রবিবাসরীয় প্রবন্ধ
বেনারসে বেওয়ারিশ
‘কাশীতে সবসময়ই এত বাংলা কথা শোনা যায়, রাস্তার দেয়ালে আর দোকানের গায়ে এত বাংলাহরফ দেখা যায়, যে এক এক সময় মনে হয় বুঝি বাংলাদেশের কোনও শহরে এসে পড়েছি।’
‘একেই বলে শুটিং’,

ভারতের ছোট বড় সমস্ত শহরের চেহারাই আস্তে আস্তে যেন এক রকম হয়ে যাচ্ছে। মালপত্র নিয়ে নেমে পড়ুন যে কোনও একটা বড় রেল স্টেশনে। মূল শহরটার দিকে রওনা হন একটা রিকশায়, দেখবেন আকাশ আড়াল করা সারি সারি কোল্ড ড্রিঙ্কস আর মোবাইল কোম্পানির বিলবোর্ড; দেখবেন একই রকম চেহারার অজস্র ইজি-রিচার্জ সেন্টার আর ছোট বড় রেস্তোরাঁর সামনে সাজানো ঠান্ডা পানীয় আর মিনারেল ওয়াটারের চেনা চেনা ক্রেটবন্দি রঙিন বোতল। এমনকী পান-বিড়ির গুমটিগুলোতেও ঝুলছে সারি সারি একই চেহারার গুটখা-পানমশলা-পটেটো চিপসের প্যাকেট, অবিকল আপনার পাড়ার পান দোকানটার মতো প্রাচীন ভারতবর্ষ ক্রমে আন্তর্জাতিক হয়ে উঠল।
কাশীই বা ব্যতিক্রম হবে কেন? বেনারস সিটি স্টেশনে নেমে রিকশা চড়ে দশাশ্বমেধ ঘাটের পথে যেতে যেতে চোখে পড়ছিল পৃথিবীর প্রাচীনতম শহরটির একটা চকচকে চেহারা। একটা দুটো মন্দিরের চূড়া যে আকাশপটে প্রতীয়মান হয় না, তা নয়, কিন্তু কলকাতা বা মুম্বইয়ের মতো এ শহরেরও মুখ ঢেকেছে ঢাউস শপিং মল, ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ডের জিন্স অথবা শুটিং-শার্টিং-এর বিজ্ঞাপনে।
এই অবধি সবই স্বাভাবিক। এ রকমটাই হওয়ার কথা এবং এমনটাই হচ্ছে। কিন্তু খটকাটা লাগল কাশীর বিখ্যাত গোধূলিয়ার মোড় থেকে দশাশ্বমেধ ঘাটে যাওয়ার পথে। কই সেই এত এত বাংলা হরফ আর কোথায়ই বা সেই বাংলা বুলি? সন্দেহ হল, তবে কি চোখের ভুল? দিবারাত্র বাংলা দেখতে আর পড়তে অভ্যস্ত চোখই কি অভ্যেসবশেই ‘ওভারলুক’ করে এল বাংলা হরফগুলোকে?
ছবি: লেখক
সন্দেহ নিরসনে অ্যাবাউট টার্ন নিতে হল। হাঁটা পথে দশাশ্বমেধ টু গোধূলিয়া। সতর্ক চোখ দু’ধারে সাইনবোর্ডগুলোর দিকে আর কান পথ-চলতি লোকের কোলাহলে এবং দোকানদারদের হাঁকডাকে। এক্কেবারে কর গুনে রাখা হিসেব এ বারে বলল, নাঃ, চোখের ভুল নয়। ঘাট থেকে গোধূলিয়া পর্যন্ত পথের দু’পাশে অন্তত শ’পাঁচেক দোকানের মধ্যে বাংলা সাইনবোর্ড সাকুল্যে বারোটা। একটা ধর্মশালা, দুটো লজ, তিনটে ভাতের হোটেল, চারটে জর্দা পান-মশলার দোকান, একটা ট্যুর এজেন্সি আর একটা শাড়ির দোকান, ব্যস! পরে এর সঙ্গে যোগ করেছিলাম বিশ্বনাথ গলির আরও চারটে দোকান। বারো আর চার, একুনে হল ষোলো। আর পথচলতি ট্যুরিস্টের ভিড় থেকে এক বার ‘মা, আমি একটা ফ্রুটি খাব’, আর এক বার ‘সেজ মাইমার জন্য একটা শাড়ি নিতে হবে’ ব্যতীত কোনও বাংলা বুলি কর্ণে প্রবেশিল না। মাত্র তিরিশ বছর আগে ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এর শুটিং করতে এসে যে কাশীকে দেখেছিলেন সত্যজিৎ, তা কি তবে বেবাক বদলে গেল? এতটাই?

‘কাশীতে আসিয়া হরিহরের আয়ও বাড়িল। কয়েক স্থানে হাঁটাহাঁটি করিয়া সে কয়েকটা মন্দিরে নিত্য পুরাণ পাঠের কার্য জোগাড় করিল। তাহা ছাড়া এক দিন সর্বজয়া স্বামীকে বলিল দশাশ্বমেধ ঘাটে রোজ বিকেলে পুঁথি নিয়ে বোসো না কেন? কত ফিকিরে কত লোক পয়সা আনে, তোমার কেবল বসে বসে পরামর্শ আঁটা।’
‘অপরাজিত’,

গোধূলিয়ার মোড়টাকে বেনারসের ধর্মতলা বা শ্যামবাজার বলা যায়। পুবে সোজা চলে গেলে দশাশ্বমেধ ঘাট। ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এর শুটিং করতে গিয়ে গোধূলিয়ার মোড়ের যানজটে জর্জরিত যে রকম নারকীয় দশা দেখেছিলেন সত্যজিৎ সুখের কথা, সেটা একই রকম আছে। সৌজন্যে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন তথা ‘বেনারস নগর নিগম’। গোধূলিয়া মোড়ের দক্ষিণে খানিক গেলেই বাঙালিটোলা। পুরাণে এবং ইন্টারনেটে কাশীর ইতিবৃত্ত পর্যাপ্তই পাওয়া যায়, কিন্তু বাঙালিদের কাশীবাসের কোনও নির্ভরযোগ্য ইতিহাস লেখা হয়নি আজও।
বাঙালির কাশীবাসের ইতিহাস অতি প্রাচীন, তবে পুণ্যলোভী বাঙালির স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে কাশী মান্যতা পেতে শুরু করে অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি। পূর্ববঙ্গের নাটোরের রানি ভবানী গঙ্গা-তীরবর্তী একটা অঞ্চল (বর্তমান ভেলুপুরা ওয়ার্ড) কিনে নিলেন কাশীর রাজার কাছ থেকে, পূর্ববঙ্গ থেকে এনে বিশিষ্ট পণ্ডিত ও শাস্ত্রজীবীদের ভূমি ও গৃহদান করে একটা পৃথক বাঙালিটোলা পত্তন করলেন। তাঁরা অধিকাংশই ছিলেন ন্যায়াচার্য, সাহিত্যাচার্য, তর্কবাচস্পতি, তর্কচূড়ামণি প্রমুখ। তাঁদেরই পিছু পিছু এলেন ব্যবসায়ী, পূজারী ব্রাহ্মণ, কুমোর, ময়রা, নানা শ্রেণির ভাগ্যান্বেষী। আজকের কাশীর অনেকটাই গড়ে তুলেছিলেন তাঁরাই। স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, লাইব্রেরি।
কাশীর বাঙালিদের প্রকৃত সুদিন এল ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে কলকাতার নব উদ্ভূত ধনী সম্প্রদায় যখন গঙ্গার পাড় ধরে আপন-আপন মহল বানাতে শুরু করল। উদ্দেশ্য ছিল, বৎসরান্তে কাশী ভ্রমণে পুণ্য লাভ আর বৃদ্ধ পিতামাতার মোক্ষ লাভের বন্দোবস্ত। বেনারস সেই সময় গমগম করত ক্ষীণদেহী বাঙালির শার্দূল-বিনিন্দিত স্বরে। ১৯৭১-৭২ পর্যন্ত কাশীতে বাঙালিদের আগমন এবং জাঁকিয়ে বসা অব্যাহত থেকেছে। শেষের দিকে বাঙালিটোলায় আর কেনার মতো জমি-বাড়ি অবশিষ্ট ছিল না। তখন ভাড়াটিয়া রাজ। ভাড়া পড়তে শুরু করে কলকাতার ধনী বাবুদের পড়ে থাকা ফাঁকা বাড়িগুলোয়। বনেদিয়ানার স্থাপত্য চিহ্নিত মহলগুলি তখন দশ টাকা বারো টাকা ভাড়ার ‘বারো ঘর এক উঠান’-এর মচ্ছবতলায় পরিণত হয়েছে। তবু সেখানে তখনও যা শোনা যেত, তা তো বাংলার মানুষদেরই সমবেত কিচিরমিচির।

‘গণেশ কার? ঘোষাল ফ্যামিলির। ফ্যামিলি তিন জায়গায় ভাগ হয়ে গেছে। বড় ছেলে বিলাইতে ডাকটর, ছোট ছেলে উমানাথ কলকাতায় কেমিক্যালস, আর বাবা বেনারসের উকিল, এখুন প্রাকটিস ছেড়ে দিয়েছে।’
— মগনলাল মেঘরাজ

কাশীতে এখন মোটের ওপর বাঙালির সংখ্যা তা হলে কত? প্রশ্নটা শুনে বড়ই বিভ্রান্ত হয়ে পড়লেন ‘গুন্ডাদার চায়ের দোকান’-এ সকালের আড্ডায় বসা জনা পাঁচেক বাঙালি ভদ্রলোক। প্রায় সকলেই চাকুরিজীবী। ছুটির সকালে জমিয়ে বসেছেন বাঙালিটোলার গলির-গলি-তস্য-গলির ভিতরে পুরনো চায়ের দোকানে। এঁদের উদ্যোগে এলাকায় বছরে একটা দুর্গাপুজো আর প্রতিদিন চায়ের টেবিলে অনেক রাজা-উজির বধ হয়ে থাকে। অনেক ভেবে এঁদেরই এক জন বললেন, ‘খুব বেশি হলে হাজার চল্লিশেক হবে।’ সে কী! মাত্র বছর তিরিশেক আগেও তো কাশীতে কম করে দেড় লাখ বাঙালি ছিল! তা হলে আরও তিরিশ বছর পর সংখ্যাটা কোথায় দাঁড়াবে? এই নাকি বাঙালির ‘দ্বিতীয় বাসভূমি’? উগান্ডায়ও বোধ হয় এর চেয়ে বেশি বাঙালি আছে!
‘সব ভেগে গেছে, স-অ-অ-ব। এই নোংরা ঘিঞ্জি শহরে কে আর পড়ে থাকতে চায় বলুন? সে কালের বাঙালির ছেলেপুলেরা সব চাকরিবাকরি নিয়ে বাইরে চলে গেছে। মেয়ের বিয়েও কেউ আর কাশীতে দেয় না। পাত্র খোঁজে কলকাতায়। আমারই তো দুই ভাই বিদেশে চাকরি করে। আমিই শুধু কাশীর মায়া কাটাতে পারলাম না এ জীবনে।’ বলছিলেন পাঁড়েজি ধর্মশালার ম্যানেজার দেবাশিস ভট্টাচার্য। নিষ্ঠাবান সাত্ত্বিক প্রবীণ মানুষটি থাকেন দশাশ্বমেধ ঘাটের ঠিক ওপরেই তিন তলা হলুদ রঙের বাড়িটায়। নিজেদেরই বাড়ি। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা ভোরবেলায় গঙ্গাস্নান করেন। ভটচাজ্ মশাইয়ের কাছেই জানা গেল, বাঙালিটোলার পুরনো ঘাট লাগোয়া বাড়িগুলো একে একে সব বিক্রি হয়ে হোটেল বা লজ হয়ে যাচ্ছে। কলকাতাস্থিত মালিকরা আর ওই তিন পুরুষের ‘লায়াবিলিটি’ বয়ে চলতে নারাজ। রেন্ট কন্ট্রোল মারফত পাওয়া দশ-বিশ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে ওই বোঝা বয়ে চলে কী-ই বা লাভ? তিরিশ লাখের বাড়ি তিন লাখে বেচে দিয়ে দায় মেটাচ্ছেন তাঁরা। ভাড়াটেদের তুলতে স্থানীয় পেশিশক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে পুরোদমে। উৎখাত হওয়া অথবা সামান্য সচ্ছল হয়ে স্বেচ্ছায় সরে যাওয়া বাঙালিরা এখন জমি-বাড়ি কিনে বসত গড়ছেন শহরের বাইরে বৃহত্তর কাশীতে ক্যান্টনমেন্ট, ডিজেল লোকোমোটিভ কলোনি, সারনাথ ইত্যাদি ‘পশ’এলাকায়। এগুলোই এখন কাশীর সল্ট লেক। মাস্তানদের দিয়ে আংশিক বা সম্পূর্ণ দখল করে ফেলা বাঙালিদের বনেদি বাড়ির সংখ্যা কাশীতে অগুনতি। ‘কুচবিহার কালীবাড়ি’ দখলমুক্ত করতে অনেক ঘাম ঝরিয়েছেন, এখনও ঝরিয়ে চলেছেন কাশীর বঙ্গীয় সমাজের সম্পাদক দেবাশিস দাস। কলকাতাতেও ছুটেছেন অনেক বার, নেতা-নেত্রীদের কাছে দরবার করতে। লাভ হয়নি বিশেষ। স্থানীয় একটি হাসপাতালের কর্মী দেবাশিসবাবুর উদ্যোগে প্রতি বছর বাঙালিদের নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হয়। একটা ‘বাংলা মেলা’ও হচ্ছে পাঁচ বছর। তবে, এ সবই কাশীর বাঙালিদের টিকে থাকার লড়াই।

‘কানুকে বল্লাম, নিয়ে চল ভাই গুপীনাথপুর, মাথায় থাকুন বাবা বিশ্বনাথ মুংলি কোথায়? ওকে কচি বাঁশপাতা খাওয়াব নিজের হাতে, স্বপ্ন দেখিচি।’
— ‘দ্রবময়ীর কাশীবাস’,

অতএব কাশীর বাঙালির হাতে রইল পেন্সিল সাহিত্য আর সংস্কৃতি। ব্যবসাপাতির পালা প্রায় চুকে যাওয়ার উপক্রম, ছোটবড় সব ব্যবসাই দখল করে নিচ্ছে বাঘা-বাঘা বেওসাদারেরা। টিমটিম করে টিকে আছে যে ক’টি, তাদেরও বেলা ফুরিয়ে এল প্রায়। বিশ্বনাথ গলিতে সওয়া-শো বছরের পুরনো দোকান ‘দাশগুপ্তের জর্দা’র মালিক শঙ্কর দাশগুপ্ত সে কথাই বলছিলেন আক্ষেপের স্বরে। ঠাকুরদা জগন্নাথ দাশগুপ্ত পূর্ববঙ্গ থেকে এসে এই দোকান করেছিলেন, আর তিনি চোখ বুজলেই যে এই দোকান চিরতরে বন্ধ যে হয়ে যাবে, সে ব্যাপারে শঙ্করবাবু নিশ্চিত। কারণ, নতুন প্রজন্ম একেবারেই ব্যবসাবিমুখ। ‘আমার ছেলে এই পানমশলা আর জর্দার ব্যবসা করবে ভেবেছেন? পাগল নাকি! সে বাবু সফ্ট ইঞ্জিনিয়ারিং শিখছে। চাকরি করবে কোনও প্রাইভেট কোম্পানিতে।’ একই আক্ষেপ ‘ইম্পিরিয়াল টি কোম্পানি’ নামের চায়ের দোকানটির মালিক সত্যেন চট্টোপাধ্যায়ের গলাতেও, ‘দূর দূর, কাশীর বাঙালি ওই পত্রিকা, যাত্রাপালা আর দুগ্গাপুজো নিয়েই থাকুক। পকেটের জোর না থাকলে কলজের জোরটাও যে ক্রমশ কমে যায়, সেটা এদের কে বোঝাবে বলুন দেখি?’
আলাপ করার ইচ্ছা ছিল কাশীর বাঙালিদের মধ্যে সবচেয়ে প্রবীণ এবং পণ্ডিত মানুষটির সঙ্গে। কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করে অবসরপ্রাপ্ত মানুষটি সম্পর্কে সুধীর চক্রবর্তী লিখেছেন: ‘বিশ্বনাথ ভট্টাচার্যের বাড়িতে ক’দিন বসবাস করে বুঝলাম তিনি সাত্ত্বিক ব্রাহ্মণ, নিরামিষাশী, শিখাধারী, কিন্তু আদ্যন্ত আধুনিকমনস্ক জ্ঞানব্রতী। তাঁর সঙ্গে স্বচ্ছন্দে অনেক কথা বলা যায়।... স্মৃতিশক্তি অবাধ এবং শাস্ত্রজ্ঞান বেশ মজবুত। শুনে শুনে তিনি এখনও অনেক বই আয়ত্ত করছেন এবং ‘বঙ্গ সাহিত্য’ পত্রিকাটি যথোচিত আগ্রহে ও শ্রমে নিয়মিত প্রকাশ করেন।’ এ হেন মানুষটিকে হাতের কাছে পেয়ে কাশীতে বাঙালির এই দুরবস্থার বিষয়ে মত জানতে চাইলাম।
‘আসল কারণটা হল এখানকার বাঙালিদের উন্নাসিক মনোবৃত্তি, নিজেদের বুদ্ধিজীবী বলে বড়াই করার আত্মঘাতী প্রবণতা।’ বললেন বিশ্বনাথবাবু, ‘কাশীর বাঙালি কোনও দিনই অখিল ভারতীয় চরিত্রটা অর্জন করতে আগ্রহী হয়নি, মিশতে চায়নি অন্য সব প্রদেশের মানুষজনের সঙ্গে। কাশীর বাঙালি আজও নিজেদের প্রবাসী বাঙালি হিসেবেই ভাবতে ভালবাসে, তিন বা চার পুরুষ ধরে এখানে বসবাসের পরও!’ একটু থামলেন বিশ্বনাথবাবু, তার পর হেসে বললেন, ‘এক সময় কাশীতে বাঙালিরা আসত শেষ বয়সে। এখানে মরলে নাকি শিবপ্রাপ্তি ঘটে, তাই। তা এখন তো কাশীর গলিতে গলিতে লাইফ ইনশিয়োরেন্সের এজেন্ট, বাঙালি আর কেন মরতে আসবে কাশীতে?’ শেষ বিকেলের পড়ন্ত আলোয় তাঁর হাসিটাকে বড় ম্লান আর বিষণ্ণ দেখাল।

ও হ্যাঁ, তালেগোলে বলতে ভুলেছি আর একটা জরুরি কথা। বেনারসে বাঙালি পর্যটকের সংখ্যাও গত দুই দশকে কমতে কমতে ইদানীং তলানিতে এসে ঠেকেছে। প্রতিদিন বাস বোঝাই করা পর্যটক এখানে আসছে সুদূর ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জাপান, কোরিয়া আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আসছে অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল, তামিলনাড়ু থেকেও। কচৌড়ি গলির রাবড়ি খেয়ে বা রাজেন্দ্রপ্রসাদ ঘাটের জাঁকজমকের আরতি দেখেও তাই মন ভরল না আর। একরাশ মন-খারাপ নিয়ে কাশীকে বিদায় জানাবার প্রস্তুতি নিচ্ছি, হঠাৎই আলাপ হয়ে গেল মুকেশ ভরদ্বাজের সঙ্গে। উত্তরপ্রদেশীয় যুবক, কাশীতে একটা ছোট ট্রাভেল এজেন্সি চালান, সাইট-সিয়িং করান পর্যটকদের। সেই সূত্রেই এক বার নেহাতই বেড়াতে আসা হাওড়র মেয়ে মালবিকার সঙ্গে আলাপ, প্রেম। মালবিকা আজ মুকেশের ঘরনি। হাওড়ায় গিয়ে তাঁকে বিয়ে করে এনেছেন মুকেশ। বউয়ের ইচ্ছেতেই নিজের এজেন্সির নাম রেখেছেন ‘বাবা লোকনাথ ট্রাভেলস’। বাংলা বলেন চমৎকার, স্বচ্ছ, সুন্দর।
মুকেশকে অভিনন্দন জানালাম। তাঁর স্ত্রী-ই সম্ভবত সেই শেষ বাঙালিনি, যিনি স্বেচ্ছায় এবং ভালবেসে কাশীবাসিনী হয়েছেন। নিকষ এক অন্ধকারের মধ্যে ওইটুকুই যা ক্ষীণ আলোর রেখা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.