|
|
|
|
ভাড়া আদায় নিয়ে জটিলতা |
জেলা প্রশাসন ও পুরসভার সংঘাত পুরুলিয়ায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • পুরুলিয়া |
সাহেব বাঁধ সংস্কারের দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে জেলা প্রশাসন ও পুরুলিয়া পুরসভার মধ্যে সংঘাত দেখা দিয়েছিল। এ বার সেই দু তরফের সংঘাত দেখা দিল বাসস্ট্যান্ড থেকে ভাড়া আদায় করার জন্য যন্ত্রচালিত গেট বসানোকে ঘিরে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাসস্ট্যান্ড কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাসস্ট্যান্ডের চারটি পথে যন্ত্রচালিত গেট উদ্বোধনের সময় জেলাশাসক ও পুরপ্রধানের উপস্থিতিতে প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন তৃণমূলের কয়েক জন কাউন্সিলার। তাঁদের অভিযোগ, আলোচনা না করেই প্রশাসন এই গেট হসিয়ে এক তরফা ভাবে বাসস্ট্যান্ডে রিকশা, মোটরবাইক ঢুকলেই দু’টাকা করে আদায় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রশাসনের আধিকারিকদের পাল্টা দাবি, বাসস্ট্যান্ড কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ সব করা হয়েছে। পুরপ্রধান স্বয়ং ওই কমিটির সদস্য।
পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডের দুরাবস্থা নিয়ে বার বার অভিযোগ উঠেছে। তাই বাসস্ট্যান্ডের হাল ফেরানোর জন্য বাসস্ট্যান্ডে আসা যানবাহনগুলি থেকে ভাড়া আদায় করার সিদ্ধান্ত নেয় বাসস্ট্যান্ড কমিটি। ওই কমিটির চেয়ারম্যান পদাধিকার বলে জেলাশাসক। পুরপ্রধান, বাস মালিক সমিতি, প্রশাসনের আধিকারিকরা সদস্য। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রশাসন বাসস্ট্যান্ডে টানা ৭২ ঘণ্টা সমীক্ষা চালায়। দেখা যায়, প্রতিদিন গড়ে ২০০০ ঠেলা-রিকশা ও ৩৫০টি বাস সেখানে ঢোকে। ওই যানবাহনগুলি থেকে ভাড়া নেওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ডের চারটি প্রবেশ পথে যন্ত্রচালিত গেট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাসস্ট্যান্ড কমিটি। বাস পিছু দৈনিক ১৫ টাকা এবং ঠেলা-রিকশা ও মোটরবাইক পিছু ২ টাকা ভাড়া ঠিক করা হয়। এই ভাড়া নেওয়ার বিষয়টিতেই বেঁকে বসে তৃণমূলের কাউন্সিলাররা।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাসস্ট্যান্ডের মালিকানা প্রশাসনের হলেও এত দিন তা দেখোশানা করত পুরসভা। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডের বেহাল অবস্থা নিয়ে নানা মহল বিরক্তি প্রকাশ করে। জেলাশাসক জানান, বাসস্ট্যান্ড দেখাশোনার জন্য পুরসভার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছিল বলে পুরকর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল। |
|
বাসস্ট্যান্ডে এই যন্ত্রচালিত গেট বসানো নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত। ছবি: সুজিত মাহাতো। |
তাঁরা প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছিলেন। এর পরেই বাসস্ট্যান্ডের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন নিয়ে প্রশাসন চিন্তা ভাবনা শুরু করে। বৃহস্পতিবার যন্ত্রচালিত গেটের উদ্বোধনের সময় বাসস্ট্যান্ডেই বাধার মুখে পড়তে হয় জেলাশাসককে। তৃণমূলের কাউন্সিলার প্রদীপ মুখোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, “এক শ্রেণির আধিকারিক আমাদের সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলার জন্যেই এ রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” প্রশাসনের এক আধিকারিকের পাল্টা বক্তব্য, “ভাড়া আদায় করার জন্য কিছু কর্মসংস্থান তো সৃষ্টি হল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা বলছেন।”
এই বিতর্কের আঁচ ছুঁয়েছে পুরপ্রধান ও জেলাশাসকের মধ্যেও। পুরপ্রধান তৃণমূলের তারকেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা উন্নয়নের বিপক্ষে নই। তবে যেহেতু পুরসভা এত দিন বাসস্ট্যান্ডের দেখাশোনা করত, তাই পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ব্যাপারে আগে আলোচনা করা উচিত ছিল।” জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহের পাল্টা জবাব, “প্রশাসন থেকে একতরফা এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বাসস্ট্যান্ড কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” পুরপ্রধান দাবি করেন, “আমরা ওই গেট আপাতত বন্ধ রাখতে বলেছি। জেলার মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তারপরে যা হওয়ার হবে।”
জেলাশাসক বলেন, “কোনও প্রস্তাব এলে অবশ্যই তা নিয়ে আলোচনা চলতে পারে। তবে এটা কোনও বেআইনি কাজ নয়। তাই এই ব্যবস্থা বন্ধ করার প্রশ্নই নেই।” ঘটনা হল বৃহস্পতিবার থেকেই বাসস্ট্যান্ডে ভাড়া আদায় করা শুরু হয়েছে। শান্তিরামবাবু বলেন, “শীঘ্রই বৈঠকে সব পক্ষকে ডেকে মীমাংসা করা হবে।” রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বিষয়টি আমার কাছে এলে দু’পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব। দল নয়, আমাদের কাছে উন্নয়নই অগ্রাধিকার পাবে।” |
|
|
|
|
|