শুধু নাশকতা বা বিস্ফোরণ নয়, যৌথ বাহিনীর গুলিতে কিষেণজির মৃত্যুকে সামনে রেখে মাওবাদীরা নিজেদের গেরিলা বাহিনীতে নতুন ক্যাডার নিয়োগের চেষ্টা করছে বলে খবর পেয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। পশ্চিমবঙ্গ-সহ মাওবাদী অধ্যুষিত রাজ্যগুলিকে এ বিষয়ে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। মাওবাদী সংগঠনের গেরিলা বাহিনী পিএলজিএ (পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি) প্রতিষ্ঠার একাদশ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ২ ডিসেম্বর থেকে সপ্তাহব্যাপী উদযাপনের ডাক দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কিষেণজির মৃত্যুর ঘটনায় দেশ জুড়ে ২৫ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর ‘প্রতিবাদ সপ্তাহ’ পালনের ডাকও দেওয়া হয়েছে, যা শেষ হচ্ছে আজ ও আগামিকালের বন্ধের ডাক দিয়ে। এই সময় কালে মাওবাদীরা যে হামলা ও নাশকতার সব রকম চেষ্টা চালাবে, তাকে গোয়েন্দাদের কোনও সন্দেহ নেই। গত কাল ঝাড়খণ্ডের সাংসদ ইন্দর সিংহ নামধারীর কনভয়ে মাওবাদীদের হামলাতেই তার প্রমাণ মিলেছে। লাতেহারে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে দিল্লি-কলকাতা রুটের গুরুত্বপূর্ণ রেললাইন। আজও মাওবাদী অধ্যুষিত রাজ্যগুলিতে যোগাযোগ ও রেলের পরিকাঠামো ধ্বংস করার চেষ্টা করছে মাওবাদীরা।
কিন্তু এর থেকেও কেন্দ্রীয় সরকারের মাথা ব্যথার বেশি কারণ পিএলজিএ-তে সশস্ত্র ক্যাডার নিয়োগ নিয়ে গোয়েন্দাদের রিপোর্ট। এই রিপোর্ট অনুযায়ী, অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম জেলায় গত কয়েক দিনে মাওবাদীরা পিএলজিএ-তে যোগ দেওয়ার ডাক দিয়ে পোস্টার দিয়েছে। কয়েকটি গ্রামে মাওবাদীরা সভাও করেছে। মহারাষ্ট্রের গড়চিরোলি জেলার ধানোরা, ভামরাগড় ও পুরুদাতেও মাওবাদীদের পোস্টার পড়েছে। এই ধরনের পোস্টার মিলেছে মাওবাদী অধ্যুষিত অন্য রাজ্যগুলিতেও। কেন্দ্রীয় মিলিটারি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ নেতা থিপ্পিরি তিরুপতি ও দেওজি নতুন করে বিবৃতি দিয়ে ‘সশস্ত্র সংগ্রাম’-এর মাধ্যমে ‘রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল’-এর ডাক দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্র, বিহার, ওড়িশা, ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ড ও মধ্যপ্রদেশে গেরিলা বাহিনীতে নিয়োগ অভিযানেরও নিদের্শ দিয়েছেন তাঁরা।
সম্প্রতি বিহারের জামুই ও জামুই-গিরিডি সীমান্তে মাওবাদীদের সশস্ত্র বাহিনীর বড়সড় জমায়েত হয়েছে বলেও গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। গোয়েন্দা রিপোর্টে তাই বলা হয়েছে, পিএলজিএ-র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীকে সামনে রেখে মাওবাদীরা গ্রামে গ্রামে সভা করে নিজেদের তত্ত্ব প্রচার করবে ও কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির সমালোচনা করবে। এই উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মশাল মিছিল হবে বলেও রিপোর্ট এসেছে। নাশকতার চেয়েও আপাতত সেটাই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে। |