উত্তরপ্রদেশের ভোটে কংগ্রেসের পুনরুজ্জীবনে বড় ধরনের রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়েছেন তিনি। অথচ যে উৎসাহ নিয়ে নিজে প্রচারে যাচ্ছেন, তার কোনও প্রতিফলনই দেখতে পাচ্ছেন না রাজ্য নেতাদের মধ্যে। এ বারের ভোটে হেস্তনেস্ত কিছু করে দেখানো পরের কথা, তেমন গরজটুকুও যেন দেখা যাচ্ছে না। আর এই নিয়ে সম্প্রতি দলীয় বৈঠকে তীব্র ক্ষোভ জানালেন রাহুল গাঁধী।
মায়াবতীর বিরুদ্ধে জোরদার প্রচার চালাতে উত্তরপ্রদেশকে ১০টি এলাকায় ভাগ করে ১০ জন রাজ্য কংগ্রেস নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন রাহুল। এর মধ্যে অনেকেই আবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। নিজের এলাকায় ধারাবাহিক রাজনৈতিক কর্মসূচি তৈরির মাধ্যমে এগোনোর নির্দেশ দিয়েছিলেন রাহুল। কিন্তু তা যে হচ্ছে না, সেটা বুঝতে
পেরে রাহুল সম্প্রতি প্রচার কমিটির বৈঠকে বলেন, “যত ক্ষণ আমি প্রচারে থাকছি, তত ক্ষণ আপনারা থাকছেন। কংগ্রেস নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু আমি দিল্লি ফিরে আসার পর কেউই কাজ করছেন না। সব খবর আমার কাছে থাকে।” সূত্রের খবর, ক্ষুব্ধ রাহুল বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছেন, ভোট পর্যন্ত নিজ-নিজ এলাকায় প্রচার ছেড়ে কোথাও যাওয়া চলবে না রাজ্য নেতাদের। রাহুলের নেতৃত্বে ওই বৈঠকের পরেই প্রচার কমিটির সভাপতি শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়াল, কমিটির সদস্যদের চিঠি দিয়েছেন। তাতে জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী এক মাস তাঁরা নিজের নিজের এলাকায় কী কী রাজনৈতিক কর্মসূচি নিতে চলেছেন তা সবিস্তার আগাম জানাতে হবে।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, উত্তরপ্রদেশ ভোটে কংগ্রেসের ভাগ্য ফেরাতে রাহুল যে ভাবে সামগ্রিক দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন তা বড় রাজনৈতিক ঝুঁকি বটে। কারণ, এর পর ভোটে কংগ্রেসের ফল ভাল না হলে বিরোধীরা রাহুলের যোগ্যতা
নিয়েই প্রশ্ন তুলবেন। এই কারণে শীর্ষ সারির অনেক নেতা রাহুলকে সতর্ক করে বলেছিলেন, এতটা ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু রাহুল তাঁদের পাল্টা বলেন, ঝুঁকি নিতে না পারার কারণেই উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের এই দূরবস্থা। এত হিসেব কষে রাজনীতি করলে উত্তরপ্রদেশ কেন কোথাও ভাল ফল করতে পারবে না কংগ্রেস। বরং আগ্রাসী প্রচারে নামতে হবে দলকে।
রাহুল নিজে যে উত্তরপ্রদেশে আগ্রাসী প্রচারে নেমেছেন তা নিয়ে সংশয় নেই। ১৪ নভেম্বর ইলাহাবাদ থেকে কংগ্রেসের প্রচার শুরু করার পর, ইতিমধ্যেই রাহুল টানা পাঁচ দিন সফর করেছেন উত্তরপ্রদেশে। ফের ৭ ডিসেম্বর লখনউ থেকে তাঁর জনসংযোগ অভিযান শুরু হতে চলেছে। তার আগে রাজ্য নেতাদের চাঙ্গা করতেই (রাহুল-ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, কৌশলগত কারণে) এ ভাবে ‘ধমক’ দিয়েছেন রাহুল। তিনি চাইছেন, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের প্রচার যেন তাঁর অভিযানের মধ্যেই সীমিত না থাকে। সেই ধারাবাহিকতা যাতে বজায় থাকে। আগামী ছ’মাসে মায়াবতীর বিরুদ্ধে প্রচারে কোনও ছেদ পড়ুক তা তিনি চান না। |