সব্জির দাম মিলছে না, ক্ষুব্ধ চাষিরা
জয়ের চরে বিপুল সব্জি ফলিয়ে উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কাঁকসার অজয়পল্লির প্রায় ১৭০টি পরিবার। তাঁদের দাবি, কী ভাবে লোকসান এড়ানো যাবে, তা নিয়ে তাঁরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
খেতের কাছেই বাড়ি প্রদীপ বিশ্বাসের। স্ত্রী, ছেলে-মেয়েকে নিয়ে চার জনের সংসার। এক বিঘা জমিতে ফুলকপির চাষ করেছিলেন তিনি। জানালেন, বীজের দাম প্রায় দেড় হাজার টাকা। সার কিনতে খরচ হয়েছে প্রায় দু’হাজার দু’শো টাকা। এর সঙ্গে রয়েছে সেচের জল, কীটনাশক রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৮ হাজার টাকা খরচ, দাবি প্রদীপবাবুর। তিনি জানান, বিঘায় ৬ হাজার চারা লাগানো যায়। তার মধ্যে গড়ে পাঁচশো চারা নষ্ট হয়। আরও পাঁচশোতে ফুলকপির আকার ঠিক না। অর্থাৎ হাজার পাঁচেক ফুলকপি বিক্রি করার মতো হয়। প্রদীপবাবু বলেন, “প্রথম এক-দু’দিন কিছু দাম পেয়েছিলাম। তার পরেই বাজার পড়ে গিয়েছে। পরের দিকে কপি বিক্রি হয়েছে তিন, দুই এমনকী এক টাকায়। লাঙ তো দূরের কথা, চাষের খরচ উঠবে কি না তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় রয়েছি।”
অজয়পল্লিতে তোলা নিজস্ব চিত্র।
প্রদীপবাবুর মতোই চিন্তায় রয়েছেন চাষি রণজিৎ সরকার, বিকাশ বিশ্বাস, শ্রীদাম সরকাররা। ফুলকপি ছাড়াও তাঁরা চাষ করেছেন পটল, মুলো, লাউ, শশা ইত্যাদি। তাঁদের অভিযোগ, ৩০-৩৫ কিলোমিটার দূরে দুর্গাপুর শহরে গিয়ে বিভিন্ন বাজারে সব্জি বিক্রি করা সম্ভব হয় না। সরকারি কোনও ব্যবস্থাও নেই। ফলে পাইকারি ব্যবসায়ীরাই ভরসা। তাঁরা সরাসরি খেত থেকে ফসল কিনে নিয়ে যান। যা দাম দেন, তাই নিতে বাধ্য হন চাষিরা। অথচ ক্রেতারা বাজারে সব্জি কিনছেন প্রায় আগের মতোই চড়া দামে। অজয়পল্লির চাষিরা জানান, এখন পটল বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৫-৬ টাকা হারে। মুলো এক টাকায় দু’কেজি। লাউ তিন-চার টাকা আর শশা কেজি প্রতি চার থেকে পাঁচ টাকায়। চাষিরা জানান, এক বিঘা জমিতে পটল চাষে খরচ ১৫ হাজার টাকারও বেশি। অথচ উৎপন্ন পটল বিক্রি করে পকেটে ঢুকছে মেরেকেটে আট থেকে নয় হাজার টাকা। এর মধ্যেই এসে পৌঁছেছে পশ্চিমবঙ্গ গ্রামিণ ব্যাঙ্কের ‘সমন’।
২০০৮ সালে আলু চাষের জন্য এখানকার অনেক চাষিই ওই ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। চাষিরা জানান, সে বার আলুর মড়ক লাগায় চাষে ব্যাপক লোকসান হয়। পরের বছর রাজ্য সরকার চাষিদের থেকে সহায়ক মূল্যে মাত্র ৬ বস্তা করে আলু কেনে। অথচ বহু চাষিই কয়েকশো বস্তা করে আলু ফলিয়েছিলেন। চাষিদের দাবি, পাট চাষেও আগের মতো লাভ হচ্ছে না। তাই ব্যাঙ্কের ঋণও শোধ হয়নি। আজ, সোমবারের মধ্যে ঋণ শোধ করতে বলা হয়েছে চাষিদের। রণজিৎবাবু, প্রদীপবাবুর কথায়, “সব চাষেই ক্ষতি বেড়েছে। কী করে সংসার চালাব বুঝতে পারছি না। ব্যাঙ্কের ঋণ কী ভাবে শোধ হবে জানি না।”
পশ্চিমবঙ্গ গ্রামিণ ব্যাঙ্কের কাঁকসার শিবপুর শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, অজয়পল্লির চাষিরা ২০০৮ সালের নভেম্বরে ৪০ হাজার টাকা কৃষিঋণ নেন। সুদে-আসলে পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার টাকা। অল্প কয়েক জন সামান্য টাকা দিলেও অধিকাংশ টাকাই জমা পড়েনি। ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা যায়, ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সেই টাকা ব্যাঙ্কে জমা দিতে বলা হয়েছে চাষিদের। ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক বলেন, “অন্যথায় তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.