স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়ার বিরুদ্ধে মারগাওতে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলতে নামার আগের দিন একেবারেই অপ্রত্যাশিত ভাবে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ল ট্রেভর জেমস মর্গ্যান-সহ ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররা।
দীর্ঘক্ষণ তর্কাতর্কি তো হলই, হাতাহাতি হওয়ারও উপক্রম হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তা না-হলেও প্রাক্তন ফেডারেশন সচিব আলবার্তো কোলাসো ও একদল মাঠ-কর্মীর হাতে অপমানিত হন ইস্টবেঙ্গল কোচ। তাঁকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করা হয়। প্রতিবাদে ম্যাচের উদ্যোক্তা স্পোর্টিং ক্লুব ও ফেডারেশনকে চিঠি দিচ্ছে ইস্টবেঙ্গল। ম্যানেজার স্বপন বল মারগাও থেকে ফোনে বললেন, “আমাদের কোচ অপমানিত হয়েছেন। গালাগালি করা হয়েছে। আমরা প্রতিবাদপত্র পাঠাচ্ছি ম্যাচের উদ্যোক্তা স্পোর্টিং ক্লুব ও ফেডারেশনকে।”
ঘটনার সূত্রপাত রবিবার সকালে মারগাও স্টেডিয়ামে ইস্টবেঙ্গলের অনুশীলনের সময়। অনুশীলনের জন্য টোলগে-মেহেতাবদের বরাদ্দ ছিল সকাল সাড়ে ন’টা থেকে পরের এক ঘণ্টা। অর্থাৎ সাড়ে দশটা পর্যন্ত। সেই মতো টিম নিয়ে প্রথমে মাঠের পাশে এবং পরে মাঠের ভিতর ফুটবলারদের নিয়ে প্র্যাক্টিস করাচ্ছিলেন ব্রিটিশ কোচ। সব ঠিকঠাকই চলছিল। ইস্টবেঙ্গলের অভিযোগ, দশটা কুড়ি নাগাদ হঠাৎই মাঠে ঢুকে ‘গেট আউট-গেট আউট’ বলে চিৎকার করতে থাকেন জনা তিনেক মাঠ-কর্মী। মর্গ্যান তাদের বলেন, “এখনও দশ মিনিট বাকি আছে। আমরা তো চলেই যাচ্ছি।”
এর পরই মর্গ্যানকে অশ্লীল শব্দে আক্রমণ করেন এক কর্মী। কোচকে অপমানিত হতে দেখে তেড়ে যান লাল-হলুদ ফুটবলাররাও। টোলগে, মেহতাব, সঞ্জু-সহ গোয়ায় যাওয়া ফুটবলারদের সঙ্গে তর্কাতর্কি লেগে যায় ওই কর্মীদের। একে অন্যের দিকে তেড়েও যান। হঠাৎ-ই মাঠে উপস্থিত প্রাক্তন ফেডারেশন সচিব কোলাসো এসে মর্গ্যানের সঙ্গে তর্কাতর্কি জুড়ে দেন। বলতে থাকেন, “কেন আপনারা আমাদের মাঠ-কর্মীদের বাজে কথা বলছেন। অপমান করছেন।” মর্গ্যানও পাল্টা অনেক কথা বলেন। তর্কাতর্কি করতে করতেই টিম বাসের দিকে পা বাড়ান কোচ-সহ ফুটবলাররা। ফোনে মেহতাব হোসেন বললেন, “আমরা তো চল্লিশ মিনিট অনুশীলন করেছি। যে ব্যবহার কোচ ও আমাদের সঙ্গে করা হয়েছে সেটা খুব খারাপ। গালাগালি করেছে। কলকাতায় এলে ওদের আমরা জামাইআদর করে রাখি। আর গোয়ায় খেললেই কোলাসোর মতো লোকজন আমাদের নানা ভাবে অসুবিধায় ফেলার চেষ্টা করে। মাঠ দেয় না। ঝামেলা করে। ম্যাচ তো করছে স্পোর্টিং ক্লুব। উনি আপত্তি তোলার কে?”
সকালে উত্তপ্ত এই অবস্থা তৈরি হলেও বিকেলের দিকে অবশ্য শান্ত লাল-হলুদের কোলভা সমুদ্র সৈকতের পাশের হোটেল। ডেম্পোর বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে আজ সোমবারের ক্লুবের সঙ্গে ম্যাচ প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ মর্গ্যান ব্রিগেডের কাছে। স্পোর্টিং ক্লুব যথেষ্ট শক্তিশালী দল। তাদের সুদানি স্ট্রাইকার জেমস মোগা গোলের মধ্যে রয়েছেন। লিগ টেবিলে ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে স্পোর্টিংয়ের পার্থক্য মাত্র এক পয়েন্টের। এই অবস্থায় স্পোর্টিং কোচ একেন্দ্র সিংহ প্রকাশ্যেই বলে দিয়েছেন, “আমাদের কাছে এটা বড় পরীক্ষা। ম্যাচে কিন্তু আমরাই ফেভারিট। কারণ, ঘরের মাঠে খেলা এবং ছেলেরা খুব ভাল ফর্মে আছে।”
ক্লুবের দুই ফুটবলার ফেইমেন ফেক্সাটো ও যোশেফ পেরিরা চোটের জন্য খেলতে পারছেন না। ইস্টবেঙ্গলেও মেহতাব হোসেন শুরুতে নামছেন না। নামবেন বদলি হিসাবে। চোটের জন্য নেই অ্যালান গাও-ও। একেন্দ্রর মতো মর্গ্যানও অবশ্য চোট পাওয়া ফুটবলারদের নিয়ে ভাবছেন না। এ দিন বিকেলে টোলগে-রবিনদের সঙ্গে নিয়ে ডেম্পো-চার্চিল ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন লাল-হলুদ কোচ। সেখান থেকে ফিরে যা ইঙ্গিত দিলেন তাতে প্রত্যাশিত টিমই নামাচ্ছেন তিনি। শুধু গোলে খেলবেন সন্দীপ নন্দী। স্ট্রাইকারে টোলগের সঙ্গে রবিন সিংহকে নামাচ্ছেন তিনি। মাঝমাঠে সঞ্জু, পেন, সুশান্ত ও ভাসুম। রক্ষণে নওবা, গুরবিন্দর, ওপারা এবং রবার্ট। মর্গ্যান সাংবাদিকদের বলেছেন, “ডেম্পো ম্যাচের আগে এই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট নিয়ে ফিরতে চাই। সেই লক্ষ্যেই নামছি।” |