সম্পাদকীয় ১...
প্রতিদ্বন্দ্বী
তিব্বতি ধর্মগুরু দলাই লামার প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে ভারতের অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করিয়া চিন তীব্র আপত্তি জানাইয়াছে। বেজিংয়ের আপত্তিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পর্যন্ত দলাইয়ের সহিত সাক্ষাতের লগ্ন স্থগিত করেন, দক্ষিণ আফ্রিকা আমন্ত্রণ করিয়াও ভিসা দিতে অস্বীকৃত হয়। আর নয়াদিল্লি একটি আস্ত বিশ্ব বৌদ্ধ সম্মেলন আয়োজন করিয়া বিভিন্ন দেশ হইতে আসা বৌদ্ধ পণ্ডিত ও প্রতিনিধিদের দলাইয়ের বক্তৃতা শুনিতে বসাইয়া দিল, ইহাতে বেজিং যৎপরোনাস্তি ক্রুদ্ধ। সম্মেলন বাতিল না করিলে ভারত-চিন সীমান্ত বৈঠক বাতিল করার চিনা হুমকি অবশ্য নয়াদিল্লি সঙ্গত দৃঢ়তায় উপেক্ষা করিয়াছে। বৈঠক বাতিল হইয়াছে। বেজিংয়ের তবু শান্তি হয় নাই। কলিকাতায় অনুষ্ঠিত দলাইয়ের একটি অনুষ্ঠানেও যাহাতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপাল অনুপস্থিত থাকেন, সেই অনুরোধও কূটনৈতিক স্তরে করা হয়। রাজ্যপাল, নয়াদিল্লির নির্দেশেই, সে-অনুরোধ প্রত্যাখ্যানও করেন।
ইহা বলিষ্ঠ, আত্মপ্রত্যয়ী কূটনীতি। আবার পায়ে পা লাগাইয়া প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সহিত ঝগড়া বাধানোও কোনও বিচক্ষণ কূটনীতি নয়। তাই এ দেশে এবং দেশের বাহিরেও দলাই লামার গতিবিধি অবাধ হইলেও তাঁহাকে রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ হইতে নিবৃত্ত রাখা হয়। বিশ্ব বৌদ্ধ সম্মেলনে আমন্ত্রিত হইয়াও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ যে উপস্থিত থাকেন নাই, তাহা চিনের স্পর্শকাতরতার প্রতি সংবেদনশীলতাবশতই। আবার অন্য দিকে, সীমান্ত বৈঠক বাতিল করার হুমকি অগ্রাহ্য করিয়া সম্মেলন করিতে দেওয়ার মধ্যেও দৃঢ়তার পরিচয় আছে। এই দৃঢ়তা প্রধানমন্ত্রী এশীয় ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সম্মেলনেও দেখাইয়াছেন। দক্ষিণ চিন সাগরের উপর চিনের একচেটিয়া আধিপত্যের দাবিকে চ্যালেঞ্জ জানাইয়া সেখানে সমুদ্রগর্ভস্থ তৈলানুসন্ধানে রাষ্ট্রায়ত্ত ভারতীয় সংস্থা ওএনজিসি-র গতিবিধি যে বৈধ এবং আন্তর্জাতিক বিধিসম্মত, দ্ব্যর্থহীন ভাষার মনমোহন তাহা চিনা নেতৃত্বকে জানাইয়াছেন। এই অঞ্চলকে আন্তর্জাতিক সমুদ্রবাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পথ হিসাবে চালু রাখার ক্ষেত্রে ভিয়েতনাম, জাপান, ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়ার সহিত নয়াদিল্লির যৌথ উদ্যোগ ক্রমশক্তিমান চিনের রণনৈতিক স্বার্থে আঘাত করিতে পারে। একই ভাবে ভারতের অব্যবহিত সীমান্তে পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় চিনের রকমারি সামরিক ও রণনৈতিক তৎপরতাও নয়াদিল্লির পক্ষে ভয়ানক উদ্বেগজনক। নয়াদিল্লির আপত্তি সত্ত্বেও বেজিং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে পরিকাঠামো নির্মাণ সহ বিভিন্ন তৎপরতা চালাইতেছে। ব্রহ্মপুত্র নদের উপর একাধিক বাঁধ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বানাইয়া ভারতের মধ্য দিয়া প্রবাহিত এই নদের জলস্রোতধারা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টাও করিতেছে। ভারতের বিভিন্ন ক্ষেত্রকে চিনা পণ্য রফতানির জন্য উন্মুক্ত করার চাপ দিলেও চিনে ভারতীয় পণ্যের রফতানি নানা ভাবে নিয়ন্ত্রিত করিতেছে, যাহার পরিণামস্বরূপ ভারত বাণিজ্য-ঘাটতির শিকার। নয়াদিল্লিকে তাই নরমে-গরমে এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কটিকে লালন করিতে হইবে। চিনের অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি গোটা বিশ্বের কাছেই দুশ্চিন্তার বিষয়। এই শক্তিবৃদ্ধির সহিত তাল মিলাইয়াই চলিয়াছে নবোদিত বৃহৎশক্তি হিসাবে তাহার আধিপত্যকামিতা। আবার এশিয়ায় উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে ভারত চিনের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীও বটে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন তাই অন্তর্হিত হওয়ার নয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.