ইসিএল
কর্মীদের রান্নার গ্যাস দিতে ‘বাধা’ শ্রমিক সংগঠনের
শ্রমিক-কর্মীদের গৃহস্থালির কাজে ব্যবহারের জন্য কয়লা সরবরাহ করে প্রতি বছর প্রায় ৭০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে ইসিএলের। এই ক্ষতি কমাতে শ্রমিক-কর্মীদের রান্নার গ্যাস সরবরাহ করতে চাইলেও শ্রমিক সংগঠনগুলির বাধায় তা সম্ভব হচ্ছে না। এই অবস্থায় সংস্থা আরও বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে বলে অভিযোগ ইসিএল কর্তৃপক্ষের।
ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় জানান, প্রতি মাসে প্রায় ৪০ হাজার টন কয়লা শ্রমিক কর্মীদের গৃহস্থালির ব্যবহারের জন্য দিতে হয়। যার মূল্য আনুমানিক দেড় কোটি টাকারও বেশি। অর্থাৎ সারা বছরে প্রায় ১৮ কোটি টাকা মূল্যের কয়লা দেওয়া হচ্ছে। তাঁর দাবি, কয়লার পরিবর্তে যদি রান্নার গ্যাস সরবরাহ করা হয়, তাহলে ইসিএলের খরচ প্রায় অর্ধেক হয়ে যাবে। ইসিএল কতৃপক্ষ জানান, গৃহস্থালির কাজে ব্যবহারের জন্য সরবরাহ করা কয়লাকে ঘিরে একটি চোরাকারবার চক্র গড়ে উঠেছে। কারণ শ্রমিক-কর্মীদের যে কয়লা দেওয়া হয় তা তাঁদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। এলাকার কিছু যুবক শ্রমিক-কর্মীদের কাছ থেকে ওই বাড়তি কয়লা খুব কম দামে কিনে নেয়। পরে সেগুলি তারা কয়লা অনুসারি শিল্প কারখানায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে। ফলে শিল্প কারখানার মালিকেরা যেমন বাজারদর অপেক্ষা অনেক কম মূল্যে কয়লা পান, তেমনই মধ্যস্থ এই দালাল চক্র মোটা টাকা রোজগার করে।
ইসিএল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, শ্রমিক-কর্মীরা তাঁদের পাওনা কয়লা ডিপো থেকে নিয়ে যাওয়ার সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণের থেকে বেশি কয়লা সংগ্রহ করেন। কোলিয়ারি অঞ্চলে রীতি রয়েছে, শ্রমিক-কর্মীদের আত্মীয়-পরিজন, প্রতিবেশীদের শবদাহ করার জন্য ইসিএল কতৃর্পক্ষ কয়লা সরবরাহ করেন। অভিযোগ, শবদেহ পিছু যে পরিমাণ কয়লা বরাদ্দ রয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি কয়লা ডিপো থেকে সংগ্রহ করা হয়। এই বাড়তি কয়লা পরে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, “আমরা এই বেনিয়ম এবং ইসিএলের আর্থিক সঙ্কট কমাতে শ্রমিক-কর্মীদের রান্নার গ্যাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু শ্রমিক সংগঠনগুলির বাধায় সব জায়গায় কার্যকরী করা যাচ্ছে না।” ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্যাস নিতে আগ্রহী শ্রমিক কর্মীদের সংস্থার তরফে বিনামূল্যে গ্যাস চুল্লি-সহ সংযোগ পাওয়ার সমস্ত ব্যবস্থা করে দেওয়া বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তাও মোট শ্রমিক-কর্মীর মাত্র ৩০ শতাংশ এখন গ্যাস ব্যবহার করছেন।
ইসিএল বিআইএফআর-এর অধীনস্থ। তাই এই ক্ষতি কমানোর বিষয়টি শ্রমিক সংগঠনগুলির দেখা উচিত বলে মনে করছেন ইসিএল কর্তৃপক্ষ। শ্রমিক নেতাদের অবশ্য যুক্তি, অধিকাংশ খনিকর্মী ও তাঁদের পরিবারের লোকজন বিশেষ শিক্ষিত নন। তাঁরা গ্যাস ঠিক মতো ব্যবহার করতে না পারলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তা ছাড়া প্রত্যন্ত এলাকায় গ্যাসের সিলিন্ডার পেতেও সমস্যায় পড়বেন কর্মীরা। এ সব কারণেই তাঁরা বিরোধিতা করছেন। সিটু অনুমোদিত শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক বিবেক হোমচৌধুরী বলেন, “খনি এলাকার শ্রমিকদের কয়লা দেওয়া বন্ধ করা যাবে না। শহর এলাকার শ্রমিকদের গ্যাস বাধ্যতামূলক করা হলে আপত্তি নেই।” আইএনটিইউসি-র সর্বভারতীয় সম্পাদক প্রভাত গোস্বামী বলেন, “অনেক শ্রমিকই গ্যাসের ব্যবহার জানেন না। তাই আমরা কয়লা বন্ধ করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছি।” সংস্থার অনুমোদিত পাঁচটি শ্রমিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ উপদেষ্টা কমিটির আহ্বায়ক, রাজ্যসভার সাংসদ রামচন্দ্র সিংহ বলেন, “মাসে একটি গ্যাস সিলিন্ডার পর্যাপ্ত নয়। তা ছাড়া গ্যাস জ্বালানোরও অনেক সমস্যা রয়েছে। তাই এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা হয়েছে।” কিন্তু সংস্থার আর্থিক ক্ষতি ও চোরা কারবার কী ভাবে বন্ধ করা যেতে পারে, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি শ্রমিক নেতারা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.