নিজস্ব সংবাদদাতা • ইলামবাজার |
এ গ্রামের বাসিন্দাদের অধিকাংশের পেশা কাঁসা পিতলের বাসন তৈরি। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, বহু বছর ধরে নবান্ন উৎসবকে ঘিরে অন্নপূর্ণা উৎসব হয়ে আসছে। ছ’টি প্রতিমা হয়। সব ক’টিই বেশ প্রাচীন। জয়দেব-কেন্দুলীর রাধাবিনোদ মন্দির থেকে মাত্র আধ কিলোমিটার দূরত্বের ওই গ্রামে রবিবার সকালে গিয়ে দেখা গেল উৎসবের আমেজ। চারদিকে সাজ সাজ রব। গ্রামে ঢুকতেই গোঁসাই কর্মকারদের অন্নপূর্ণা মন্দির। সেখানে তখন প্রতিমা সাজানোর কাজ শেষ। গ্রামের দু’টি মেহতরী পরিবারের অন্নপূর্ণা মন্দিরে প্রতিমা এসে গিয়েছিল। সেখানে আল্পনা আঁকার কাজ চলছিল। দীনবন্ধু মণ্ডলদের পরিবারের অন্নপূর্ণা মন্দিরে তখন পুজোর প্রস্তুতি চলছে। অন্য দিকে, দাস পরিবারের প্রতিমা পুজো শুরু হয়ে গিয়েছিল। পুজো চলবে রবিবার, সোমবার, মঙ্গলবার। মঙ্গলবারই প্রতিমাগুলি বিসর্জন দেওয়া হবে। বাড়ির মহিলারা কোথাও পুজোর থালা সাজাতে ব্যস্ত। কোথাও বা আল্পনা দেওয়ার কাজ চলছিল।
প্রতিটি পরিবারের প্রতিমার গড়ন প্রায় একই রকমের। এক চালার মধ্যে শিব ও দুর্গা এবং তাঁদের দু’পাশে রয়েছে দেবরাজ ইন্দ্র ও দেবর্ষি নারদ। নারদ এবং ইন্দ্রের মূর্তি পুজোর আয়োজকদের কাছে শোনা গেল, প্রসাদ বলতে আতপ চাল, নতুন ধানের চিড়ে, গুড়, ফল, মিষ্টি প্রভৃতি। গ্রামের বাসিন্দাদের কথায়, ছ’টি প্রতিমা কয়েকটি পরিবারের হলেও নবান্ন উৎসব সমগ্র গ্রাম জুড়ে পালন করা হয়।
যে সব পরিবারে পুজোর আয়োজন করে, সেই পরিবারগুলির মধ্যে অশোককুমার দাস, লতিকা দাস, কল্পনা মেহতরীরা বলেন, “তিন দিন খুব আনন্দে কাটে। সেই সাবেক রীতি মেনেই আমরা এখনও দেবী অন্নপূর্ণার পুজো করি।” তবে আনন্দের এই উৎসবের মধ্যে আক্ষেপও রয়েছে। শৈলেনচন্দ্র মেহতরী বলেন, “অনেক আগে এক সময় অন্নপূর্ণা পুজো এবং নবান্নের সময় নাটক, যাত্রা হত। এখন সে সব আর হয় না।” বছরের অন্য দিন এই গ্রামে ঢুকলে কাঁসা-পিতল পিটিয়ে বাসন তৈরির শব্দ শোনা যায়। এ দিন কিন্তু তা শোনা গেল না। তার বদলে মণ্ডপ থেকে ভেসে আসা ঢাক, কাঁসর ও ঘণ্টার শব্দ ভেসে আসছিল। যুগ যুগ ধরে এ ভাবেই তিন দিন ধরে মেতে ওঠে টিকরবেতা গ্রাম। |