|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা |
নাজেহাল পুরসভা |
উদ্যানের মূষিক প্রসব |
কৌশিক ঘোষ |
হ্যামলিনের সেই বাঁশিওয়ালা আজ কোথায়!
থাকলে কি আর পুরকর্তাদের কপালে এ ভাবে ভাঁজ পড়ত? হয়তো বা এই সমস্যার সমাধান হয়ে যেত লহমায়!
নেই বলেই তো কলকাতা পুরসভার উদ্যান বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারকে বলতে হচ্ছে, “কী যে করি? এই পার্কে ইঁদুরের উপদ্রব সতিই নজিরবিহীন।”
ব্যাপারটা কী?
একটু খোলসা করেই বলা যাক। উত্তর কলকাতার দর্জিপাড়ায় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের ধারে পুরসভা তৈরি করেছে ‘যতীন মৈত্র পার্ক’। সেটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। কিন্তু, বিপত্তি ঘটেছে অন্যত্র! গোটা পার্ক জুড়ে এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পাল পাল ইঁদুর। ইঁদুরের উৎপাতে পার্কটির রক্ষণাবেক্ষণ করাই মুশকিল হয়ে উঠেছে।
|
|
গোটা পার্ক জুড়েই কচি ঘাসের ফাঁকে ফাঁকে এ দিক-ও দিক গজিয়ে উঠেছে গর্ত। এমনকী, এই পার্কে যে সমস্ত দামি গাছের চারা লাগানো হয়েছে সেগুলির গোড়াও কেটে দিয়েছে ইঁদুর। পার্কের সীমানা প্রাচীরের নীচে বিপজ্জনক ভাবে তৈরি হয়েছে বড় গর্ত। শুধু পার্কের মধ্যেই নয়, পার্কের পাশে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের ফুটপাথের উপরেও পেভার ব্লক বসে গিয়েছে। ইঁদুরে ফুটপাথের তলার মাটি কাটার ফলেই এই অবস্থা। আশপাশের বিভিন্ন অলিগলিতেও ইঁদুরের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেনএলাকার বাসিন্দারাও।
তা হলে উপায়? মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারের কথায়: “এই পার্কটি পুরসভা কয়েক দিনের মধ্যেই উদ্বোধন করবে। তার আগে পার্কটিতে ইঁদুরের এ রকম উৎপাতে আমরা অস্বস্তিতে পড়েছি। অন্যান্য পার্কে ইঁদুরের উৎপাত যে হয় না এমন নয়। কিন্তু এই পার্কে ওদের উপদ্রব সতিই নজিরবিহীন। আপাতত ওষুধ দিয়ে ইঁদুর মারা হচ্ছে।”
স্থানীয় ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ পার্থ হাজারির উদ্যোগে পুরসভার উদ্যান বিভাগের সহায়তায় দর্জিপাড়ার যতীন্দ্রমোহন অ্যাভিনিউয়ে গণভবনের পাশে এই পার্কের একাংশ সংস্কার করে নতুন পার্কটি তৈরি হয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য পুরসভার খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা।
রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন লেখায় পরিবেশ সম্বন্ধে তাঁর যে ভাবনা প্রতিফলিত হয়েছে, তারই কিছু কিছু অংশ এই পার্কে রূপ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। পার্কের এক দিকে কয়েকটি ফলকে তাঁর এই লেখাগুলির অংশবিশেষ তুলে ধরা হয়েছে। |
|
পুর কর্তৃপক্ষ জানান, পরিবেশ সচেতনতা বাড়াতেই এই ধরনের থিম পার্কের কথা ভেবেছে পুরসভা। শিশুরাও যাতে পরিবেশ ভাবনায় অনুপ্রাণিত হয় সে জন্য ‘সহজ পাঠ’ থেকে পরিবেশ সংক্রান্ত লেখা তুলে ধরা হয়েছে। পার্কটিতে বসার জায়গা, আলো এবং শিশুদের অনুষ্ঠানের জন্য একটি মঞ্চও রয়েছে। দেবাশিসবাবু বলেন, “রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকে রোগাক্রান্ত অমলের সঙ্গে প্রকৃতির একমাত্র যোগাযোগ ছিল ঘরের জানলা। প্রকৃতির সঙ্গে শিশুদের একাত্মতা বোঝাতেই পার্কের মধ্যে একটি দরজা এবং জানলা অমলের ঘরের জানলা ও দরজার প্রতীক হিসেবে রাখা হয়েছে।”
ইঁদুর মারার ক্ষেত্রে পুরসভা কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?
পার্থ হাজারি বললেন, “আমি নিজে পার্কের মধ্যে কয়েক দিন ইঁদুর মারার বিষ ছড়িয়েছি। কয়েকটি ইঁদুর মরেওছিল। আবারও ছড়াব। কিন্তু এই সমস্যার একটা স্থায়ী সমাধান যাতে করা যায় সে কারণে পুর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” এই ওয়ার্ডের অন্তর্গত যতীন্দ্রমোহন অ্যাভিনিউয়ের একাংশ, দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিট, গুলু ওস্তাগর লেন এবং ছিদাম মুদি লেন ছাড়াও এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল এবং অলিগলিতেও ইঁদুরের জন্য ব্যাপক সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই অঞ্চলের বাসিন্দা প্রদীপ মেহরার কথায়: “মাটি কেটে রাস্তা বসিয়ে দিচ্ছে ওরা। অনেক বাড়ির নিকাশি নালা বসে যাচ্ছে। মাটি কেটে নিকাশি নালার মুখ বন্ধ করে দিচ্ছে ইঁদুর।” পুর কর্তৃপক্ষ বলছেন, ইঁদুরের এই তাণ্ডব রুখতে পুর স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া আর কী-ই বা করা? হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা তো আর আসবেন না! কোন জাদুকরী বাঁশির সুর আর কলকাতার মূষিককুলকে টেনে নিয়ে যাবে?
|
ছবি তুলেছেন শুভাশিস ভট্টাচার্য |
|
|
|
|
|