বিদ্যুৎ পাবে বাংলাদেশও
ঢাকার স্বার্থ দেখেই টিপাইমুখ, বললেন মনমোহন
রাক নদীর উপর টিপাইমুখ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশে যখন বিতর্ক তুঙ্গে, তখন সে দেশের ‘সন্দেহ’ নিরসনের চেষ্টায় আজ সক্রিয় হল ভারত। বাংলাদেশকে আবার স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হল, সে দেশের ক্ষতি হয় এমন কোনও কাজ ভারত করবে না। বরং এই প্রকল্পে উৎপন্ন বিপুল জলবিদ্যুতের ভাগ পাবে বাংলাদেশও।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুই উপদেষ্টা মশিউর রহমান এবং গহর রিজভি আজ দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি মণিপুরের টিপাইমুখে বরাক নদীতে প্রস্তাবিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটির বিষয়ে তাঁরা ঢাকার উদ্বেগের কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের কাছে প্রকল্পটির বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করে জানান, দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। ঢাকার স্বার্থ বিপন্ন হবে এমন কোনও পদক্ষেপ করবে না ভারত।
বৈঠকের পরে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিষ্ণু প্রকাশ একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “ভারত সরকার ইতিমধ্যেই বাংলাদেশকে জানিয়েছে, টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে ঢাকার সঙ্গে সব রকম আলোচনা করতে কেন্দ্র প্রস্তুত। গত সেপ্টেম্বরে তাঁর বাংলাদেশ সফরের সময়ে প্রধানমন্ত্রী একই আশ্বাস দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের দুই উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় তার পুনরাবৃত্তি করে আজ তিনি জানিয়েছেন, টিপাইমুখ নিয়ে এমন কোনও পদক্ষেপ করা হবে না, যাতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, আজ শেখ হাসিনার দুই উপদেষ্টাকে বেশ কয়েকটি বিষয় বিশদে ব্যাখ্যা করেছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাঁরা দেখিয়েছেন, তিস্তা আর বরাক, দুই নদীর সমস্যা এক নয়। তিস্তায় যেমন জলের সঙ্কটই সমস্যা, বরাকে সমস্যা জলের প্রাচুর্য। প্রতি বছর বরাকের বন্যায় যেমন ভারতের মণিপুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ভেসে যায় বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলও।
টিপাইমুখ প্রকল্পটি রূপায়িত হলে, ফি বছরের সেই বন্যা আটকানো যাবে। পাশাপাশি এই প্রকল্পে পাহাড়ি বরাকের জলের স্রোত কাজে লাগিয়ে যে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে, তা যেমন ভারত নেবে তেমনই পাবে বাংলাদেশও। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সমস্যার অনেকটা সুরাহার পথ দেখাতে পারে টিপাইমুখ।
বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “২০০৯ সালে বাংলাদেশের একটি সংসদীয় দলকে আমরা টিপাইমুখের প্রস্তাবিত প্রকল্প দেখানোর ব্যবস্থা করেছিলাম। প্রয়োজনে হাসিনা সরকারের প্রতিনিধিদের আবার সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। এই প্রকল্প নির্মাণের প্রতিটি ধাপেই আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখব। কোনও কিছুই গোপনে করা হবে না।” ওই কর্তা ব্যাখ্যা দেন, মণিপুরে বাড়তি জলের কোনও প্রয়োজন নেই। ফলে জলের গতিপথ ঘুরিয়ে নিজেদের কাজে লাগানো নয়, বাঁধ দেওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়া। তা ছাড়া মণিপুরের ভৌগলিক অবস্থান এমনই যে চাইলেও আমরা জলের গতিপথ বদলানো যায় না।
গত বছর শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময়েও প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন যে টিপাইমুখ নিয়ে বাংলাদেশের স্বার্থ-বিরোধী কোনও কাজ ভারত করবে না। ঢাকার আশঙ্কা ছিল, ভারত এই প্রকল্প রূপায়ণ করলে বাংলাদেশে জলের সঙ্কট দেখা দিতে পারে। বিরোধীরা আক্রমণ শানাতে থাকেন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের ফলে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে। কিন্তু কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রচারে সম্প্রতি তা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দু’বছর আগে মউ স্বাক্ষরের পরে গত অক্টোবরে এই প্রকল্পের জন্য একটি ‘প্রোমোটারস এগ্রিমেন্ট’ সই হয় মণিপুর সরকার, এনএইচপিসি এবং শতদ্রু জলবিদ্যুৎ নিগমের মধ্যে। কিছু সংবাদমাধ্যম এই বিষয়টি তুলে ধরে প্রচার করে, ঢাকার আপত্তি সত্ত্বেও হইহই করে টিপাইমুখ প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নয়াদিল্লি।
তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি না হওয়া এমনিতেই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে জটিলতা তৈরি হয়েছে। তার উপর টিপাইমুখের ‘চুক্তি’ হাতিয়ার করে নতুন করে ভারত-বিরোধী জিগির তুলেছে বাংলাদেশের একটি মহল। সক্রিয়তা দেখাতে মনমোহন সিংহকে চিঠি পাঠিয়ে টিপাইমুখ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া। পত্রপাঠ মনমোহন সেই চিঠির জবাব পাঠিয়ে বাংলাদেশের বিরোধী নেত্রীকে আশ্বাস দেন, বাংলাদেশের স্বার্থ-বিরোধী কোনও কাজ ভারত করবে না। তিনি এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
পরিস্থিতি সামলাতে উদ্যোগী হয়েছেন হাসিনা। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে যে অগ্রগতি হয়েছে, তা কোনও কারণে বাধা পাক, নয়াদিল্লিও চায় না। আর তাই হাসিনা দুই উপদেষ্টাকে দিল্লি পাঠিয়েছেন টিপাইমুখ নিয়ে অস্বচ্ছতা কাটানোর লক্ষ্যে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকও সক্রিয় হয়েছে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাতে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.