|
|
|
|
|
|
|
চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১... |
|
ইতালির পপ আর্টে ফুটে ওঠে অতীত ও বর্তমান |
সম্প্রতি আইসিসিআর-এ অনুষ্ঠিত ‘ডাডামপপ’ শীর্ষক প্রদর্শনীটি দেখে এলেন মৃণাল ঘোষ |
প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘ডাডামপপ’। উপশিরোনাম ‘ইতালিয়ান নিউ পপ’। ইতালি সরকার ও ভারত সরকারের যৌথ উদ্যোগে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হল সম্প্রতি আইসিসিআর-এ। ইতালির ২৭জন শিল্পী এতে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁদের অধিকাংশই তরুণ। প্রদর্শনীটি পরিকল্পনা করেছেন ইগর জানটি।
‘ডাডামপপ’ শব্দটির মধ্যে দুটি অভিধা মিশে আছে। ‘ডাডা’ ও ‘পপ’। ইতালিতে পপ-আর্টের বিভিন্ন ধারার যে চর্চা চলছে, প্রদর্শনীতে আমরা তারই কিছু দৃষ্টান্ত দেখি। ‘পপ’এর সঙ্গে ডাডাবাদী শিল্পকলার কিছু সম্পর্ক আছে। এই প্রদর্শনীতে ডাডা অনুষঙ্গের কিছু কাজও রয়েছে। ‘ডাডামপপ’ শিরোনামটির এটাই হয়তো তাৎপর্য।
পপ আর্ট আন্দোলন ব্রিটেন ও আমেরিকায় উদ্ভূত হয়েছিল ১৯৫০এর দশকে। ১৯৬০এর দশকে তা তুঙ্গ স্পর্শ করেছিল। ‘পপ’ শব্দটি ‘পপুলার’এর সংক্ষিপ্ত রূপ। ‘পপুলার’ বলতে বোঝায় বিভিন্ন গণমাধ্যম, শহর ও শহরতলির সাধারণ মানুষের সংস্কৃতি ও জনমুখী বিজ্ঞাপনের বিভিন্ন আঙ্গিক। সেই আঙ্গিক ব্যবহার করে আধুনিক চেতনার কৌতুকদীপ্ত প্রতিবাদী অনুষঙ্গকে তুলে ধরার চেষ্টা হয় পপ-আর্টে। লরেন্স আলোওয়ে নামে এক জন সমালোচক প্রথম ‘পপ’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। একটি কথা মনে রাখতে হয় ‘পপুলার’ হলেও পপ-আর্টের সঙ্গে সরল গ্রামীণ লৌকিক প্রকাশভঙ্গির সম্পর্ক খুবই সীমিত। এটি মূলত আধুনিক জীবনের নাগরিক শিল্প। বিজ্ঞাপন ও কার্টুনের সঙ্গে এর সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। ইংল্যান্ডে রিচার্ড হ্যামিলটন, ডেভিড হকলি, আমেরিকায় অ্যান্ডি ওয়ারহোল, রয় লিচটেনস্টেইন, প্রমুখ শিল্পীর কাজের ভিতর দিয়ে পপ-আর্টের বিকাশ ঘটে। এই প্রথাবিরোধী ধারার আদি উৎস ডাডাবাদ। ডাডাবাদ প্রতিবাদী শিল্প আন্দোলন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসের প্রতিক্রিয়ায় এর উদ্ভব ঘটে ১৯১৫ সালে ইউরোপ ও আমেরিকায়। |
|
শিল্পী: ইভানা ফ্যালকনি |
আলোচ্য প্রদর্শনীতে তারই কিছু দৃষ্টান্ত দেখি। এই ২০১০-১১য় বিশ্বের বাস্তবতা ও শিল্পের পরিস্থিতি বিপুল পাল্টে গেছে। এই প্রদর্শনীর কমিকস্ট্রিপধর্মী রচনাগুলিকে পুরোনোর চর্বিতচর্বণ বলে মনে হয়। ডেভিড মানকোসু-র ‘গিলবার্ট অ্যান্ড জর্জ’, মার্কো মিনোত্তি-র ‘অ্যালিস গোজ ফার্স্ট’ ইত্যাদি কার্টুনধর্মী চিত্ররূপগুলি এরকম গতানুগতিকতার দৃষ্টান্ত। অথচ এই পুরোনো ধাঁচের চিত্রায়ণকেই প্রাণময় করে তোলার দৃষ্টান্তও রয়েছে এই প্রদর্শনীতে। সিলভিও মোল্টি-র কার্ডবোর্ডের উপর অ্যাক্রিলিকের ত্রিমাত্রিক রচনাটির শিরোনাম ‘দ্য ফাউন্ডেশনস অব কন্টেম্পোরারি কালচার’। চওড়া কালো রেখার চারটি ড্রয়িংধর্মী রচনা। যাতে একটি মুখ বা মুখোশ রূপান্তরিত হতে হতে কিমাকারের দিকে চলে যাচ্ছে। রেখার চলনে যে আবেগের উৎসারণ, তাতে দৃশ্যরূপ ও সাঙ্গীতিক ধ্বনির সুন্দর সমন্বয় ঘটে, যা পপের সম্ভাবনাকে অনেকটা প্রসারিত করে। মিচেলা পেড্রন-এর ‘হিজ হিরো’ ক্যানভাসের উপর চিত্রধর্মী রচনা। বিমূর্ত প্রেক্ষাপটে আলোছায়ার দ্বৈতে গড়া এক মানবীর মুখ, যাতে গভীরের দ্যোতনা আছে।
কয়েকটি ভাস্কর্যধর্মী রচনা বিশেষ অভিঘাত সৃষ্টি করতে পেরেছে। ইভানা ফ্যালকনি-র মিশ্রমাধ্যমের রচনাটির নাম ‘ইভ’। একটি প্লেটের উপর পিরামিডের মতো তিনটি থাকে সাজানো আপেলের মতো প্রতিমাকল্প। প্রত্যেকটিতে যুক্ত হয়েছে দুটি করে চোখ। আঁধারলিপ্ত নারীমুখের আভাস জাগছে যা অন্তর্লোকের রহস্যের কথা বলে। অভিব্যক্তিবাদের অনুষঙ্গ থেকেই উঠে আসে পপের বিশেষ মাত্রা। ইভান লাউশেনিডার-এর কাঠের ভাস্কর্যটির শিরেনাম ‘আই ফ্লাই অ্যাওয়ে’। একটি উল্টানো কলসির আদল হয়ে উঠেছে মানুষের শরীরের প্রতিরূপ। কলসির পিছনের তলে যুক্ত হয়েছে মানুষটির মাথা। স্ফীত গোলক আকৃতির একটি মানুষ যেন শূন্যে ভাসছে। অবয়বের নিম্নপ্রান্ত থেকে একটি দড়ি নেমে এসেছে। বাস্তব ও কিমাকার মিলে যে কল্পরূপ এখানে, তাতে ট্র্যাজেডির আভাস থাকে। রূপের অভিনবত্বেই পপ হয়ে উঠতে পারে প্রাসঙ্গিক। আঁন্দ্রে ফ্র্যানকোলিনো-র ‘মোনে অ্যান্ড চ্যানডন’ রচনাটি দেখায় কেমন করে বিজ্ঞাপনের ব্যবহারে অতীত ও বর্তমানের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা করা যায়।
এভাবেই অনেক কালের মধ্য দিয়ে ইতালির সাম্প্রতিক শিল্পচর্চার কিছু আভাস উঠে আসে। |
|
|
|
|
|