ময়দানের ‘বিধান মার্কেট’ দেখভালের দায়িত্ব সরকার আর নেবে না বলে দোকানিদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিদ্যুতের মাসুল বাবদ ১০ লক্ষাধিক টাকা বকেয়া সিইএসসি-র কাছে। বাজারে আগুন লেগে বা জীর্ণ অংশ ভেঙে বিপদের আশঙ্কা বাড়ছে। এই অবস্থায় ফাঁপরে দোকানিরা। এ নিয়ে সম্প্রতি মহাকরণে পূর্ত অফিসারদের সঙ্গে দোকানি-প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়েছে। পূর্তসচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন বলেন, “দোকানিরা এসেছিলেন। বলে দিয়েছি, ওঁদের জন্য সরকার আর টাকা খরচ করবে না। ওঁদের দায়িত্ব আমরা নেব না।”
স্বাধীনতার ঠিক পরে মনুমেন্টের কাছে প্রায় তিন বিঘা জমিতে তৈরি হয় এই বাজার। যা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পূর্ত দফতরের। অভিযোগ, সে কাজ যথাযথ হয় না। পানীয় জল সরবরাহ ও নিকাশিরও ভাল ব্যবস্থা নেই। পূর্ত অফিসারদের পাল্টা অভিযোগ, দোকানিরা তাঁদের টাকা দিতে চান না।
বিধান মার্কেটে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য রয়েছে একটি সংযোগ। সিইএসসি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট অনিরুদ্ধ বসু বলেন, “এই সংযোগের মাধ্যমে দোকানিরা বিদ্যুৎ পান। বিল পাঠানো হয় পূর্ত দফতরের নামে। |
অগস্ট-সেপ্টেম্বরের বিলের অনাদায়ী অর্থের পরিমাণ সাড়ে সাত লক্ষ টাকা।” সিইএসসি সূত্রের খবর, দোকানিদের মোট বকেয়া ১২ লক্ষের উপরে। স্থানীয় দোকানিদের সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি শঙ্কর মণ্ডল বলেন, “দোষ সরকারের। আমরা বিদ্যুৎ-মাসুলের পুরো টাকা পূর্ত দফতরকে দিয়েছি। সিইএসসি-র প্রাপ্য টাকা ওরা মেটাবে। আমরা নিয়মিত বিদ্যুতের মাসুল দিতে চাই। কিন্তু পূর্ত দফতরের কর্মীরা দেড়-দু’বছর অন্তর এক বারে ওই টাকা নিতে আসেন। যত ওঁরা দাবি করেন, তা নিয়েও আমাদের আপত্তি আছে।”
দোকানিদের এক প্রতিনিদি বলেন, “বিদ্যুতের মাসুল ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন চার্জ ও শুল্ক বাবদ ইউনিট পিছু ৫.৯০ টাকা হওয়া উচিত। পূর্ত দফতর এই খাতে নিচ্ছে ইউনিট পিছু আট টাকা।” অন্য দিকে পূর্ত ইঞ্জিনিয়ারদের দাবি, “দোকানে যেটুকু বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়, বিল সে হিসেবে আসে না। মোট ইউনিট যত আসে, দোকানিদের মধ্যে তা ভাগ করে মাসুল ধার্য হয়।” এই অবস্থায় সিইএসসি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, “সংযোগটি পূর্ত দফতরের নামে। সরকার প্রথা মেনে দোকানিদের নামে আলাদা বিল দিতে বললে তা নিশ্চয়ই বিবেচিত হবে।” পাশাপাশি অভিযোগ, লাইসেন্স ফি বাবদ দোকান-পিছু মাসে ২০ টাকা করে সরকারের প্রাপ্য অর্থও আদায় হচ্ছে না। বিভিন্ন সময়ে সরকার তা বাড়াতে বলেছিল। দোকানিরা কেউ আগ্রহ দেখাননি।
পূর্তসচিব বলেন, “ওই দোকানিদের টাকা দিতে হবে না। ওঁদের নিজেদের দায়িত্ব নিতে হবে।” এক দোকানি বলেন, “আমাদের সহযোগিতা না করার অভিযোগ ঠিক নয়। বাজারের নানা জটিলতা আছে। সমাধানের চেষ্টায় বিভিন্ন সময়ে বৈঠকও হয়েছে। সরকার হাত গুটিয়ে নিলে বাজার কী করে চলবে?” পূর্তসচিবের বক্তব্য, “প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ওই জমির মালিক। ওরা যা করবে, করতে পারেন।” |