প্রশাসনের সায় লাগবে ছুটিতে, ক্ষুব্ধ ডাক্তাররা
জেলা স্তরে চিকিৎসক, সুপার, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের ছুটি নেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম চালু করে বিতর্কের মুখে পড়ল স্বাস্থ্য দফতর। পরিস্থিতি এমনই যে কর্মবিরতি থেকে চাকরিতে ইস্তফা, সব রকম হুমকিই দিচ্ছেন সরকারি ডাক্তারদের একটা বড় অংশ।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কাজের জায়গা (হেড কোয়ার্টার্স) ছেড়ে বাইরে যেতে হলে জেলা ও মহকুমা হাসপাতালের সুপারদের সংশ্লিষ্ট রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অর্থাৎ জেলাশাসক বা মহকুমা শাসকের আগাম অনুমতি নিতে হবে। ব্লক মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকরাও জেলাশাসকের অনুমতি ছাড়া এলাকা ছাড়তে পারবেন না। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা অবশ্য সুপারের অনুমতিতে ছুটি নিতে পারবেন, কিন্তু সে ক্ষেত্রেও সুপারকে সেই আবেদন জেলাশাসক বা মহকুমা শাসকের কাছে পাঠাতে হবে।
এতেই ‘মর্যাদাহানি’র অভিযোগ তুলে কোমর বেঁধেছেন চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ। তাঁদের প্রশ্ন, স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের বাদ দিয়ে কেন সাধারণ প্রশাসনকে ছুটির তথ্য জানাতে বাধ্য থাকবেন তাঁরা?
কিছু দিন আগে স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র একটি সার্কুলার জারি করেন। যার মূল বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাস্থ্য দফতরে জেলা স্তরে সমন্বয় বাড়ানোর জন্য কিছু পরিবর্তন চান। সেই অনুযায়ী, ছুটি নেওয়ার নিয়ম পরিবর্তিত হচ্ছে।
চিকিৎসক মহলের একটা বড় অংশের বক্তব্য, সরকারি চাকরির নিয়ম অনুযায়ী স্বাস্থ্য দফতরের মতো একটি স্বাধীন দফতরে বিভিন্ন স্তরে কন্ট্রোলিং অফিসার রয়েছেন। হঠাৎই একটি নির্দেশ জারি করে তা কেড়ে নেওয়া অগণতান্ত্রিক এবং সার্ভিস রুল-এর পরিপন্থী। এই ভাবে চলতে থাকলে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি তো দূরের কথা, তা বড়সড় ধাক্কা খাবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। এক জেলা হাসপাতালের সুপার বলেন, “কোনও যুক্তি ছাড়াই আচমকা কাউকে মাথার উপরে বসিয়ে দেওয়ার এই প্রবণতা খুবই খারাপ। এর বিহিত না হলে অনেকেই পদত্যাগ করবেন।” জেলার এক মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, “এই নির্দেশকে আমরা স্পষ্ট অপমান বলে মনে করছি। এর পর হয়তো কোনও দিন বলা হবে মেডিক্যাল কলেজগুলির যে কোনও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের জন্যও আমাদের জেলাশাসকের উপরেই নির্ভর করতে হবে। এত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার পরেও যদি এই অসম্মান মেলে, তা হলে পদত্যাগ করাই ভাল।”
স্বাস্থ্য সচিব অবশ্য এর মধ্যে ‘অবমাননা’র যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না। তাঁর মন্তব্য, “কাউকে ছোট করে কাউকে বড় করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। ছুটির ক্ষেত্রে একটা সাধারণ নিয়ম মানা হলে কাজের সুবিধা হয়। রোগীদের ভোগান্তিও কমে। সেই কারণেই এই নতুন ব্যবস্থা। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জেলা স্তরে ত্রিস্তরীয় ব্যবস্থা চালু করতে উদ্যোগী হয়েছেন। সেই অনুযায়ীই জেলাশাসক, মহকুমা শাসক, বিডিওদের এই প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।” চিকিৎসকেরা যেমন সুপার বা অধ্যক্ষের কাছে অনুমতি চান, তেমনই সুপার, অধ্যক্ষ এবং ব্লক মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।
স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা অবশ্য মনে করছেন, কাউকে কিছু না জানিয়ে হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকাটা এক শ্রেণির চিকিৎসকের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু চিকিৎসক নন, সুপার, অধ্যক্ষ ও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকরাও মর্জি মতো দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকেন। জেলার হাসপাতালগুলিতে স্বাস্থ্য ভবন থেকে যথাযথ নজরদারির অভাবেই এই ‘অনিয়ম’ দিনের পর দিন চলতে পেরেছে। এ বার সেই ব্যবস্থাকেই ‘শৃঙ্খলায়’ বাঁধতে চাওয়া হচ্ছে বলেই এত সমস্যা। এক কর্তা বলেন, “মৌচাকে ঢিল মারা হয়েছে বলেই এত প্রতিবাদ।”
অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস-এর তরফে গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, “দায়বদ্ধতা অবশ্যই থাকবে। কিন্তু সেটা স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে। ডব্লিউবিসিএস, আইএএস অফিসারদের কাছে ছুটি চাইতে হবে কেন? এতে সমন্বয় তিল মাত্র বাড়বে না, উল্টে জটিলতা বাড়বে।” সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম-এর সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, “কোনও মেডিক্যাল কলেজে র অধ্যক্ষ কেন জেলাশাসকের অনুমতি নেবেন বা ব্লক মেডিক্যাল স্বাস্থ্য আধিকারিক কেন বিডিও-র কাছে ছুটি চাইবেন, তা বোধগম্য হচ্ছে না। এঁরা সম-মর্যাদার। এটা অত্যন্ত অবমাননাকর।” তৃণমূল প্রভাবিত চিকিৎসক সংগঠন প্রোগ্রেসিভ সার্ভিস ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নিমাই নাথ বলেন, “সুপার বা সিএমওএইচ-এর অনুপস্থিতিতে জেলা হাসপাতালে কোনও গোলমাল হলে জেলাশাসক বা পুলিশ সুপারকেই তো সেটা সামলাতে হয়। তাই ছুটিতে গেলে জানিয়ে আসাটা খুবই জরুরি। তবে অনমুতি নেওয়ার বিষয়টি না থাকলেই হয়তো ভাল হত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.