উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি মামলার চার্জশিট পেশ না-হওয়ায় অফিসার-শিক্ষক-কর্মীদের একাংশের মধ্যেই নানা ক্ষোভ ও অভিযোগ ক্রমশ দানা বাঁধছে। তাঁদের অভিযোগ, চার্জশিট পেশের জন্য অনুমতি চেয়ে পাঠানো ফাইলটি আচার্য তথা রাজ্যপালের দফতর হয়ে উচ্চ শিক্ষা দফতরে গিয়ে থমকে রয়েছে। মামলায় যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, বাম আমলে তাঁদের একাংশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণেই উচ্চ শিক্ষা দফতরের অফিসারদের একাংশ চার্জশিট পেশের
প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে দিতে চাইছেন কি না, তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে তদন্তের দাবি উঠেছে।
ভারতীয় ফৌজদারি কার্যবিধির পশ্চিমবঙ্গের সংশোধিত আইনের ১৬৭ (৫) ধারা অনুযায়ী সরকারি অর্থ নয়ছয় সংক্রান্ত মামলার ক্ষেত্রে যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি যেদিন আদালতে হাজির হয়েছেন, সে দিন থেকে ২ বছরের মধ্যে চার্জশিট পেশ করা বাধ্যতামূলক। না হলে মামলাটি খারিজ হয়ে যাবে।
উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি বিষয়ক মামলা সংক্রান্ত ক্ষোভ-অভিযোগের কথা শুনেছেন। তিনি বলেন, “রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্নীতি-মুক্ত করতে মুখ্যমন্ত্রী বদ্ধপরিকর। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি মামলার চার্জশিট পেশের অনুমোদন সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে বিশদে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবে রাজ্য সরকার।” পুলিশ সূত্রের খবর, ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় উপাচার্যকে জানিয়ে দিয়েছেন, প্রয়োজনীয় অনুমোদন মিললে সঙ্গে সঙ্গেই আদালতে চার্জশিট দাখিল করবেন তদন্তকারী অফিসার।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ২০১০ সালের ৩০ মার্চ রেজিস্ট্রার দিলীপ সরকার-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে মাটিগাড়ায় থানায় এফআইআর করেন উপাচার্য অরুণাভ বসু মজুমদার। ওই বছরের এপ্রিল মাসে দিলীপবাবু আবেদন করলে আদালত তাঁকে আগাম জামিন দেয়। ওই মামলা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠায় তদন্ত সম্পূর্ণ করে তদন্তকারী অফিসার জানিয়ে দেন, প্রাথমিক ভাবে যে সাক্ষ্যপ্রমাণ মিলেছে তাতে অভিযোগের সারবত্তা রয়েছে। মামলায় দিলীপবাবু ছাড়াও তৎকালীন উপাচার্য পীযূষকান্তি সাহার নামও জড়িয়ে যায়। বিধি অনুযায়ী, ওই দু’জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি নিরোধক ধারায় চার্জশিট পেশ করার জন্য নিয়োগকর্তার অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। তাই চার্জশিট পেশের অনুমতি রাজ্যপালের কাছে চাওয়া হয়েছে।
উচ্চ শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, ওই আবেদনপত্র পাওয়ার পরে তাতে ‘নোট’ দিয়ে কয়েকটি বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা দফতরের সচিবের ব্যাখ্যা চেয়েছেন আচার্য। পুজোর আগে উচ্চ শিক্ষা দফতরে আচার্যের ‘নোট’ সম্বলিত ফাইল গেলেও তা এখন রাজভবনে ফেরত যায়নি বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে দাবি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার-শিক্ষকদের একাংশ জানান, উচ্চ শিক্ষা দফতরের এক অফিসার অসুস্থ থাকায় ফাইলটি যুগ্ম সচিব পর্যায়ের এক জনের টেবিলে যায়। সেই থেকে ফাইলটি পড়ে রয়েছে কেন তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে জল্পনা চলছে। |