সম্পাদকীয় ২...
নামিতে নামিতে
দুর্নীতি বাড়িতেছে। ক্রমে বলিলে ঈষৎ কমাইয়া বলা হয়। বলা উচিত, ক্রমাগত। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ভারতের অবনমন অব্যাহত। পরিস্থিতি খারাপ হইতে অধিকতর খারাপের দিকে অগ্রসর। গত বৎসর এই তালিকায় ভারত ছিল সপ্তাশীতিতম স্থানে। সাম্প্রতিক তালিকা বলিতেছে, ভারতের স্থান পঁচানব্বইতম। দুর্নীতির প্রকোপ কম যে সকল দেশে, তালিকায় তাহাদের স্থান উপরে। ভারত নামিতেছে। কেন নামিতেছে, তাহা সবিস্তার ব্যাখ্যার প্রয়োজন নাই। বৃহত্তর পরিসর হইতে তুলনায় ক্ষুদ্রতর পরিসর, সর্বত্রই যে রূপে দুর্নীতির ছায়া ক্রমপ্রসারণশীল, তাহাতে বুঝাই যায়, তালিকায় এই অধোগমনটিই অনিবার্য ছিল। পরিভাষায় যাহাকে ‘ম্যাক্রো লেভেল’, সেই বিস্তৃত পরিসরে স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির ন্যায় দুর্নীতির কাণ্ড গোচরে আসিয়াছে। পাশাপাশি, জনজীবনের প্রত্যন্ত স্তরেও দুর্নীতির গ্রাস। সম্প্রতি, বেআইনি বিদ্যুৎ চুরি রুখিবার সময় একটি অপ্রীতিকর ঘটনার পরে পুলিশের গুলিতে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটিয়াছে। ঘটনাটি অবাঞ্ছিত, এবং অতীব দুঃখজনক, সন্দেহ নাই। অথচ, ইহাই আবার অন্য একটি স্তরে প্রমাণ করে যে, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ, অর্থাৎ গৃহস্থালির নিত্যকার কিছু পরিষেবা পর্যন্ত দুর্নীতির হাত চলিয়া গিয়াছে। অতঃপর বুঝা যায়, দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ভারতের স্থান কেন পঁচানব্বই হইবে।
এক দিকে অণ্ণা হজারে এবং তাঁহার সঙ্গিগণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাইতেছেন। তাঁহাদের সেই দুর্নীতি-বিরোধী জেহাদের সমর্থনে দেশের মধ্যবিত্ত সমাজ আলোড়িত। মোমবাতির শিখায় শিখায় জ্বলিয়া উঠিতেছে নাগরিক সমাজের প্রতিবাদ। অন্য একটি স্তরে সেই নাগরিকগণই আবার, যে যাহার মতো করিয়া, দুর্নীতির সঙ্গে একটি বোঝাপড়া করিয়া লইয়াছেন। বাড়িতে রাঁধিবার গ্যাসের সিলিন্ডার ফুরাইলে কী রূপে বিধিবদ্ধ ক্রমতালিকাকে ফাঁকি দিয়া নিজস্ব গ্যাস সিলিন্ডারটি সংগ্রহ করিয়া ফেলা যায়, কী রূপে ট্রেনে ভ্রমণের সময় কিছু অর্থের বিনিময়ে আসন মিলিয়া যায়, সেই সমস্ত ব্যাকরণের চর্চা অধিকাংশ মানুষই অল্পাধিক করিয়া থাকেন। জীবনযাপনের প্রাত্যহিক স্তরে ইহা আর নিন্দার বিষয় নহে। বরং, উল্টা। এই সকল বিষয়ে কাহারও প্রয়োজনীয় দক্ষতা না থাকিলেই বরং তাঁহার ‘অকর্মণ্য’ আখ্যা পাইবার সমূহ সম্ভাবনা। অর্থাৎ, এই দক্ষতাটি এক ধরনের সামাজিক বৈধতা লাভ করিয়াছে। ঘটা করিয়া জনসমক্ষে ইহার জন্য কোনও পুরস্কার দেওয়া হয় না সত্য, কিন্তু তাহাতে সেই বহুমাত্রিক দুর্নীতির গ্রহণযোগ্যতায় কোনও ভাটা পড়ে নাই। যদি নির্বিঘ্নে বাঁচিয়া থাকিতে হয়, তাহা হইলে অন্যকে ফাঁকি দিয়া নিজের লাভটি হাসিল করিতে হইবে। অন্যকে বাঁচিতে দিবার কথা পরে, পূর্বে নিজের বাঁচিবার বন্দোবস্তটি করা জরুরি। তাহার জন্য, দুর্নীতিতে হাত পাকাইবার কাজটিও অবিলম্বে শিখিয়া ফেলা উচিত।
ইহাই প্রকৃত সংকট। ফলে, নাগরিক সমাজের দুর্নীতি চলিতেছে। আশঙ্কা জাগে, চলিবেও। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়া চলিবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। যাঁহারা উৎকোচের বিনিময়ে আসন সংগ্রহ করিবেন, তাঁহাদেরই অনেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুষ্টিবদ্ধ আস্ফালন করিতে ব্যস্ত। পরিণামে, অণ্ণা হজারের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের ঢেউ ছড়াইতেছে। দুর্নীতির অভিযোগে বিভিন্ন পরাক্রমী রাজনীতিক কারান্তরালে গমন করিতেছেন। অন্য দিকে, লোকচক্ষুর অন্তরালে গ্যাসের সিলিন্ডার বেআইনি ভাবে এক হাত হইতে অন্য হাতে যাইতেছে। ফলে, ভারতও দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রের সারণিতে ক্রমে নীচে নামিতেছে। ক্রমে এবং ক্রমাগত। এই যাত্রার গতি ফিরাইতে সমাজ এবং রাজনীতির চালকদের একই সঙ্গে তৎপর হইতে হইবে। কিন্তু অণ্ণা হাজারে ‘বনাম’ সরকার-এর ধুন্ধুমার লড়াই বলিতেছে, তেমন কোনও লক্ষণ নাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.