পরিযায়ী পাখিদের অবাধ বিচরণে যাতে অসুবিধা না হয় সেজন্য আসন্ন পিকনিকের মরশুমে রায়গঞ্জ কুলিক পক্ষিনিবাস চত্বরে সাউন্ড বক্স ও মাইক বাজানোর ওপরে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করার সিদ্ধান্ত নিল বন দফতর। সম্প্রতি পক্ষিনিবাস পরিদর্শন করে বন দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলার পর একথা জানান রাজ্যের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। গত কয়েক মাস ধরে পরিযায়ী পাখিদের একাংশ পক্ষিনিবাসের আস্তানা ছেড়ে সংলগ্ন লোকালয়ের বিভিন্ন গাছে আশ্রয় নিচ্ছে পরিযায়ী পাখিদের মলমূত্র ত্যাগের জেরে শহরে দূষণ ও দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বিষয়টি জানার পর উদ্বেগ প্রকাশ করেন বনমন্ত্রী। কী কারণে পরিযায়ী পাখি পক্ষিনিবাস থেকে বিমুখ হচ্ছে সেই বিষয়েও দফতরের কর্তাদের খোঁজখবর নেওয়ার নির্দেশ দেন মন্ত্রী। পরিযায়ী পাখিদের পক্ষিনিবাসে প্রজনন ও খাবার সংগ্রহ করতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না এবং পক্ষিনিবাসের তারা কোনও ভাবে বিরক্ত অনুভব করছে কি না সেই বিষয়েও বন দফতরের কর্তাদের সজাগ হওয়ার নির্দেশ দেন বনমন্ত্রী। বনমন্ত্রী বলেন, “কুলিক পক্ষিনিবাস চত্বরে পরিযায়ী পাখিদের অবাধ বিচরণ, প্রজনন ও নিরাপদে থাকতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সেজন্য আসন্ন পিকনিকের মরশুমে পক্ষিনিবাস এলাকায় সাউন্ডবক্স ও মাইক বাজানো নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। |
পর্যটকরা পক্ষিনিবাসে পিকনিক করতে এসে সাউন্ডবক্স ও মাইক বাজাতে পারবেন না। নির্দেশ অমান্য করা হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পাশাপাশি তিনি জানান, পর্যটকরা পিকনিক করতে গিয়ে পক্ষিনিবাস চত্বরে যাতে প্লাস্টিক, আবর্জনা ও খাবারের উচ্ছিষ্ট না-ফেলে সেজন্য বন দফতরের কর্তাদের পর্যটকদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, প্রতি বছর জুন-জুলাই মাস নাগাদ ভারতের বিভিন্ন রাজ্য-সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে নাইট হেরন, ওপেন বিলস্টক, করমোন্যান্ট-সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় দুই লক্ষ পরিযায়ী পাখি কুলিক পক্ষিনিবাসে আসে। পক্ষিনিবাসের কয়েক হাজার গাছের ডগায় তারা বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বাচ্চা হওয়ার পরে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস নাগাদ পরিযায়ী পাখিরা কুলিক ছেড়ে চলে যায়। প্রতি বছর ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস জুড়ে উত্তর দিনাজপুর-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েক হাজার পর্যটক পক্ষিনিবাসে পিকনিক করতে আসেন। পর্যটকরা পক্ষিনিবাস সংলগ্ন পিকনিক স্পট-সহ প্রায় কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে থাকা অসংরক্ষিত এলাকায় এতদিন উচ্চশব্দে সাউন্ডবক্স ও মাইক বাজিয়ে পিকনিকের আয়োজন করতেন বলে অভিযোগ। ফলে, পরিযায়ী পাখিরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করত। পিকনিকের ফলে পর্যটকদের ঘন ঘন আনাগোনা, উন্মাদনা ও সাউন্ডবক্স এবং মাইকের উচ্চশব্দের জেরে পরিযায়ী পাখিদের একাংশ ভয়ে গুটিয়ে যেত। সম্প্রতি, বনমন্ত্রী পক্ষিনিবাস থেকে পরিযায়ী পাখিদের একাংশের বিমুখ হওয়ার ঘটনা জানতে পেরে বিষয়গুলি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন! যদিও রায়গঞ্জের বিভাগীয় বনাধিকারিক অপূর্ব সেন বনমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই পক্ষিনিবাস চত্বরে সাউন্ডবক্স ও মাইক বাজিয়ে পর্যটকরা যাতে পিকনিক না করেন এবং দূষণ না ছড়ান সেই বিষয়ে নজরদারি চালানো হচ্ছে।” রায়গঞ্জ কালচারাল ফোরামের সম্পাদক পবিত্র চন্দ ও নাগরিক সমিতির সম্পাদক তপনকুমার চৌধুরী বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরেই পরিযায়ী পাখিদের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে বন দফতরের কাছে পক্ষিনিবাস চত্বরে সাউন্ডবক্স ও মাইক বাজিয়ে পিকনিক নিষিদ্ধ করা এবং দূষণ নিয়ন্ত্রন করার দাবি জানিয়ে আসছিলাম। নতুন সরকারের বনমন্ত্রী এই বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ায় আমরা তাঁকে ধন্যবাদ বার্তা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” |