বাঁচল হাওড়া-অজমেঢ় এক্সপ্রেস
গয়ায় কোবরার ক্যাম্পেই হামলা মাওবাদীদের
মাওবাদী শীর্ষনেতা কিষেণজি-র হত্যার বদলা নিতেই লাতেহারে পুলিশকর্মীদের নিশানা করে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে বলে মনে করছে ঝাড়খণ্ড পুলিশ। চাতরার সাংসদ ইন্দর সিংহ নামধারীর গাড়ির পিছনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের গাড়িটিই মাওবাদীদের ল্যান্ডমাইন ফাঁদের টার্গেট ছিল বলে রাজ্য পুলিশের কর্তাদের দাবি। তার মধ্যেই রবিবার থেকে শুরু হওয়া তাদের ডাকা দু’দিনের ভারত বন্ধের প্রথম দিনেই বিহার-ঝাড়খণ্ডের জেলায় জেলায় মোবাইলের টাওয়ার, রেললাইন উড়িয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে মাওবাদীরা। লাতেহারের ছিপাদোহর ও হেহেগড়া স্টেশনের মাঝে রেললাইনে বিস্ফোরণে হাওড়া-অজমেঢ় এক্সপ্রেস ট্রেন অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে। এর মধ্যেই রবিবার রাত ন’টা নাগাদ গয়ার ডুমারিয়াতে কোবরা জওয়ানদের ক্যাম্প লক্ষ করে গুলি চালায় সন্দেহভাজন মাওবাদীরা। পাল্টা গুলি চালায় জওয়ানরাও। যদিও এই ঘটনায় হতাহতের খবর নেই।
কিষেণজি-হত্যার প্রতিবাদে মাওবাদীদের ভারত-বন্ধ শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই শনিবার সন্ধ্যায় লাতেহার ও পলামু জেলার সীমানায় মহুয়াটাঁড়ে মাওবাদীরা ওই হামলা চালায়। বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১। এর মধ্যে ৯ জন পুলিশ ও এক জন পুলিশের গাড়ির চালক। এ ছাড়াও একটি সাধারণ যাত্রিবাহী বাসের আরোহী ৮ বছরের এক বালকের মৃত্যুর খবর স্বীকার করেছে রাজ্য পুলিশ। জখম হয়েছেন এক মহিলা। গাড়ি ওড়ানোর পাশাপাশি পুলিশের ১০টি রাইফেল ও প্রায় দু’শো কার্তুজ মাওবাদীরা লুঠ করেছে বলে অভিযোগ। পুলিশের দাবি, বিস্ফোরণের পরে ওই এলাকার যোগাযোগ-ব্যবস্থা নষ্ট করতে কয়েকটি মোবাইল টাওয়ারও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
লাতেহারে ক্ষতিগ্রস্ত লাইন সারাইয়ের কাজ চলছে। —নিজস্ব চিত্র
রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, “লাতেহারের গারুতে কলেজের অনুষ্ঠান সেরে নামধারী ফেরার সময়ে তাঁর গাড়ির পিছনে শুধু মাত্র একটি গাড়ি ছিল। নামধারী জঙ্গিদের টার্গেট হলে তাঁর গাড়িটি ওড়ানো জঙ্গিদের কাছে কোনও সমস্যাই ছিল না। কিন্তু মাওবাদীদের লক্ষ্য ছিল, সাংসদের গাড়ির পিছনে স্থানীয় থানার সশস্ত্র পুলিশকর্মীদের গাড়ি।” সিআরপি সূত্রের খবর, মাওবাদীদের পূর্বাঞ্চলীয় ব্যুরোর এক নম্বর কম্পানি এই হামলার ছক কষেছিল। কোয়েল-শঙ্খ জোনাল কাউন্সিলের সদস্য বালকেশ্বর ওরাঁও ওরফে ‘বড়া বিকাশ’ এই হামলার পিছনে রয়েছে বলে পুলিশের দাবি। বৈদ্যুতিক তারের সাহায্যে ‘কম্যান্ড ওয়্যার’ পদ্ধতিতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। লাতেহারের এসপি দেওবিহারি শর্মা জানান, বিস্ফোরণে গুরুতর জখম এক পুলিশকর্মীকে আজ হেলিকপ্টারে রাঁচিতে এনে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সাংসদের গাড়ির উপরে হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাত পৌনে দু’টো নাগাদ লাতেহারের জঙ্গল লাগোয়া ছিপাদোহর স্টেশনের কাছে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রেললাইন ওড়ানো হয়েছে বলে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। রেল সূত্রের খবর, বিস্ফোরণে আপ-লাইনের ১৫ ফুট উড়ে গিয়েছে। রাতেই ওই রটে যাওয়ার কথা ছিল হাওড়া-অজমেঢ় এক্সপ্রেসের। বিস্ফোরণের খবর সময় মতো টের পেয়ে যাওয়ায় ট্রেনটিকে ছিপাদোহার স্টেশনের ঠিক আগে কুমান্ডি স্টেশনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। তার পিছনে দাঁড়িয়ে যায় অন্য ট্রেনগুলিও। আজ বেলা ১১টার পরে ওই এলাকায় রেল চলাচল শুরু হয়েছে। ছিপাদোহরের ডাউন লাইন দিয়ে ধীরে ধীরে আপ ট্রেনগুলিকে গন্তব্যে রওনা করানো হয়। পুলিশের দাবি, গোমিয়া-বরকাখানা রুটেও মাওবাদীদের বিস্ফোরণে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রেল সূত্রের খবর, শনিবার রাত দেড়টা নাগাদ এক দল বন্দুকধারী যুবক ছিপাদোহর স্টেশন ম্যানেজারের ঘরে চড়াও হয়। ঘরে ঢুকেই তাঁর মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেয়। ওই দলের চার জনের কথায় দক্ষিণ ভারতীয় টান ছিল বলে রেল আধিকারিকদের দাবি। তাঁরা জানান, মোবাইল ফোন হস্তগত করে স্টেশন ম্যানেজারকে প্রথমে বেঁধে রাখলেও পরে তাঁর বাঁধন খুলে দেয় হামলাকারীরা। এর পরেই বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে স্টেশন-চত্বর। ঘটনাস্থলে গিয়ে রেলকর্মীরা দেখেন, আপ লাইনে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। ১৫ ফুট লাইন সম্পূর্ণ উড়ে গিয়েছে। গর্ত হয়ে গিয়েছে লাইনের স্লিপারের তলায়। সঙ্গে-সঙ্গে কন্ট্রোল রুমে এ খবর পাঠানো হয়। বিপদসঙ্কেত পাঠানো হয় আপ ও ডাউন লাইনের সমস্ত ট্রেনচালকদের কাছে। দ্রুত সতর্কতার দরুণ বড় দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছে বলে রেল-কর্তারা মনে করছেন। হাজারিবাগের বিষুণগড়ের আজমেরি গ্রামেও গত রাতে মাওবাদীরা একটি কয়লা-বোঝাই ট্রাক উড়িয়ে দেয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। বীরভূম লাগোয়া পাকুড়ের আমরাপাড়া ব্লকের কেওয়াতলায় ল্যান্ডমাইন-হামলার চেষ্টা ঠেকানো গিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এসপি অমরনাথ খন্না।
মহুয়াটাঁড়ে মাওবাদীদের ল্যান্ডমাইনে বিধ্বস্ত। ছবি: সৈকত চট্টোপাধ্যায়
‘ভারত বন্ধ’ উপলক্ষে বিহারেও নাশকতার ঘটনা ঘটিয়েছে মাওবাদীরা। পুলিশ জানায়, গত কাল ঔরঙ্গাবাদ জেলার কুটুম্বা থানা এলাকায় দু’টি মোবাইল টাওয়ার পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার ঝাঁঝা জেলার সুশিতে ২৫ জনের সশস্ত্র একটি দল অতর্কিতে হানা দিয়ে দু’জনকে অপহরণ করে একটি মোবাইল টাওয়ার জ্বালিয়ে দিয়েছিল। অপহৃতদের মধ্যে এক জন মোবাইল টাওয়ারের রক্ষী। অন্য জন্য স্থানীয় বাসিন্দা। পটনা জেলার কয়েকটি গ্রামে অভিযান চালিয়ে পুলিশ এ দিন প্রেমান কাহার ওরফে প্রেমান রাম এবং ভরোসা মিস্ত্রি ওরফে ডোমান মিস্ত্রি নামে দু’জন মাওবাদীকে ধরেছে। পুলিশের দাবি, ২০০৫ সালে জহানাবাদে জেল-ভাঙার ঘটনা-সহ জহানাবাদ, আরওয়াল ও পটনায় একাধিক হিংসায় জড়িত ধৃতেরা। ওড়িশার মাওবাদী-প্রভাবিত জেলা মালকানগিরি, রায়গড়া, গজপতি, সুন্দরগড় ও কন্ধমালে বন্ধের জেরে জনজীবন ব্যাহত হয়েছে। বেশির ভাগ দোকানবাজার বন্ধ ছিল। সরকারি ভবন, রেলস্টেশন প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। সড়কগুলির উপরেও নজরদারির ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.