রাজারহাট-নিউটাউন এলাকায় সিন্ডিকেট-সহ নানা রকম বেআইনি কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে এর মধ্যেই গ্রেফতার হয়েছে গৌর ও রুইস মণ্ডল। ধরা পড়েছে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্রও। কিন্তু ওই দু’জন ছাড়াও এলাকায় বেআইনি সিন্ডিকেট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আরও অপরাধীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে রবিবার নিউটাউন থানায় বিক্ষোভ দেখালেন এলাকার শ’তিনেক বাসিন্দা। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ সুপারের কাছে ওই দাবিতে স্মারকলিপিও জমা দিলেন তাঁরা।
শনিবার রাতে বারাসতের খড়িবাড়ি এলাকা থেকে রুইদাস মণ্ডল ওরফে রুইস এবং তার দুই সঙ্গী বিকাশ মণ্ডল ও বিপদ মণ্ডলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সপ্তাহ দুয়েক আগে গৌরকে গ্রেফতার করা হয় মহিষবাথান এলাকা থেকে। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য এ দিন নিউটাউন থানায় বলেন, “ওদের ডেরা থেকে ১৪টি মাস্কেট, ২টি রাইফেল এবং ১৫২ রাউন্ড কার্তুজ পাওয়া গিয়েছে।”
এ দিন বিকেলে নিউটাউন থানার সামনে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভকারীরা জানান, এত দিন তাঁরা দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার সাহস পাননি। কিন্তু সম্প্রতি কেষ্টপুরের স্বপন-খুনের পর সিন্ডিকেটের সন্ত্রাসের বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনাও চলছে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিন্ডিকেটগুলিকে ভেঙে দিয়ে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কিছুটা সাহস পেয়েই তাঁরা এ দিন থানায় এসে অভিযোগ জানিয়েছেন। |
রুইসের ডেরা থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র। নিজস্ব চিত্র |
গৌর ও রুইস এক সময়ে সিপিএমের আশ্রয়ে ছিল। রাজ্যে পালাবদলের পরে তারা তৃণমূলের আশ্রয়ে গিয়েছিল বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তাদের বিরুদ্ধে খুন, তোলাবাজি-সহ বহু অভিযোগ রয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা অবশ্য জানিয়েছেন, গৌর-রুইস ধরা পড়লেও তাদের দলবলকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। তাদের মাধ্যমেই এলাকায় সন্ত্রাস চালাবে দুষ্কৃতীরা। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, শুধু গৌর-রুইস নয়, এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে সমীর সর্দার ওরফে ভজাই-সহ আরও কয়েক জন দুষ্কৃতী। ভজাই একাই গোটা আটেক সিন্ডিকেট চালায়। ভজাইয়ের নামেও এ দিন পুলিশের কাছে নালিশ জানান বাসিন্দারা। পুলিশ সুপারকে তাঁদের দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ওই সব দুষ্কৃতীকে মদত দিচ্ছেন এলাকার নেতারা।
এ দিন ঠাকুরদাড়ি এলাকার বাসিন্দা অশ্বিনীকুমার প্রমাণিক থানার সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, “ভয়ে এত দিন গৌর-রুইস-ভজাইয়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারিনি। গৌর-রুইস গ্রেফতার হওয়াতেই ভজাইয়ের বিরুদ্ধে নালিশ করতে থানায় আসার সাহস পেলাম।” অশ্বিনীবাবুর অভিযোগ, “বিষয়টি এলাকার বিধায়ক সব্যসাচী দত্তকে জানিয়েছিলাম। কোনও লাভই হয়নি।” বিনয় মণ্ডল নামে আর এক বিক্ষোভকারীর অভিযোগ, “ভজাই আগে সিপিএম করত। ইদানীং তৃণমূল করছে। বিধায়ক হওয়ার পরে সব্যসাচীবাবু এলাকায় প্রথম যে অনুষ্ঠানটি করেছিলেন, সে দিনই মঞ্চে উঠে তাঁর কাছে ভজাইয়ের নামে অভিযোগ জানাই।” তাঁর দাদা অরবিন্দ মণ্ডলকে বছর কয়েক আগে ভজাই-ই প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করেছিল বলে এ দিন পুলিশের সুপারের কাছে অভিযোগও করেন বিনয়বাবু। বালিকা সর্দার নামের এক মহিলা পুলিশ সুপারকে জানান, তাঁর স্বামী সাধু সর্দারকেও খুন করা হয়েছিল। এসপি বলেন, “ভজাইয়ের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ রয়েছে, তার কয়েকটি বেশ পুরনো। প্রয়োজনে সে সব অভিযোগেরও নতুন করে তদন্ত হবে।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের ব্যাপারে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত বলেন, “২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে মহিষবাথান অঞ্চলে সিপিএম এর সমর্থক গৌর-রুইসের অত্যাচারে তৃণমূল প্রার্থী পর্যন্ত দিতে পারেনি। ওই অঞ্চলে ভোট করার জন্য আমাদের একজন শক্তপোক্ত ছেলের দরকার ছিল। সাহিত্যিক দিয়ে তো আর মহিষবাথানে ভোট করা যেত না! ভজাই তৃণমূলে যোগ দেয় ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে। তখন থেকে ভজাই তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী। তবে ওর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে আইন নিজের পথেই চলবে।” |