|
|
|
|
|
আপনার ভেতর চমকে উঠবেই |
শীতে এলেই ত্বক তার লাবণ্য খুইয়ে বসে। ধুলো-ময়লা মেখে যেন কালো মাটি।
সানস্ক্রিন, বডি অয়েল, দুধ-স্নান। এই দিয়েই জেল্লা ফেরান। যাজ্ঞসেনী |
অক্টোবর বিদায় নিলেই আমরা কেমন মুষড়ে পড়ি। যাহ্, এত আনন্দ-হইচই সব ফুরিয়ে গেল? তার পরই নভেম্বর শেষ হতে হতে, যেই না ভোরের দিকে কাঁপুনি মতো লাগে, ব্যাপারটা মনে পড়ে যায়। এই তো শীত এসে গেছে। বড়দিন, বর্ষনবীন, পিকনিক মিলিয়ে সেও কিছু কম হল্লাবাজ নয়। নবোদ্যমে সাজগোজের ছক কষি। উত্তুরে হাওয়ার দাপট বাড়ে, আমরা খুব সচেতন হয়ে, ক্রিম-তেল-ময়েশ্চারাইজার মেখে ঘুরি। যাক বাবা, ত্বকের শুকনো হওয়া সামলে দেওয়া গেছে। কিন্তু একটা সমস্যা থেকেই যায়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একটু খটকা লাগে, একটু কালো মতো লাগছে নাকি আমাকে? এই রে, চিন্তা, চিন্তা, গভীর চিন্তা!
শীতে এই অবাঞ্ছিত কালচে ছোপ পড়ার কারণ বহুবিধ। আর প্রত্যেকটি কারণের পিছেই আছে তার সমাধান। পুরো যোগ-বিয়োগটা খুব মন দিয়ে বুঝে নিন।
|
স্নানকে ভয় পেলে চলবে? |
গরমকালে বাথটাবে ভাসতে, শাওয়ারের তলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গান গাইতে বড় আনন্দ। যতই জল গরম করুন, ঠিক সেই মজা শীতকালীন স্নানে বিলক্ষণ নেই। বিশেষত তাপমাত্রা নামলে স্নান বাদ দেওয়ার একটা প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু, ত্বকের ওই ময়লা হওয়ার অন্যতম কারণ হল, এই সময় ত্বক নিয়মিত ভাবে পরিষ্কার করা হয় না। স্নানের জলে একটু বাটারমিল্ক মিশিয়ে নিন। স্নানের সময় হুড়োহুড়ি করবেন না। ত্বক যাতে বাটারমিল্ক শুষে নিতে পারে, সেই সময়টুকু অন্তত দিন। এতে ত্বক যেমন নরম হবে, তেমনই উজ্জ্বলও দেখাবে।
সাবান বাছাই করুন ভেবেচিন্তে। শীতের সাবান বলতে গ্লিসারিন সোপ বোঝায় ঠিকই, কিন্তু অনেক সময় গ্লিসারিন সাবানে সহজে ফেনা হয় না, ময়লা ওঠে না। ভাল গ্লিসারিন সাবান কিনুন, ফেনা না হোক, অন্তত যাতে পাতলা একটা আস্তরণ পড়ে সেটুকু খেয়াল রাখবেন। গ্লিসারিন ছাড়া ঘন ময়েশ্চারযুক্ত নরম সাবানও শীতে ব্যবহার করাই যায়। আর জাঁকিয়ে শীত পড়লেও দিনে দু’বার স্নান করা বাধ্যতামূলক।
|
শুষ্ক ত্বকই কালচে দেখায় |
শীতের প্রধান সমস্যাই হল বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়া। এ দিকে ত্বক শুকিয়ে গেলেই কুঁচকে যায়, আর তখনই তার স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য চলে যায়। ফলে কালচে দেখায়। সমাধান হল, ত্বককে যতটা সম্ভব আর্দ্র রাখার চেষ্টা করতে হবে। স্নানের আগে নারকেল তেল মাখা ভাল অভ্যাস। কিন্তু স্নানের সময় ওই তেল যে ধুয়ে যায়, এটাও সত্যি। সে ক্ষেত্রে স্নানের জলে কয়েক ফোঁটা তেল ফেলে দিন। এতে ত্বকের রোমকূপে তেল বসবে। আর স্নান করেই গা ঘষে ঘষে মুছবেন না। একটা মোটা নরম তোয়ালে দিয়ে নিজেকে মুড়ে নিন। তোয়ালে জল শুষে নেবে, বাষ্পীভূত না হওয়ার কারণে ত্বককে শুকনো করে দেবে না। আর ভিজে ভাব থাকতে থাকতেই বডি অয়েল লাগিয়ে নেবেন। বডি অয়েলে ভিটামিন ই, নিম-হলুদ থাকলে খুবই ভাল হয়। এতে ত্বক প্রাকৃতিক নিয়মেই উজ্জ্বল দেখাবে।
যাদের ত্বক জন্মগত ভাবেই শুষ্ক, তাদের ঝঞ্ঝাটটা বেশি। এঁদের দিনে অন্তত চার বার অ্যালোভেরা সমৃদ্ধ বডি লোশন, ময়েশ্চারাইজার ও ফেস ক্রিম ব্যবহার করা দরকার। অতি শুষ্ক ত্বকে শীতে একটি আশ্চর্য অসুখ দেখা যায়। ত্বক শুকিয়ে মাছের আঁশের মতো হয়ে যায়। এই সমস্যায় ঘরে পাতা টক দই বা মাখন লাগালে উপকার পাবেন। তবে সম্পূর্ণ নিরাময়ের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
|
স্ক্রাবিং ও এক্সফোলিয়েশন |
শীতে ত্বকে মরা কোষ বেশি জমে, ত্বক অনুজ্জ্বল, নিষ্প্রভ হয়ে যায়। আর তেল-ময়েশ্চারাইজার-পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করলে তাতে বাইরের ধুলো আটকে যায়। চেহারায় কালচিটে একটা পরত পড়ে। এই ট্যান তোলার সেরা উপায় হল নিয়মিত এক্সফোলিয়েশন। স্ক্রাব করলে মরা কোষ উঠে যাবে, নতুন কোষ জন্ম নেবে।
কমলালেবুর খোসা একটি প্রাকৃতিক ব্লিচ। ওই খোসা বেটে স্ক্রাব করলে চোখে পড়ার মতো উপকার পাবেন। আর স্নানের সময় ছোবড়া ব্যবহার করে সারা শরীরের মৃত কোষ তুলে ফেলুন। দেখবেন কেমন পরিষ্কার দেখায়।
শীতে সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে গেলে, ত্বকের ট্যান বেশি চোখে পড়ে। এক্সফোলিয়েটিং লোশন ব্যবহার করলে ওই ট্যান তাড়াতাড়ি দূর হবে।
|
শীতেও সানস্ক্রিন জরুরি |
শীতের রোদ্দুর যতই মিঠে লাগুক, কালো করতে ওস্তাদ। দশটা-পাঁচটায় বাইরে বেরোলে, ফুলহাতা জামার সঙ্গে কানাওয়ালা হ্যাট ও সানগ্লাস পরে নিন। ময়েশ্চারাইজার কেনার সময় দেখে নিন তাতে ৩০ এসপিএফ সান প্রোটেকশন রয়েছে কিনা। তাতে ত্বক যেমন আর্দ্রতা হারাবে না, তেমনি কালচে ছোপও পড়বে না।
অনেক সময় দেখা যায়, ত্বকের যে অংশ বেশি রোদের সংস্পর্শে আসে, আবৃত অংশের থেকে চোখে পড়ার মতো কালো দেখাচ্ছে। একটা ট্যানিং লাইন পর্যন্ত স্পষ্ট বোঝা যায়। গরম জলে বেকিং সোডা মিশিয়ে আলতো করে ওই ট্যান লাইন বরাবর বুলিয়ে নিন। ওই দাগ ধীরে ধীরে চলে যাবে।
|
পুনশ্চ |
ভাল গ্লিসারিন কখনওই ত্বককে কালো করে না। বরং গ্লিসারিনে অল্প গোলাপজল মিশিয়ে লাগালে ত্বক ভাল থাকে।
গাজরে বিটা ক্যারোটিন থাকে। তাই রস করে লাগালে কালচে ভাব দূর হয়, ত্বক ভিতর থেকে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। |
|
|
|
|
|