রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটার সুফল পেতে শুরু করেছে বিহার। জাতীয় সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে মাফিয়ারাজের দাপটে কয়েক বছর আগে এ রাজ্যেই খুন হয়েছিলেন সৎ ও সাহসী ইঞ্জিনিয়ার সত্যেন্দ্র দুবে। তোলাবাজদের দৌরাত্ম্যে সড়ক নির্মাণের বরাত নিতেই ভয় পেতেন ঠিকাদাররা। আজ সেই বিহারেই জাতীয় সড়ক বানানোর কাজ নেওয়ার জন্য রীতিমতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে নির্মাণ সংস্থাগুলির মধ্যে। তার কারণ, বিহারে জাতীয় সড়ক তৈরির কাজ নেওয়াটা লাভজনক বলে মনে করছে নির্মাণ সংস্থাগুলি। বিনিয়োগকারীদের চোখে বিহার এখন ‘নিরাপদ’। এতটাই, যে সরকার নির্ধরিত মূল্য থেকে ১০০ কোটি টাকা কমেও এই কাজ করতে আগ্রহী অন্ধ্রপ্রদেশের একটি সংস্থা। আগামী মার্চে এই কাজ শুরু হওয়ার কথা।
কেন বিহারে এই ‘পরিবর্তনের হাওয়া’? জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে এক পদস্থ কর্তা সরাসরিই বলেন, “বিহারের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন আগের থেকে অনেক ভাল। ফলে বেসরকারি সংস্থাগুলি রাস্তা তৈরির মতো কাজে বিপুল আগ্রহ দেখাচ্ছে। এটা আমাদের রাজ্যের পক্ষেও ভাল।” একই সঙ্গে বিহারে এই কাজে ‘বিল্ট অপারেট ট্রান্সফার (বিওটি) পদ্ধতিও সড়ক নির্মাণসংস্থাগুলিকে আকৃষ্ট করছে বলে মনে করেন ওই কর্তা। বিল্ট অপারেট পদ্ধতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ওই কর্তা বলেন, “রাস্তাটি তৈরি হওয়ার পরে ২০ বছরে ধরে সংস্থাটি এর রক্ষণাবেক্ষণ করবে। একই সঙ্গে তারা টোলও আদায় করতে পারবে। এই রাস্তা তৈরি হলে সংস্থাটি আমাদের যে টাকা দিচ্ছে, টোল আদায় করে ২০ বছরে তার থেকে অনেক বেশি তুলে নিতে পারবে। কারণ, ওই রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে যাবে। এ জন্যই এই প্রথম কোনও বেসরকারি সংস্থা সরকার নির্ধারিত মূল্যের থেকে অনেক বেশি কম টাকায় রাস্তা তৈরিতে সম্মত হল।”
বিহারে রাস্তাঘাটের এক বড় অংশেরই হাল এখন অনেকটাই ভাল। ফলে পথে গাড়ির সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছে। বিহারের রাস্তা তৈরির ব্যাপারে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারও যথেষ্ট সক্রিয়। কয়েক মাস আগে মুজফ্ফপুর থেকে বারাউনি পর্যন্ত ১০৭ কিলোমিটার দীর্ঘ দুই লেনের রাস্তা তৈরির জন্য জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ দরপত্র আহ্বান করে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত মূল্য ছিল ৩৫৬ কোটি টাকা। অন্ধ্রপ্রদেশের সংস্থাটি রাস্তা তৈরির সরকার নির্ধারিত মূল্যের থেকে ১০০ কোটি টাকা কম দর দিয়ে অর্থাৎ ২৫৬ কোটি টাকার বিনিময়ে ওই রাস্তা তৈরির বরাত পেয়ে যায়। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের শর্ত অনুযায়ী, মার্চে কাজ শুরুর পরে ৩০ মাসের মধ্যে ১২ মিটার চওড়া দুই লেনের এই রাস্তা তৈরির কাজ শেষ করতে হবে।
শীঘ্রই বিহার সরকারের সঙ্গে ওই সংস্থা এবং জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হবে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানান, প্রতি বছর ওই সংস্থাটি জাতীয় সড়ককে ৫ কোটি করে ২০ বছর ধরে ‘প্রিমিয়াম’ হিসাবে ১০০ কোটি টাকা ফেরত দেবে। তাঁদের মতে, এর ফলে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষেরও লাভ হল। |