|
|
|
|
গুলি থেকে খুচরো, মমতার ‘কৃতিত্বে’ নারাজ বিমানেরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বিরোধীরা দাবি তোলার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তিনি নিজেই মগরাহাটের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের কথা ঘোষণা করেছেন। আবার বিরোধীদের সুরেই আপত্তি জানিয়ে খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে অনুমোদন দেওয়ার কেন্দ্রীয় সরকারি সিদ্ধান্ত আপাতত ‘স্থগিত’ করাতে পেরেছেন। তৃণমূল শিবিরের মতে, দুই ক্ষেত্রেই বামেদের পালের হাওয়া কেড়ে নিতে পেরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বামেরা এ বার তাই দুই ক্ষেত্রেই মমতার ‘কৃতিত্ব’ খারিজ করতে আসরে নামল!
মগরাহাটে পুলিশের গুলিতে এক কিশোরী ও এক মহিলার মৃত্যুর ঘটনায় কোনও কর্মরত বিচারপতিকে দিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করাতে হবে বলে নতুন দাবি তুলেছে বামফ্রন্ট। মুখ্যমন্ত্রী মমতা শনিবারই ঘোষণা করেছিলেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি প্রবীর সামন্তের নেতৃত্বে মগরাহাট-কাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত হবে। কিন্তু রবিবার আলিমুদ্দিনে বামফ্রন্টের বৈঠকে মগরাহাটের ঘটনা নিয়ে আলোচনার পরে ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু দাবি করেছেন, “অবসরপ্রাপ্ত কোনও বিচারপতিকে দিয়ে এই ঘটনার তদন্ত করানো উচিত নয়। বিশেষত, যেখানে ঘটনার দায়িত্ব কার, সেটা নির্দিষ্ট করা যায়নি। এই জন্যই কর্মরত বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত করানো দরকার।” প্রসঙ্গত, বাম জমানায় দিনহাটায় যখন শেষ বার পুলিশের গুলি চলে এবং বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের ৫ জন কর্মী-সমর্থকের মৃত্যু হয়, সেই ঘটনায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের তৎকালীন সরকার কিন্তু অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নারায়ণচন্দ্র শীলকে দিয়েই বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। সেই শীল কমিশনের রিপোর্ট আবার পরবর্তী কালে মহাকরণ থেকে ‘উধাও’ হয়ে যায়!
বামেদের দাবির প্রেক্ষিতে তৃণমূলের আইনজীবী-সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন, “কেরল বিশ্ববিদ্যালয় বনাম কেরলের কলেজ অধ্যক্ষদের কাউন্সিলের একটি মামলায় ২০০৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, হাইকোর্টের কোনও কর্মরত বিচারপতি কোনও কমিশনের নেতৃত্ব দিতে পারবেন না।”
বিদ্যুতের হুকিং কাটতে গিয়ে মগরাহাটের ঘটনা ঘটার পরে বিরোধী পক্ষ হিসাবে বামফ্রন্ট অবশ্য বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিই তুলেছিল। কর্মরত কোনও বিচারপতিকে দায়িত্ব দেওয়ার ‘শর্ত’ তখন ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় এবং সরকারের কিছুই ‘গোপন করার নেই’ বলে জানিয়ে দেওয়ার পরে বামেদের সেই প্রতিবাদের ধার কমে গিয়েছে বলে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের ব্যাখ্যা। সেই জন্যই কিছুটা ‘মরিয়া’ হয়ে বিমানবাবুরা কর্মরত বিচারপতিকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলছেন, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক শিবিরের ওই অংশ। বিমানবাবু এ দিন আরও বলেছেন, “ঘটনার দায় এবং দায়িত্ব কার, সেটা বোঝা যাচ্ছে না! আমরা মনে করি, মুখ্যমন্ত্রী এবং পুলিশমন্ত্রীই দায়ী। তাঁকেই গুলিচালনার জবাবদিহি করতে হবে। কার দায়িত্ব, নির্দিষ্ট করে তা প্রকাশিত হওয়া উচিত।” ‘প্রশাসক’ মমতার পাশাপাশি ‘রাজনীতিক’ মমতার ‘কৃতিত্ব’ও মেনে নিতে চাইছে না বাম শিবির। খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আপাতত ‘স্থগিত’ থাকছে বলে যে ঘোষণা তৃণমূল নেত্রী মমতা করেছেন, সেই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বিমানবাবু এ দিন বলেন, “ওঁর কথার উপরে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। তবে দিল্লিতে থাকার সময়েই (পলিটব্যুরো বৈঠক উপলক্ষে) শুনে এসেছিলাম, কেন্দ্র যে চারটি সম্ভাব্য পথ নিয়ে নাড়াচাড়া করছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে আপাতত সিদ্ধান্ত ঠেকিয়ে রাখা। কিন্তু সংসদের অধিবেশন যখন চলছে, সংসদেই কেন্দ্রীয় সরকার তাদের অবস্থান ঘোষণা করুক।” বিমানবাবু ব্যাখ্যা দেন, বহুজাতিক এবং বিদেশি সংস্থার ‘আক্রমণ’ হলে গোটা দেশেই তার প্রভাব পড়বে। কিন্তু এ রাজ্যের অর্থনীতির কাঠামো আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। খুচরো ব্যবসায়ী, অজস্র হকার এবং ক্ষুদ্র উৎপাদক অর্থাৎ কৃষকেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সে ক্ষেত্রে রাজ্যের এই বিশাল সংখ্যক মানুষের স্বার্থ রক্ষার ‘কৃতিত্ব’ তৃণমূল নেত্রীর ঝুলিতেই যাওয়া উচিত কি না, সেই ব্যাপারে বিমানবাবু মন্তব্য করেননি। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, মমতাকে ‘কৃতিত্ব’ দিতে চান না বলেই বিমানবাবুরা সংসদে কেন্দ্রের ঘোষণার দিকে বিষয়টি ঘুরিয়ে দিতে চাইছেন। বাম জমানার মতো প্রচার, বিজ্ঞাপন এবং পঞ্চায়েতের সভা না-ডেকেই কেন মগরাহাটে হুকিং কাটতে গেল রাজ্য সরকার, তা নিয়ে এ দিন ফ্রন্টের বৈঠকে প্রশ্ন তোলেন শরিক নেতারা। পরে বিমানবাবু তথ্য দিয়ে অভিযোগ করেন, বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্তের নির্বাচনী কেন্দ্র যাদবপুরের ১১০ নম্বর ওয়ার্ডে দু’টি এবং ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডে একটি তৃণমূল কার্যালয়ে হুকিং করে বিদ্যুৎ নেওয়া হয়েছে। পিকনিক গার্ডেন এলাকায় ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে একটি তৃণমূল কার্যালয় এবং বাইপাস সংলগ্ন এলাকায় কলকাতা পুরসভার একটি ম্যালেরিয়া ক্লিনিকেও হুকিং করে টেলিভিশন পর্যন্ত চলছে। বিমানবাবুর প্রশ্ন, “বিদ্যুৎমন্ত্রী নিজের ঘরের কাছে নোংরা পরিষ্কার না-করে দূরবর্তী মগরাহাটে আগে গেলেন কেন?” |
|
|
|
|
|