রামপুরহাট মহকুমা
অবাধে চলছে মোরাম পাচার, নির্বিকার প্রশাসন
রাজ্য জুড়ে যখন আর্থিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে, তখন রামপুরহাট মহকুমা প্রশাসনের নাকের ডকায় চলছে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে মোরাম তোলা। তাও আবার সরকারি জায়গা থেকে বড় বড় যন্ত্রের সাহায্যে মোরাম তুলে পাচার হচ্ছে। এমন ঘটনার খবর মিলেছে রামপুরহাট থানার ভাটিনা মৌজায়। সেখানকার অবস্থা দেখতে শুক্রবার সকালে যান মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক অজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, রামপুরহাট ১ ব্লকের বি এল আর ও মহম্মদ মনিরুদ্দিন, সংশ্লিষ্ট রেভিনিউ ইনস্পেক্টর অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্যান্য কর্মীরা।
অজয়বাবু বলেন, “এ দিন এলাকায় গিয়ে মোরাম তোলার পরিমাপ দেখে যা বোঝা যাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত ৬ লক্ষ ২১ হাজার কিউবিক ফুট মোরাম ওখান থেকে তোলা হয়েছে। রাজস্ব আদায় করার ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ কিউবিক ফুট মোরামের ক্ষেত্রে ১১৫ টাকা করে ধার্য আছে। কিন্তু এখান থেকে যে পরিমাণ মোরাম চুরি হয়েছে তা বিশাল অঙ্কের টাকা ক্ষতি হয়েছে।” অথচ জেলাশাসক গত বৃহস্পতিবার কেবলমাত্র জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকে বার্ষিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ মাত্রা ধার্য করেছে ৮০ কোটি টাকা। গত মাস পর্যন্ত ওই লক্ষমাত্রা ছিল বছরে ১৬ কোটি টাকা। স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তিত সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মীরাও। রামপুরহাট ১ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক মহম্মদ মনিরুদ্দিন বলেন, “বর্তমানে রামপুরহাট ১ ব্লক থেকে মাসে টোল আদায় বাবদ ২ লক্ষ টাকা আয় হয়। কিন্তু এ ভাবে মোরাম চুরি হয়ে গেলে কী ভাবে রাজস্ব আদায় করা যাবে!”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাটিনা মৌজায় ১৯ নম্বর দাগের ৮ একর ৩২ শতক সরকারি জায়গার মধ্যে ২০০৫ সালে ২ একর ১৭ শতক জায়গা পাট্টা হিসেবে বিলি করা হয়। বাকি জায়গার মধ্যে অবৈধ ভাবে মোরাম তোলার ব্যবসা চলছে প্রশাসনের নাকের ডগায়।
মোরাম খাদান পরিদর্শনে প্রশাসনিক কর্তারা। নিজস্ব চিত্র।
শুক্রবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, রামপুরহাট-দুমকা রাস্তার উপরে রামপুরহাট শহর থেকে খুব বেশি হলে ৫ কিলোমিটার দূরে ওই অবৈধ ব্যবসা চলছে। শুধু মোরাম তোলা হয়েছে তা নয়, রাস্তার ধারে বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। পাকা সড়ক থেকে খাদানে নামার জন্য রাস্তাও তৈরি হয়েছে। এত সব হয়ে গিয়েছে। অথচ পুলিশের গাড়ি টহল দেয় লাগোয়া বড়মেশিয়া, বড়পাহাড়ি, দিঘলপাহাড়ি পাথর শিল্পাঞ্চল ও ঝাড়খণ্ড সীমান্ত এলাকায়। সব সময় ওই রাস্তা দিয়ে পুলিশ প্রশাসনের গাড়ি যাতায়াত করে। এ ছাড়া, বন দফতরের তুম্বনি রেঞ্জের অফিস ওই এলাকা থেকে খুব জোর সাত কিলোমিটার দূরে এবং রামপুরহাট ১ ব্লকের বনহাট, কুশুম্বা, নারায়ণপুর-এই তিনটি পঞ্চায়েত এলাকায় যাওয়ার রাস্তা ওটাই।
এত জানার পরেও প্রশাসন এত দিন কেন নড়েচড়ে বসল না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এলাকার পাথর ব্যবসায়ীদের একাংশের প্রশ্ন, সংশ্লিষ্ট রেভিনিউ ইনস্পেক্টরের চোখে কি এত দিন এই অবৈধ কারবার ধরা পড়েনি? ওই অফিসার অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দিন পাঁচেক আগে বিষয়টি আমার নজরে পড়ে। সেই মতো বিভাগীয় আধিকারিককে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।” রামপুরহাট ১ ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক মহম্মদ মনিরুদ্দিন বলেন, “আমাদের নজরে আসার পরেই বুধবার রামপুরহাট থানায় অভিযোগ জানিয়েছি।” রামপুরহাট মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক অজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যতদূর জানা গিয়েছে, দুষ্কৃতীরা রাতে এই কাজ করে। এখনও পর্যন্ত ওই কারবারের সঙ্গে যুক্তদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। থানায় লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।” জেলা পুলিশ সুপার নিশাত পারভেজ অবশ্য বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
অন্য দিকে, রামপুরহাট ১ ব্লকের বিডিও শান্তিরাম গড়াই জানান, মোরাম, বালি পাচারের ক্ষেত্রে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর আইনগত ব্যবস্থা নেবে। পঞ্চায়েত সমিতিও এ ব্যাপারে ওই দফতরে অভিযোগ জানাতে পারে। রামপুরহাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সিপিএমের রুমকি চট্টোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, “ভাটিনা মৌজার কালীডাঙা মোড়ে রামপুরহাট-দুমকা রাস্তার উপরে অবাধে মোরাম চুরি যাওয়ার খবর আমার কাছে নেই।” আর তুম্বনি রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সাহিদুল্লা শেখ বলেন, “বন দফতরের যে সমস্ত জায়গায় গাছ কেটে যারা মোরামের ব্যবসা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর পরেও জোর করে মোরাম পাচারকারীরা গাছ কেটে খাদানের এলাকা বাড়িয়ে যাচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.