নেই উদ্যোগ
অবহেলার বনভোজন
শীত পড়তে শুরু করেছে। এই ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে একটি দিন পিকনিক করতে যেতে হবে, কিন্তু কোথায় যাওয়া যায়? কাজের ফাঁকে এমনই ভাবছিলেন বেলুড়ের বাসিন্দা সম্রাট কর। কেননা, গত বছরই বন্ধুরা বলেছিল, এ বার শহরের মধ্যেই কাছাকাছি পিকনিকের জায়গা খুঁজে বের করার দায়িত্ব তাঁর। অনেক ভাবনাচিন্তার পরে সম্রাটের মনে পড়ল বালি জয়পুর বিলের কথা। শহরের মধ্যে এই একটি জায়গা আছে বটে। কিন্তু সেখানে কি এখন আর পিকনিক করা যায়?
শেষে, এক সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে পিকনিক স্পটটি দেখতে বেরিয়ে পড়লেন সম্রাট। কিন্তু, ছয় নম্বর জাতীয় সড়কের ধারের সেই জায়গায় গিয়ে চমকে উঠলেন তিনি। চারধারে ঝোপঝাড়। বন দফতরের একটি ছোট বাগান আছে বটে, কিন্তু তার অবস্থাও মন্দের ভাল। শুনসান জাতীয় সড়কের ধারে ঘন জঙ্গলে ভর্তি ওই পিকনিক স্পটে নিরাপত্তা বলতেও কিছু নেই।
শুধু ওই যুবকই নন। হাওড়া শহরের মধ্যে পিকনিক করার মতো জায়গা না থাকায় সবাইকেই যেতে হয় হাওড়ার গ্রামাঞ্চলে কিংবা আরও দূরে। যদিও হাওড়া শহরের মধ্যেই জাতীয় সড়কের ধারে যে জায়গাটি রয়েছে, সেখানে অনায়াসেই পিকনিক করা যেতে পারে। স্থানীয়দের বক্তব্য, বেশ কয়েক বছর আগে ওখানে অনেকেই পিকনিক করতে আসতেন। কিন্তু সেটি এখন ব্যবহারের অযোগ্য।
বালির দিক থেকে দুই নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে কিংবা লিলুয়ার দিক থেকে ছয় নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে ডানকুনির দিকে এগোলেই পড়বে মাইতিপাড়া আইল্যান্ড। সেখানেই সিসিআর ঝিলের ধারেই রয়েছে প্রায় চার একর জমি। যার মধ্যে প্রায় এক একর জমিতে হাওড়া বন দফতরের ছোট একটি নার্সারি রয়েছে। ভিতরে বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালির মাঝে রয়েছে একটি বিশ্রামাগার। তার পিছনে সিসিআর ঝিলের মাঝখানে রয়েছে একটি কৃত্রিম দ্বীপ।
কিন্তু সেখানে ঢুকতে গেলেই থমকে দাঁড়াতে হবে। বড় একটি লোহার গেট থাকলেও তা দীর্ঘ দিন বন্ধ। সামনে গজিয়েছে ঝোপজঙ্গল। বড় গেটটির পাশে সরু একটি রাস্তা দিয়ে ভিতরে ঢুকে দেখা গেল, নার্সারির ভিতরে বেশ কিছু জায়গায় তৈরি হয়েছে ঝোপজঙ্গল। বিশ্রামাগারের অবস্থাও বেহাল। ঝিলের জলে ভেসে বেড়ানোর জন্য স্পিডবোটগুলিতে মরচে ধরেছে। ভগ্নপ্রায় লোহার জেটি। নার্সারিটির উল্টো দিকেই পরিত্যক্ত বিশাল জায়গা জুড়ে বড় বড় গাছের জঙ্গল। ঝোপে ঢাকা পড়েছে বালি-জগাছা ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির তৈরি বিশ্রামের শেড, শৌচাগার।
জায়গাটির উন্নয়নে বন দফতর বা জেলা প্রশাসন কেন উদ্যোগী হচ্ছে না?
বন দফতর সূত্রে খবর, ১৯৮৪ থেকে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বালি দুর্গাপুর-অভয়নগর ২ নম্বর পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে ওই জায়গাটিতে নার্সারি তৈরি করে রক্ষণাবেক্ষণ করছে হাওড়া বন দফতর। পাশাপাশি, পিকনিক করতে আসা মানুষের সুবিধার কথা ভেবে নার্সারির উল্টো দিকেই শেড, শৌচাগার, পানীয় জলের কল তৈরি করেছিল পঞ্চায়েত সমিতি। কিন্তু জাতীয় সড়ক তৈরি হওয়ার পরে সেই জায়গার মালিকানা যেহেতু জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের, তাই উন্নয়নের কাজের দায়িত্ব তাঁদেরই। এমনই দাবি হাওড়ার বনাধিকারিক গৌতম চক্রবর্তীর ও বালি জগাছা ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চৈতালি দেবনাথের।
হাওড়া বনাধিকারিক জানান, জাতীয় সড়কের ধারের বিভিন্ন জায়গার সৌন্দর্যায়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার অর্থ বরাদ্দ করে। সেখানে জয়পুর বিল এলাকায় প্রায় চার একর জমিটি অনায়াসেই পিকনিকের উপযোগী করা যেতে পারে। তিনি জানান, চলতি বছরের প্রথম দিকে জাতীয় সড়ক সৌন্দর্যায়নের বিষয়ে জয়পুর বিল নার্সারিতেই হাওড়া বন দফতরের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জাতীয় সড়কের কর্তারা। গৌতমবাবু বলেন, “ওখানে পিকনিক স্পট বানানোর জন্য প্রস্তাব দিয়ে একটি প্ল্যানও ওঁদের দেখিয়েছিলাম। যা দেখে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ খুব খুশি হয়ে কাজে উৎসাহ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরে সব চুপচাপ।”
পরিকল্পনায় ছিল, জঙ্গল কেটে প্রায় চার একর জায়গা জুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হবে। ঝিলটি সুন্দর করে সাজিয়ে বোটিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। আধুনিক বিশ্রামাগার, রান্নার জায়গা, শৌচালয়, গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করে চারধারে সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘিরেও দেওয়া হবে। এ জন্য খরচ ধার্য হয়েছিল প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। গৌতমবাবুর কথায়: “পরিকল্পনামাফিক জায়গাটির উন্নয়ন হলে এক সঙ্গে চারটি দল পিকনিক করতে পারত। আমারা কাজটি করে দিতে রাজি ছিলাম। পিকনিক স্পট তৈরি হলে সরকারের আয় হত।” চৈতালীদেবীর বক্তব্য: “প্রাক্তন বিধায়ক মোহন্ত চট্টোপাধ্যায়ও চেষ্টা করেছিলেন ওখানে পিকনিক স্পট বানানোর জন্য। কিন্তু জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। মানুষের কথা ভেবে আমরা কিছু কাজ করেছিলাম।”
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে কলকাতা ডিভিশনের ম্যানেজার (টেকনিক্যাল) অভিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, “পিকনিক স্পট বানানোর জন্য কেউ লিখিত প্রস্তাব দেয়নি। তবে ছয় নম্বর জাতীয় সড়কে ছয় লেনের কাজ না হওয়া পর্যন্ত এখন তার আশপাশের জমির সৌন্দর্যায়ন করা সম্ভব নয়।”

ছবি: রণজিৎ নন্দী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.