের বিদ্যুৎ-সচিব মলয় দে বলেন, কেন্দ্রের চূড়ান্ত অনুমতি পেলে প্রকল্পটির বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করা হবে।
পশ্চিমবঙ্গে গ্রীষ্মকালে দৈনিক গড়ে ৬২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দরকার হয়। রাজ্যের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন দিয়ে পুরো চাহিদা মেটানো যায় না, তাই পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে হয়। উপরন্তু সম্প্রতি কয়লার অভাবে হামেশাই বিভিন্ন ইউনিট বসে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ-চিত্রটি মোটেই উজ্জ্বল নয়। বিদ্যুৎ-সচিবের ধারণা, নয়াদিল্লি এ বার ভুটানে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির অনুমতি দিলেও তা থেকে বিদ্যুৎ পেতে অন্তত ৮-১০ বছর লাগবে। তত দিন পরিস্থিতি মোকাবিলার উপায় কী?
রাজ্যের বিদ্যুৎ-কর্তারা বিশেষ আশার কথা শোনাতে পারছেন না। বরং তাঁদের মতে, তত দিন চাহিদা ও উৎপাদনের ফারাক বাড়তেই থাকবে। এবং সেই ঘাটতি মেটাতে অন্য রাজ্য থেকে বিদ্যুৎ কেনা ছাড়া উপায় নেই। তাতে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির উপরে আর্থিক চাপ আরও বাড়বে বলেই কর্তাদের আশঙ্কা। পশ্চিমবঙ্গে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ছবিটা বর্তমানে ঠিক কী রকম?
দফতর সূত্রের খবর: রাজ্যে এখন দৈনিক ৯৫০ মেগাওয়াটের মতো জলবিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। যার ৯০০ মেগাওয়াটের উৎস পুরুলিয়া পাম্প স্টোরেজ প্রকল্প। বাকি ৫০ মেগাওয়াট আসে উত্তরবঙ্গের রাম্মাম থেকে। জলঢাকা, তিস্তা ক্যানাল-সহ রাজ্যে আর যে ক’টা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে, হয় জলের অভাব, কিংবা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলোর অধিকাংশে উৎপাদন আপাতত বন্ধ।
এই পরিস্থিতিতে জলবিদ্যুতের জোগান পেতে ভুটান এমনিতেই পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম ভরসা। পড়শি দেশটির তিনটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এ রাজ্য বর্তমানে প্রায় পৌনে পাঁচশো মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনছে। কিনচু থেকে ৩৫০, চুখা থেকে ৯০, এবং টানা প্রকল্প থেকে ৩৫ মেগাওয়াট। উল্লেখ্য, চুখা কেন্দ্রটি এনএইচপিসি-ই নির্মাণ করেছিল, ১৯৮৬-তে। ১৯৯১ সালে সেটি ভুটানকে হস্তান্তর করা হয়। এখন সেখানে দৈনিক ৩৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও বিহার-ঝাড়খণ্ড-ওড়িশা-সিকিমকে বিদ্যুৎ জোগায় চুখা। চুখার বিদ্যুৎ নেয় ডিভিসি-ও।
রাজ্যের এক বিদ্যুৎ-কর্তা জানিয়েছেন, ভুটানের মোট রাজস্ব-আয়ের ৭০% আসে জলবিদ্যুৎ রফতানি করে। আর ভুটানের বিদ্যুৎ রফতানির ৪০ শতাংশেরই ক্রেতা পশ্চিমবঙ্গ। এবং এরই প্রেক্ষিতে রাজ্যের বিদ্যুৎ-কর্তাদের আশা, দিল্লি অনুমতি দিলে পশ্চিমবঙ্গকে আমুচুতে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়তে দিতে থিম্পুর নীতিগত আপত্তি থাকবে না। |
|
|
|
|
|