শনিবারের নিবন্ধ
নৃশংস খুনি এবং দাতা
‘কে জে আই’।
এই নামেই মোবাইলে সেভ করা তাঁর নাম।
তিনি মাল্লোজুলা কোটেশ্বর রাও। ওরফে কিষেণজি।
অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান নন। বাঙালি সাংবাদিকেরা গত কয়েক বছরে সব থেকে বেশি এঁর কাছেই পৌঁছতে চেয়েছেন। আমরাও সেই দলেই ছিলাম।
যা যা করা যায় ওঁর কাছে পৌঁছনোর জন্য সব করেছি। বছরের পর বছর। জানতাম যে সাংবাদিক হিসেবে ওঁর কাছে পৌঁছতে গেলে আগে বায়োডেটা পাঠাতে হয়। পড়ে পছন্দ হলে, আর সেই সাংবাদিকের কপাল ভাল হলে নাকি দেখা করার ডাক পাওয়া যায়। বায়োডেটা পাঠিয়েছিলাম আমরা। সঙ্গে নিয়ম মাফিক ফটো আটকে। কিন্তু ডাক আসেনি। অধৈর্য হয়ে ওঁর কাছের লোকেদের কাছে লাগাতার দরবার করেছি। ওঁর বন্ধুদের খুঁজে বের করে তাঁদের মাধ্যমে আর্জি জানিয়েছি। কিন্তু ডাক আসেনি।
অবশেষে ধৈর্যের ফল মিলল। ২০০৯ সালের অগস্টে।
ঝাড়গ্রামের এক চায়ের দোকানে অপেক্ষা করার নির্দেশ এল। বাইক নিয়ে আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম কাঁটায় কাঁটায় সকাল ১০টায়। যেমনটা বলা হয়েছিল। বেলা ১২টা অবধি আশেপাশে সব সুনসান। মাঝে মধ্যে এক-একটা মোটরবাইকে চেপে কিছু লোক কেমন জানি চোখে আমাদের দেখে যাচ্ছে। সোজা বাংলায় বললে মেপে যাচ্ছে। পরে বুঝেছিলাম ওরা কিষেণজিরই লোক। আমরা সত্যিই একা নাকি সঙ্গে পুলিশ বা অন্য কেউ সেটা নিশ্চিত করতেই দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে রেখে আমাদের চোখে চোখে রাখা হচ্ছিল। পুরো ছকটাই যে কিষেণজির নিজের ছকে দেওয়া সেটাও পরে জানতে পেরেছিলাম।
সাংবাদিকেরা যে বেশে দেখতেন
হঠাৎ কোথা থেকে বছর ১৫-১৬’র এক কিশোর উদয় হয়ে বলল, “আমার সঙ্গে আসুন।” নিজের নিজের বাইকে ছেলেটিকে ফলো করা শুরু করলাম। তার পরের টানা এক ঘণ্টা গভীর জঙ্গলের এ রাস্তা ও রাস্তা আঁকাবাঁকা পথ চলা। বুঝতে পারলাম এমন ছক কষেছেন কিষেণজি যে আমরা হাজার চেষ্টা করলেও ওই জায়গা থেকে নিজে নিজে বেরিয়ে আসতে পারব না।
অবশেষে এল সেই মুহূর্ত। সামনে এসে দাঁড়ালেন আমাদের সাংবাদিক জীবনের সব থেকে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিত্ব। এবং এক ফোঁটা মিথ্যে বলব না, সেই প্রথম দেখায় মাল্লোজুলা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেণজিকে হিন্দি ছবির কমেডিয়ান জগদীপ মনে হয়েছিল। অমিতাভ বচ্চন বা ‘শোলে’র গব্বর সিংহ নয়।
এত সাধারণ চেহারার একটা লোক রাষ্ট্রের কাছে এত বড় ত্রাস? ভাবতেই অবাক লাগছিল!
কথা চলছিল আমাদের। হঠাৎ এক জন এসে ওঁকে কিছু একটা বললেন আর তড়িৎগতিতে উঠে দাঁড়িয়ে উনি বললেন, “দুঃখিত। আমাকে যেতে হবে।” শুনলাম কাছের এক গ্রামে কারও সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন। খুব জরুরি দরকার। যত দূর বুঝলাম সেই গ্রামটা আমরা যেখানে বসে সেখান থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে। কিষেণজি বেরিয়ে গেলেন এবং সেই গ্রামে কাজ সেরে আধ ঘণ্টায় ফিরে এলেন।
এতটাই ক্ষিপ্র ছিল তাঁর গতি।
তাঁর সঙ্গীরা ঠাট্টা করে বলতেন, জঙ্গলমহলের প্রবাদ, যৌথবাহিনীর থেকে কিষেণজির বেগ তিন গুণ বেশি।
ফিরে এসে আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিলেন কিষেণজি। আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “এ রাজ্যে আমি আপনাদের অতিথি হতে পারি কিন্তু আজ আপনারা আমার অতিথি। বলুন কী খাবেন?” পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদীদের মাস্টারমাইন্ডকে বলব খাওয়ার কথা? আমাদের তো মুখ দিয়ে কথাই সরছে না তখন। অবস্থা বুঝে উনি নিজেই দেশি মুরগির ঝোল আর লুচি বানাতে বললেন। আমাদের পরিবেশন করছিলেন দলের মহিলারা। যাঁদের পিঠে বাঁধা আধুনিক সব অস্ত্র। খাচ্ছিলাম ঠিকই। কিন্তু কোথাও যেন কাঁটা হয়েছিলাম ভেতরে ভেতরে। খাওয়া শেষ হওয়ার পরেও দেখলাম মহিলারা সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন। ভাবলাম, এ বার কি মারার পালা? খাইয়ে-দাইয়ে মেরে ফেলাটাই কি রেওয়াজ এঁদের? এত সব ভাবতে ভাবতেই দেখলাম মহিলারা আবার একটা থালা নিয়ে এগিয়ে আসছেন। তাতে মুখশুদ্ধি। কিষেণজি মাথা নেড়ে হেসে বললেন, “নিয়ে নিন।” সে দিন সেই মহিলাদের দেখে মনে হয়েছিল এঁরা তো ঠিক আমাদের চেনা মহিলাদের মতোই। রান্না করছেন, পরিবেশন করছেন। সেবা করছেন। অথচ...
পুলিশের কাছে যে ছবি
সে দিনের লুচি মাংস যে আমাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা ছিল সেটা পরে জেনেছিলাম। এমনিতে কিষেণজির রোজকার খাওয়া বলতে নাকি ছিল শাক ভাত। সেটাও যখন জুটত না তখন স্রেফ শুকনো লঙ্কা কড়কড়ে করে ভাজা আর ভাত। শেষ পাতে টক খেতে ভালবাসতেন। যেটা পাওয়া সম্ভব হত না সব সময়। অগত্যা তেঁতুল। কখনও কখনও গ্রামের কারও দয়া হলে গুড় দিয়ে টম্যাটোর চাটনি।
মনে আছে খেতে খেতে যত রকম প্রশ্ন করা যায় আমরা ওঁকে করেছিলাম। তার মধ্যে কিছু বেশ গায়ে জ্বালা ধরানোও ছিল। কিন্তু এক বারের জন্যও বিরক্ত হতে দেখিনি। উত্ত্যক্ত হতে দেখিনি। উল্টে ধীরেসুস্থে প্রতিটা প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন নিজের মতো করে।
রাগতে ওঁকে একদিনই দেখেছিলাম। ২০০৯ সালে সাঁকরাইল থানার ওসি অতীন্দ্রনাথ দত্তকে ছেড়ে দেওয়ার দিন। মিডিয়ার কয়েক জন চিত্রগ্রাহক প্রতিনিধি ওঁর মুখের ছবি তুলে ফেলেছিলেন। ভয়ংকর রেগে গিয়েছিলেন কিষেণজি। সেই প্রতিনিধিদের আটক করা হয়েছিল। আমাদের মনে হচ্ছিল এই বুঝি গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাবে সব। পরে অবশ্য ছবিগুলো ক্যামেরা থেকে মুছে দেওয়ার পর সেই প্রতিনিধিদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
তিন বার ওঁর সঙ্গে দেখা হয়েছে। যতটুকু বুঝেছি পাক্কা পলিটিশিয়ান বলতে যা বোঝায় তাই ছিলেন। কথায় কথায় বলতেন ‘আমি কেউ নই। জনগণই সব।’ ঠিক যেমন আমাদের অন্য রাজনীতিকরা বলেন। আবার ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষাও ছিল সাংঘাতিক। আঙুল তুলে কথা বলতেন। বডি ল্যাঙ্গুয়েজে স্পষ্ট ছিল দলে তিনিই সব। তাঁর কথার ওপর আর কোনও কথা চলবে না। হো হো করে গলা ছেড়ে হাসতেন, এমন ভাবে যেন ঠিক পাশের বাড়ির লোক। আবার ইচ্ছে মতো নিস্পৃহ, নিরাসক্ত হতেও সময় লাগত না। মানুষের জন্য কাজ করেন বলছেন অথচ এত মানুষ তো আপনাদের হাতেও মারা যাচ্ছেকষ্ট হয় না? অপরাধবোধে ভোগেন না? আমাদের এই প্রশ্নের জবাবে মৃদু হেসে, অসম্ভব শান্ত স্বরে উত্তর দিয়েছিলেন, “এটা যুদ্ধক্ষেত্র। কেউ মারবে। কেউ মরবে। ও নিয়ে ভাবলে চলে না। ওরাও তো আমাদের মেরে চলেছে। তাই না?” মনে হয়েছিল পোড়-খাওয়া কোনও নেতার কথা শুনছি যেন।

বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন...

মিডিয়ার সামনে যত দিন এসেছেন কোনও দেখনদারি ছিল না। এত যে মোবাইলে কথা বলতেন, আমরা কিন্তু কখনও কোনও মোবাইল সেট হাতে ওঁকে দেখিনি। খুব সাধারণ জীবনযাপন করেন সেটা প্রমাণ করার তাগিদেই বোধহয় মিডিয়ার সামনে এ সব দেখাতেন। এমনিতেও যত বার দেখেছি একই শার্ট আর ট্রাউজার পরেই সামনে এসেছেন। ছিপছিপে, দোহারা চোহারা। কালো গায়ের রং। দেখেই ভুলে যাবেন এমন সাধারণ চোখমুখ। কিন্তু চোখের দৃষ্টি ধারালো আর হাতের পাঞ্জা এমন জবরদস্ত যা হাত মেলালে হাত ঝনঝন করতে বাধ্য। প্রথম বার দেখায় হাত মেলানোতেই আমরা সেটা বুঝেছিলাম। পরে দেখা হলে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন এক আধ বার। তাতেও বুঝেছি কী ইস্পাত কঠিন দেহ!
পরের দিকে হুটহাট ফোন করতেন। কখনও বাড়িতে ঘুমোচ্ছি। বা অফিসে ঢুকছি। কিষেণজির ফোন। একেবারেই সাধারণ কথাবার্তা। কিষেণজি চলে যাওয়ার পর ওঁর এই হঠাৎ হঠাৎ ফোনগুলো মিস করছি যেন। যে ফোনগুলো করতেন শুধু এইটুকু জিজ্ঞেস করতে, কেমন আছি, আমার বাড়ির সবাই কেমন আছেন। অবাক হয়েছি।
অবাক হয়েছি এই এ বার ওঁর মৃত্যুর পর অন্ধ্রপ্রদেশে ওঁর গ্রামের বাড়িতে গিয়েও। দেখেছি লোকে কেমন রবিনহুডের মতো ওঁকে ভক্তি করে।
অথচ এই মানুষটাই এ রাজ্যে কী নির্বিকার ভাবে হত্যালীলা চালিয়ে গেছেন।
আমাদের চোখে যিনি নৃশংস খুনি, অন্য অনেকের চোখে তিনি রবিনহুড। গরিবের ত্রাতা।
ক্ষুরধার বুদ্ধি ধরতেন। অথচ সেই বুদ্ধি কাজে লাগত মানুষ খুন করার কাজে।
মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার অসম্ভব মনমোহিনী ক্ষমতা ছিল। আর তাঁর মৃত্যুর পর শোনা যাচ্ছে, খুব কাছের কোনও বন্ধু ধোঁকা দেওয়াতেই নাকি মরতে হল তাঁকে। ভাগ্যের এই চরম পরিহাস আর চরিত্রের এই অসম্ভব বৈপরীত্য। এটাই কিষেণজি।
মোবাইলে এখনও সেভ করা ‘কে জে আই’।

বেঁচে থাকাকালীন রহস্য। মৃত্যুর পরেও।
অনুসন্ধানে প্রসূন আচার্য
কিষেণজির মৃত্যু ঘিরে এত বিতর্ক কেন?
অভিযোগ, যেখানে তাঁকে মারা হয়েছে, সেটা সামাজিক বন সৃজনের এলাকা। গ্রামবাসীদের হাতে পোঁতা কয়েকটি মাত্র গাছ। ও রকম ফাঁকা জায়গায় কিষেণজি কেন লুকোবেন? যে উইয়ের ঢিবির পিছনে লুকিয়েছিলেন বলে বলা হচ্ছে তার গায়ে কোনও গুলির দাগ নেই। আশেপাশের গাছে এক তরফা গুলির চিহ্ন আছে। মাওবাদীরা পাল্টা ৫০০ থেকে ৭০০ রাউন্ড চালিয়েছিল বলে সরকার বললেও তার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিষেণজির শরীরে পোড়ার দাগ পাওয়া গেছে। প্রশ্ন পোড়ার দাগ যদি গ্রেনেড বা মর্টার হামলার দরুণই হয়ে থাকে তবে আশেপাশের জমিতে সেই গ্রেনেড বা মর্টারের কোনও চিহ্ন নেই কেন? তা হলে কি কিষেণজিকে আলোচনার নামে ডেকে একতরফা ভাবে মারা হয়েছে? সরকারি মতে, দু’তরফে গোলাগুলি চলাকালীন কিষেণজি ফাঁকা জায়গায় বেরিয়ে আসেন। তখনই গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়।
এই অপারেশনের নাম কি ছিল?
কোনও ‘কোড নেম’ ছিল না। রাজ্য পুলিশ, সিআরপিএফ আর তাদের স্পেশ্যাল বাহিনি-- কোবরা কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স ফোর্স সবাই মিলে অভিযান চালিয়েছিল। সিআরপিএফ-এর ডিরেক্টর জেনারেল বিজয় কুমার দায়িত্বে ছিলেন। বীরাপ্পনকে ধরেছিল যে স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স তার দায়িত্বেও ছিলেন ’৭৫-এর ব্যাচের এই আইপিএস।
জীবনের শেষ ২৪ ঘণ্টা কিষেণজি কী ভাবে কাটিয়েছেন?
দু’রকম ছবি পাওয়া যাচ্ছে।
সরকার বলছে, কুশবনির জঙ্গলে বুধবারটা কাটিয়েছেন কিষেণজি। মারা গেলেন যে দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সে দিন আসেন বুড়িশোলের জঙ্গলে। দু’টোই যৌথ বাহিনীর এলাকার মধ্যে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিন দিন ধরে তাঁদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হচ্ছিল। মাওবাদীরা বলছেন, মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে আলোচনায় বসার জন্য ডেকে আনা হয় কিষেণজিকে। যে ভাবে মাওবাদী সেন্ট্রাল কমিটির সদস্য ও নেতা আজাদের সঙ্গে সরকারের মধ্যস্থতা করেছিলেন সমাজকর্মী স্বামী অগ্নিবেশ। কিষেণজির সঙ্গে ছিলেন তিন জন। সিপাই। হিরো। সুচিত্রা মাহাতো। সুচিত্রা সম্পর্কে ছত্রধর মাহাতোর বৌদি। মাওবাদী কেন্দ্রীয় কমিটির অভিযোগ, বুধবার, ২৩ নভেম্বরই কিষেণজিকে গ্রেফতার করা হয়। রাজ্য সরকারের ওপর বিশ্বাস করে আলোচনায় গিয়েছিলেন বলেই ত্রি-স্তর নিরাপত্তা যা তাঁকে ঘিরে থাকত সেটা ছাড়াই লোকালয়ের কাছাকাছি গিয়েছিলেন তিনি।
কিষেণজি আলোচনায় রাজি হয়েছিলেন এ রকম যদি ধরে নেওয়াও হয়, তা হলে রাজি হওয়ার কারণ কী ছিল?
যৌথবাহিনী গত দু’সপ্তাহ ধরে প্রচণ্ড আক্রমণ চালাচ্ছিল এলাকায়। টানা আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত মাওবাদীরা হাঁফ ছাড়ার সময় চাইছিলেন। তাই নাকি আলোচনায় বসতে রাজি হওয়া। তা ছাড়া, ১৯ নভেম্বর মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর আলোচনায় রাইটার্সে মাওবাদীদের সঙ্গে আবার আলোচনা শুরুর সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছিল। মধ্যস্থতাকারীরাও সেই প্রস্তাবে রাজি হন। ১৯ তারিখের আগে কিষেণজি নাকি অসমে ছিলেন। আলোচনা শুরু হবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েই তিনি জঙ্গলমহলে ফেরেন।
আগে ধরা যায়নি কেন? তাঁর গুচ্ছ সেল নম্বরও তো মিডিয়ার কাছে ছিল। তাতেও তাঁর অবস্থান আন্দাজ করা যায়নি?
জঙ্গলে বা দুর্গম এলাকায় একটা মোবাইল টাওয়ার ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার এলাকার কানেকশন দেখে। কিষেণজির নম্বর দেখে তিনি কোন এলাকায় আছেন সেটা যৌথবাহিনী বোঝেনি এমন নয়। কিন্তু শহরে এ রকম ঘটনায় অপরাধী ধরা আর গভীর জঙ্গলে মাওবাদীদের এক নম্বর নেতাকে ধরতে ঢুকে পড়া এক নয়। মনে করা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে যৌথবাহিনী সেই ঝুঁকি নেওয়ার সাহসই দেখায়নি।
শেষের দিকে সাহস কমেছিল কিষেণজিরও। মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ভাবতেন তাঁর মোবাইল নম্বর ট্রেস করে ফেললে রাষ্ট্র হয়তো বায়ুসেনা দিয়ে গোটা এলাকা জুড়ে বোমা বর্ষণ করে তাঁকে মেরে ফেলবে।
কিষেণজিকে আগে ধরতে না পারা আর গত ২৪ নভেম্বরের মধ্যে সব থেকে বড় ভূমিকা সম্ভবত রাজ্যে পালা বদলের। রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ জানাচ্ছেন, “কিষেণজি যা বুঝিয়ে এসেছেন, তা যে ঠিক নয়, সেটা মানুষ বুঝতে পেরেছিলেন।” এ রাজ্যে মাও হামলায় এ পর্যন্ত সিপিএমের ২৭৩ জন মারা গিয়েছেন। তাই সিপিএমের কেউ কোনও সাহায্য করবে না সেটা স্বাভাবিক। অন্য দিকে, গ্রামের তৎকালীন সরকার-বিরোধী মানুষ মাওবাদীদের খবর দিয়ে দিতেন অনেক সময়। এখন তাঁরাও মুখ ফিরিয়েছেন। তাই কিষেণজির দিকে সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মানুষের অভাব দেখা দিয়েছিল।

অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ: কিংশুক গুপ্ত


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.