৬৫টি রুটের মধ্যে ৪৮টিই লোকসানে চলে। এর মধ্যে ৩১টি রুটে ব্যয়ের তুলনায় আয় সামান্য। লাভ হয় মাত্র ১১টি রুটে। না-লাভ, না-লোকসানে চলছে ৬টি। কলকাতায় সিএসটিসি-র বাস-পরিষেবার ছবিটা এমনই। এই অবস্থায় নিগমের আর্থিক হাল ফেরাতে একটি রূপরেখা তৈরি করেছেন কর্তৃপক্ষ। গোটা বিষয়টি নিয়ে শনিবার ছুটির দিনে সবিস্তার আলোচনা করেন সংস্থার কর্তারা।
এখন রোজ সিএসটিসি-র প্রায় ৪৫০ বাস পথে নামে। তার মধ্যে প্রায় ৩৬০টি চলে মহানগরীর বিভিন্ন রুটে। প্রতি মাসে কর্মীদের বেতন বাবদ খরচ হয় প্রায় ১৩ কোটি টাকা। ডিজেল লাগে সাড়ে তিন কোটি টাকার। এ দিকে, মাসে গড়ে টিকিট বিক্রি বাবদ আয় হচ্ছে পাঁচ কোটি টাকা। ফলে, বাস খারাপ হলে সারাই করার বা যন্ত্রাংশ কেনার টাকা জুটছে না। শুক্রবার পরিবহণমন্ত্রী সুব্রত বক্সী বিভিন্ন পরিবহণ-নিগমের কর্তাদের জানিয়ে দেন, “এ ভাবে আর চলবে না। আপনাদেরই ঠিক করতে হবে, কী ভাবে নিগম চালাবেন।” এর প্রেক্ষিতেই শনিবারের বৈঠক।
বৈঠকে পদস্থ অফিসারেরা ছাড়াও বিভিন্ন ডিপোর এক জন করে প্রতিনিধিকে ডেকেছিলেন নিগমের চেয়ারম্যান। ঠিক হয়েছে, শীঘ্রই বিভিন্ন রুটের আয়-ব্যয়ের অনুপাত, অর্থাৎ ‘কস্ট-বেনিফিট রেশিও’ নতুন করে নির্ধারণ করা হবে। সংস্থার চেয়ারম্যান তারাপদ মাঝি বলেন, “সামাজিক দায়বদ্ধতা আমাদের কিছুটা মানতেই হবে। অ-লাভজনক রুটগুলো রাতারাতি বন্ধ করে দিতে পারব না। কিন্তু, এই রকম রুটগুলি থেকে বাস কমিয়ে দিয়ে সেই সমস্ত বাস লাভজনক রুটে দেওয়া হবে।” প্রয়োজনে এ রকম রুটের গতিপথ বদলে রুটগুলিকে আয়ের উপযোগী করার চেষ্টা হবে। নিগম সূত্রের খবর, শহরের ৩১টি রুট অ-লাভজনক। |
লাভ-লোকসান |
দায়
|
নম্বর |
গন্তব্য |
ব্যয় |
আয় |
এস২১ |
বাগবাজার-গড়িয়া |
২৬.২৮ |
১৬.৭৫ |
এস২৪ |
হাওড়া-এসপ্ল্যানেড |
২৬.৩০ |
১৯.১৭ |
এস৩৪ |
ব্যারাকপুর-বারাসত |
২৫.০০ |
১৩.৭৬ |
এস৩৭এ |
বিমানবন্দর-গড়িয়া |
৩০.০০ |
১৫.০৪ |
আদায় |
এস৩১ |
এসপ্ল্যানেড-যাদবপুর |
২৪.০০ |
৩৩.২৩ |
১১ |
হাওড়া-শিয়ালদহ |
২০.৯৮ |
৩৪.৭৪ |
ই৪ |
হাওড়া-যাদবপুর |
২৫.৩০ |
৪৩.৮৯ |
এস৩৭এ |
হাওড়া-পর্ণশ্রী |
৩০.২০ |
৩৬.৩৬ |
(হিসেব কিমি-পিছু টাকায়) |
|
আর কী ভাবে আয়-ব্যয়ের ব্যবধান কমানো যায়? বৈঠকে যে সব উপায় নিয়ে কথা হয়েছে, তার মধ্যে গুরুত্ব পেয়েছে টিকিট বাবদ আয় বৃদ্ধি। চলন্ত বাসে কন্ডাক্টরের উপরে টিকিট নেওয়ার চাপ কমাতে বিভিন্ন ডিপোয় বাস ছাড়ার আগেই যতটা সম্ভব যাত্রীদের কাছ থেকে টিকিট কেটে নেওয়া হবে। এ ছাড়া, আচমকা নানা স্টপেজে বাস থেকে নামা যাত্রীর টিকিট দেখতে চাইবেন পরীক্ষকেরা। বিনা টিকিটের যাত্রীর কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হবে। নিগমের এক পদস্থ অফিসার বলেন, “আইন থাকলেও এত দিন টিকিটহীন যাত্রীদের কাছ থেকে জরিমানা নেওয়া হত না। এ বার থেকে সেই আইন বলবৎ করা হবে।” ‘ওভারটাইম’ এবং ‘ইনসেন্টিভের’ পরিমাণ কমানোর কথাও হয়েছে বৈঠকে। বিভিন্ন রুটে নির্দিষ্ট একটি পরিমাণের চেয়ে বেশি টিকিট বিক্রি করলে সংশ্লিষ্ট কন্ডাক্টর একটি ‘ইনসেন্টিভ’ পান। কলকাতা-দিঘার মতো কিছু রুটে যাতায়াতে আট ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যায়। সেগুলির জন্য চালক-কন্ডাক্টরকে ‘ওভারটাইম’ দিতে হয়। নিগমের এক কর্তা বলেন, “এ সব খরচ কমাতে কিছু রুটের গতিপথ বদলাতে হবে। কী ভাবে তা কমানো হবে, সংশ্লিষ্ট কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে শীঘ্রই কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করবেন।” তিনি জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগেও ‘ওভারটাইম’ এবং ‘ইনসেন্টিভ’ খাতে নিগমকে মাসে প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা গুণতে হত। সেটা কমিয়ে এখন ৪৫ লক্ষ টাকায় নামানো হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে ওই খাতে ব্যয় ২৫ লক্ষ টাকায় নামানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। |