খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চেয়ে সংসদে মুলতুবি প্রস্তাব আনার দাবিতে এখনও অনড় বিজেপি ও বামেরা। পাশাপাশি লোকপাল বিল পাশ করানো নিয়েও মনমোহন সরকারকে বিঁধতে চাইছে বিজেপি-র একাংশ। বামেদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বিজেপি-র অভিযোগ, লোকপাল বিল ও স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিতে পি চিদম্বরমের জড়িত থাকা নিয়ে আলোচনা এড়াতেই সংসদে অচলাবস্থা টিকিয়ে রাখতে চাইছে কেন্দ্র। যদিও বুধবার থেকে সংসদ মসৃণ ভাবে চলবে কি না, আজ এই প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ সংক্ষিপ্ত জবাবে বলেছেন, “আশা করি।”
কেন্দ্রের উপর চাপ বাড়াতে এ দিন থেকেই দিল্লির রাজপথে নেমে পড়েছে ‘টিম অণ্ণা’। ১১ ডিসেম্বর যন্তরমন্তরে ধর্নায় বসবেন অণ্ণা হজারে। চলতি শীতকালীন অধিবেশনেই লোকপাল বিল পাশ করানো না হলে ২৭ ডিসেম্বর থেকে ফের আমরণ অনশনে বসারও হুমকি দিয়ে রেখেছেন এই ‘গাঁধীবাদী’ আন্দোলনকারী। তার আগে আজ লোকপাল বিল নিয়ে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড কী চাইছে, তা জানানোর দাবি তুলেছেন কিরণ বেদী, প্রশান্ত ভূষণরা।
এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। দলের অভিযোগ, সরকার আসলে লোকপাল বিল পাশ করাতে রাজি নয়। তাই সরকারই এমন পরিস্থিতি তৈরি করছে, যাতে সংসদ না চলে। একই অভিযোগ বামেদেরও। আবার খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির প্রসঙ্গকে ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে বিজেপি-র অন্দরে। বুধবার সংসদের অধিবেশন বসার আগে মনমোহন সিংহ, প্রণব মুখোপাধ্যায় কী অবস্থান নেন, তা দেখেই পরবর্তী রণকৌশল ঠিক করতে চাইছে বিজেপি।
এ ক্ষেত্রেও বিরোধী ঐক্য বজায় রাখার উপরই সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বিজেপি। এর আগে মূল্যবৃদ্ধির প্রশ্নে বাম-বিজেপি কক্ষ সমন্বয় দেখা দিয়েছিল। এই প্রসঙ্গকে সব রাজনৈতিক দল অস্ত্র করতে চাইলেও, কালো টাকার উদ্ধারের বিষয়টি ছিল বিজেপি-র নিজস্ব। তা সত্ত্বেও বিরোধী ঐক্য বজায় রাখতে বামেদের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনাকেই প্রাধান্য দিয়েছিল বিজেপি। এখন খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির প্রশ্নেও বামেদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাইছে বিজেপি। সীতারাম ইয়েচুরি, গুরুদাস দাশগুপ্তদের বক্তব্যের প্রতিধ্বনিই শোনা যাচ্ছে অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজের কণ্ঠে। সীতারাম ইয়েচুরি বলছেন, সংসদের অচলাবস্থা না কাটলে সরকার অজুহাত দেখাবে, বিরোধীরা সংসদ অচল করে রেখেছিল বলেই লোকপাল বিল পাশ করানো গেল না। একই অভিযোগ জেটলি-সুষমারও। বিজেপি আবার স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গে চিদম্বরমকে সংসদে বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, চিদম্বরমের সঙ্গে আলোচনা করেই প্রাক্তন টেলিকমমন্ত্রী এ রাজা টু-জি স্পেকট্রাম বণ্টনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এ নিয়ে কোনও আলোচনা হলেই সরকারকে অস্বস্তিতে পড়তে হবে।
কিন্তু এ নিয়ে সরব হতে গেলে বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা থেকে নজর কিছুটা হলেও সরে যেতে পারে। সেটা ঠিক হবে কি না, তা নিয়ে বিজেপির-র মধ্যেই ভিন্ন মত রয়েছে। বিদেশি লগ্নির প্রশ্নে বিরোধীদের সঙ্গে ইউপিএ শরিকরাও যে ভাবে এককাট্টা হয়েছেন, তা অন্য কোনও প্রসঙ্গে হবে না। এনডিএ-র শরিক অকালি দল প্রথমে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নিকে সমর্থন করলেও এখন তারাও এর বিপক্ষে। বিজেপি নেতৃত্বকে সে কথা জানিয়েও দিয়েছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদল। কংগ্রেসকে কোণঠাসা করার এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করাটাও তাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে কি না, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। কিন্তু সরকার যাতে বিরোধীদের ঘাড়ে অচলাবস্থার দায় ঠেলে দিতে না পারে, সে দিকেও নজর রাখা প্রয়োজন। এই পরিস্থিতিতে সরকারের কোর্টেই বল ঠেলতে চাইছে বিজেপি ও বামেরা।
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত ‘স্থগিত’ রাখার কথা ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কেন্দ্রের কেউই এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, অধিবেশন চলাকালীন সংসদের বাইরে এ বিষয়ে মুখ খোলাও সম্ভব নয়। বিজেপি চাইছে, সরকার সংসদে নিজের অবস্থান ঘোষণা করুক। বিজেপি নেতা শাহনওয়াজ হুসেন বলেছেন, ‘আমরা চাই, বিদেশি লগ্নি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করুন। আমজনতা ক্ষুব্ধ, তারা রাস্তায় বিক্ষোভ জানাচ্ছে। সরকারের শরিকরাও ক্ষুব্ধ। প্রধানমন্ত্রী আবার যুব কংগ্রেসের সভায় গিয়ে অন্য মত জানাচ্ছেন। কিন্তু পরে অন্য সূত্রে জানতে পারছি, এই সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। গোটা দেশ তাই চায়, প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করুক।” দলের সভাপতি নিতিন গডকড়ী আবার কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে বলেছেন, “মহাত্মা গাঁধী বিদেশি পণ্য ত্যাগ করার ডাক দিয়েছিলেন। তাঁর সেই নীতিকেই বিসজর্ন দিচ্ছে কংগ্রেস সরকার।” |