ভোটের ময়দানে সরাসরি না থাকলেও মানুষের রায় গেল তাঁদের দিকেই। অবৈধ খনন মামলায় বি এস ইয়েদুরাপ্পার আমলের মন্ত্রী জে জনার্দন রেড্ডি ও তাঁর ভাই করুণাকর রেড্ডি এখন জেলে। কিন্তু তাঁদের ঘনিষ্ঠ বিজেপি-ছুট নেতা শ্রীরামুলুকেই বিধায়ক বেছে নিলেন বল্লারি (গ্রামীণ) কেন্দ্রের মানুষ। আর রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি-র প্রার্থী নেমে গেলেন তৃতীয় স্থানে। উপনির্বাচনে এই ফলের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া দুষেছেন দলেরই ভুলকে। তাঁর মতে, “রেড্ডি ভাইদের বেশি স্বাধীনতা দেওয়ারই ফল এটা।” আর দায় এড়াতে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বল্লারির এই হারকে একেবারেই ‘স্থানীয়’ ব্যাপার হিসেবে দেখাতে চাইছেন। দলের মুখপাত্র সইদ শাহনওয়াজ হুসেনের কথায়, “ওটা একটা স্থানীয় নির্বাচন। জয়ী প্রার্থী এক সময় বিজেপি-তেই ছিলেন। এ বার নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন। গোটা কর্নাটকের সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই।”
বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বল্লারির ফলকে রাজ্য রাজনীতির সঙ্গেও জড়াতে রাজি না হলেও, ইয়েদুরাপ্পা, রেড্ডি ভাইদের দুর্নীতির প্রশ্ন বেশ কিছু দিন ধরেই গলার কাঁটা হয়ে রয়েছে বিজেপি-র। যে কারণে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রথযাত্রায় বেরিয়ে বারবারই কর্নাটক-দুর্নীতি নিয়ে অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে লালকৃষ্ণ আডবাণীকে। কর্নাটকে গিয়ে একাধিক বার সাংবাদিক বৈঠকও বাতিল করেছেন তিনি। দলের ও নিজের দুর্নীতি-বিরোধী ভাবমূর্তি তুলে ধরতে এবং কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হওয়ার স্বার্থে এই রাজ্য এসে আডবাণী দুর্নীতি নিয়ে যেটুকু-যা বলেছেন, তা-ও যথাসম্ভব ভারসাম্য রেখেই। সন্দেহ নেই এ-হেন কর্নাটকে এক রেড্ডি-ঘনিষ্ঠের জয় বেশ অস্বস্তিতেই ফেলল বিজেপি নেতৃত্বকে। স্পষ্ট হয়ে গেল, রয়েই গিয়েছে তাঁদের কর্নাটক-কাঁটা। শ্রীরামুলু ভোট পেয়েছেন ৭৪ হাজারেরও বেশি। সান্ত্বনা খুঁজতে মুখ্যমন্ত্রী গৌড়া মনে করিয়ে দিয়েছেন, “রেড্ডিদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ার পরে ওই অঞ্চলে বিজেপি-র ভোট শূন্যে এসে ঠেকেছিল। এখন তো বিজেপি প্রার্থী অন্তত ১৮ হাজার ভোট পেয়েছেন।” শ্রীরামুলুকে সমর্থন করেছিল এইচ ডি কুমারস্বামীর জে ডি (এস)। ফল ঘোষণার পরে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কুমারস্বামী। বল্লারিতে বিজেপি-কে পিছনে ফেলে কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছেন দ্বিতীয় স্থান।
দুর্নীতি ও খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে চলতি বিতর্কের মধ্যে কংগ্রেসকে সামান্য স্বস্তির খবর দিয়েছে হরিয়ানার রতিয়া কেন্দ্রের উপনির্বাচন। ৩০ বছর পর এই বিধানসভা আসনটি দখলে এসেছে তাদের। তবে কিছু দিন আগে হিসার লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে হারের মুখ দেখার পরে এই কেন্দ্রের অধীন আদমপুর বিধানসভা আসনেও পরাজিত হয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী।
এখানে জিতেছেন হরিয়ানা জনহিত কংগ্রেস নেতা কুলদীপ বিশনইয়ের স্ত্রী রেণুকা দেবী।
হিমাচলপ্রদেশে একে অপরের কাছ থেকে একটি করে আসন ছিনিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস ও বিজেপি। ওড়িশায় উমেরকোট বিধানসভা আসনে জয়ী হয়েছেন শাসক দল বিজেডি-র সুভাষ গোন্দ।
বিহারে এখনও নীতীশ কুমারের জয় অব্যাহত। মধুবনি জেলার লৌকা বিধানসভার উপনির্বাচনে জেডিইউ প্রার্থী সতীশকুমার শাহ তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আরজেডি-র মুখতার আহমেদকে প্রায় ২২ হাজার ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন। রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী হরিপ্রসাদ শাহের মৃত্যুতে এই আসনটি শূন্য হয়েছিল। হরিপ্রসাদের ছেলে সতীশকে ওই আসনে প্রার্থী করেছিলেন নীতীশ।
ঝাড়খণ্ডের মান্ডু আসনে জয়ী হয়েছেন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার প্রার্থী জয়প্রকাশ ভাই পটেল। কংগ্রেস প্রার্থী কুমার মহেশ সিংহকে ২৩ হাজারেরও বেশি ভোটে হারিয়েছেন তিনি।
বল্লারির হার নিয়ে অস্বস্তি থাকলেও বিজেপি মুখপাত্র শাহনওয়াজের দাবি, দেশের বিভিন্ন অংশে উপনির্বাচনে কংগ্রেস মোটেই ভাল ফল করেনি। তাঁর কথায় “বিহার, ঝাড়খণ্ড, হিমাচল অনেক জায়গাতেই তো ওদের প্রার্থীদের জামানত জব্দ হয়েছে।” |