|
|
|
|
কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশ উপেক্ষা |
মেদিনীপুরে অষ্টম বার জোনাল সম্পাদক কীর্তি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
রাজ্যে সিপিএমের ভরাডুবির পরেই কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তিন বারের বেশি কাউকে কোনও স্তরেই সম্পাদক রাখা যাবে না। সেই নির্দেশকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে ব্যতিক্রমের ঘটনা ঘটেই চলেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। আগে খড়্গপুরের বিভিন্ন লোকাল কমিটিতে এই ঘটনা ঘটেছে। এ বার মেদিনীপুর জোনাল কমিটির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটল। সপ্তম বারের পর অষ্টম বারও সিপিএমের মেদিনীপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক হলেন কীর্তি দে বক্সী!
প্রবীণদের সরিয়ে নবীনদের নেওয়ার উদাহরণও নেই নতুন জোনাল কমিটিতে। প্রবীণ সদস্য প্রদীপ বসু এ বারও রয়েছেন কমিটিতে। প্রশ্ন উঠতে পারে বলে জনপ্রিয় হিমাদ্রী দে-কে আমন্ত্রিত সদস্য করা হয়েছে। নতুন এক জনকেও কমিটিতে নেওয়া হয়নি। আগে ২৩ জনের কমিটি ছিল। এ বার কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশ অনুযায়ী ১৭ জনের কমিটি করতে হবে। প্রফুল্ল শাসমল, বাসুদেব দাশগুপ্ত ও সমীরণ পালএই তিন সদস্যের মৃত্যু হয়েছে আগেই। বয়সের কারণে ও দুর্নীতির অভিযোগে তিন জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জেলা কমিটির সদস্য তথা মহিলা সমিতির জেলা সভাপতি শিবানী আহমেদ, অতনু মাইতি ও শ্যাম রানা।
এ বারের জোনাল কমিটিতে মূলত, জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীই প্রাধান্য পেয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। দীপক সরকার অনুগামীরা নিজেদের গোষ্ঠীর সদস্যদের ঢোকানোর জন্য শ্রমিক ভবনে আয়োজিত এই সম্মেলন থেকে বেরিয়ে এসে বাইরে কয়েকবার বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু দীপক সরকারের কোনও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। এমনকী তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর বলে পরিচিত কীর্তি দে বক্সীর নাম সম্পাদক পদে প্রস্তাবিত হওয়ার পরেও দীপক সরকার কোনও মন্তব্য করেননি। কীর্তিবাবুকে সম্পাদক করার ক্ষেত্রে আরও একটি নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত ছিল, এ বার সম্পাদক নির্বাচিত করতে হবে পার্টির সর্বক্ষণের কর্মীদেরই। কিন্তু কীর্তিবাবু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দীপকবাবু তাই কীর্তিবাবুকে সর্বক্ষণের কর্মী হওয়ার আহ্বান জানান শুধু। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীপকবাবু নিজে জেলা সম্পাদক পদে সপ্তম বার রয়েছেন। নৈতিক কারণেই তাই কীর্তি দে বক্সীর সম্পাদক পদে নির্বাচনে আপত্তি জানাননি তিনি।
অন্য দিকে, এ বার সম্মেলনের খসড়া প্রতিবেদনে আগাগোড়াই আত্মসমালোচনার সুর সিপিএমের। জোনাল কমিটির খসড়া প্রতিবেদনে লোকাল কমিটির সম্মেলনের অভিজ্ঞতার কথা তুলতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘সম্মেলনে কমরেডরা মূলত যে বিষয়ে আলোচনা করেন তা হল, বামফ্রন্ট সরকারের পতনের জন্য নেতা নেত্রীদের অহমিকা ও ভূমিকা অনেকাংশে দায়ী। মানুষের মধ্যে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি নেই, অনৈতিক কাজে যুক্ত এমন অনেকে নেতৃত্ব পদে আছেন। এদের অপসারণ দরকার। চাওয়া-পাওয়ার প্রশ্নে স্বজনপোষণ দোষে আমরাও দুষ্ট। সরকারে আবার চলে এলে আমাদের দাম্ভিকতা আরও বেড়ে যেত। ত্রুটি সংশোধন আর হত না।’ শুধু তাই নয়, দলীয় নেতাদের বিভিন্ন বৈঠকে উপস্থিত না থাকা, সময়ে উচ্চ-নেতৃত্বের কাছ থেকে সহায়তা না পাওয়া প্রভৃতি কারণেও দলে ভেতরে-ভেতরে ঘূণ ধরে গিয়েছিল বলেই প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
খড়্গপুরের ইন্দা লোকাল কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, ‘শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে উন্নয়নের কাজের কথা বলা হলেও প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রায়শই অবহেলা করা হয়েছে। এ ছাড়াও সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতা, প্রশাসনের ও ফ্রন্টের বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি, ঐক্যের অভাব, দীর্ঘসূত্রিতা, আমলা নির্ভরতা প্রভৃতি কারণে পুরোপুরি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠতে পারেনি।’ আত্মসমালোচনার পাশাপাশি ঘুরে দাঁড়ানোর কথাও উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে। সে ঘুরে দাঁড়ানো যেন স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন হয়, মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়, তা জানাতে গিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আমাদের কী দায়িত্ব ও কর্তব্য ছিল, ভুলটা কোথায় হল সেই পাঠ জনগণের কাছ থেকে নিতে হবে। লেন্সের তলায় ফেলে দেখতে হবে। ভুল-ত্রুটি সংশোধন করতে হবে। ভুল আঁকড়ে না থেকে তার স্বপক্ষে যুক্তি খাড়া না করে আমাদের আগামী সংগ্রামে তৈরি হতে হবে।’ |
|
|
|
|
|