রাজ্যে নবম-দশম শ্রেণি পর্যন্ত মিড-ডে মিল চালু করা হবে বলে শুক্রবার হুগলিতে ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, তাঁর আরও ঘোষণা, রাজ্যে আলু ছাড়া, অন্য সব্জির জন্যও বেশ কিছু হিমঘর তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
রাজ্যের স্কুলে এখন মিড-ডে মিল দেওয়া হয় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। অন্য শ্রেণিতে তা দেওয়া হবে না, বিভিন্ন সময়ে নানা মহলে সেই প্রশ্ন উঠেছে। এ দিন নবম-দশমের পড়ুয়াদের জন্য মিড-ডে মিল চালুর কথা ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, “এটা সারা দেশে নজির।”
সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে রাজ্যে হিমঘরের সংখ্যা প্রায় ৫৫০টি। যার বেশির ভাগই আলু মজুতের জন্য ব্যবহার হয়। কিন্তু অন্য সব্জি মজুত করার জন্য হিমঘর প্রয়োজন বলেও দাবি কৃষিজীবীদের। কারণ, অনেক শাক-সব্জি খেত থেকে তোলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই সমস্যা মোকাবিলায় আরও হিমঘর গড়ার কথা ভাবছে রাজ্য। |
আলু চাষে ‘অগ্রণী’ হুগলিতে এসে মমতা এ দিন বলেন, “হিমঘরে আলু রাখার সময়সীমা ইতিমধ্যেই পনেরো দিন বাড়িয়েছে রাজ্য।” রাজ্যের হিমঘরগুলি থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আলু বার করে নেওয়ার কথা। কিন্তু এ বছর আলুর ফলন ভাল হয়েছে। এখনও প্রচুর আলু হিমঘরে মজুত আছে। এ দিকে, জানুয়ারি মাসের গোড়ার দিক থেকেই নতুন আলু হিমঘরগুলিতে আসতে শুরু করবে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার বেসরকারি হিমঘরগুলিকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আলু বার না করতে অনুরোধ করেছে। এই পনেরো দিনের জন্য হিমঘরগুলিকে ভর্তুকিও দেবে রাজ্য। খরচ হবে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। চাষিদের ‘স্বার্থে’ রাজ্য এই টাকা মঞ্জুর করবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর এ দিন হুগলি জেলা সফরের উদ্দেশ্য ছিল, প্রশাসনিক বৈঠক। বৈঠকে উন্নয়ন-প্রক্রিয়ায় গতি আনতে সরকারের বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে প্রশাসনের নিচুস্তর পর্যন্ত ‘সমন্বয়সাধনে’ তিনি কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন হুগলি জেলা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের সেই কথাটাই ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন মমতা। ডানকুনিতে ওই বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “এখন জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, বিডিও কারও সঙ্গে কারও কাজের সমন্বয় নেই। আগে (বামফ্রন্টের আমলে) এটা ছিল না। আমি সেই চেষ্টাই করছি।” বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয় গড়ার জন্য প্রশাসনের কর্তাদের আরও ‘সচল’ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, “ডিএম, এসডিও, বিডিওদের আরও বেশি করে ঘুরতে হবে। ঘরে বসে থাকলে চলবে না।”
মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও এ দিনের বৈঠকে হাজির ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মনীশ গুপ্ত, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, মদন মিত্র-সহ ৯ জন মন্ত্রী। হুগলির জেলাশাসক, চার মহকুমাশাসক এবং বিডিও-রা ছাড়াও জেলার একাধিক বিধায়কও ছিলেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, বৈঠকে জেলার স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন অভিযোগ জানান বিধায়কেরা। মমতা পরে বলেন, “হাসপাতালগুলির পরিকাঠামো নিয়ে সমস্যা আছে। কোথাও শুধু
বাড়িটুকুই আছে। না আছে নার্স, না আছে ডাক্তার। আমি স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে বলেছি, এ ব্যাপারে জেলাশাসকদের সঙ্গে কথা বলতে।” হুগলি জেলায় তীর্থকেন্দ্রগুলির (কামারপুকুর, ফুরফুরাশরিফ প্রভৃতি) মানোন্নয়ন করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। |