|
|
|
|
|
এত রক্ত কেন |
|
দ্যাখো কী করে দাঁড়ায়ে আছে জড় পাষাণের স্তূপ, মূঢ় নির্বোধের মতো’ নিঃসন্তান গুণবতীর মতো আজও রঘুপতিকে রক্তপ্লাবনে বাধ্য করছে হাজার হাজার মানুষ! রবীন্দ্রনাথের এ বিসর্জনে পুজো বন্ধ হবে না কোনও দিন, ছাগশিশু বলি হয়েই যাবে! ঢাক বাজছে, বাজছে কাঁসর; গভীর রাতে পায়ের তলে রক্তগঙ্গা, ছাগশিশুর আকূতি! দক্ষিণ দিনাজপুরের বোল্লাকালীতে চলল রাতভর বলি। মায়ের সন্তান কোলছাড়া হতেই আশীর্বাদের হাত! দেড় হাজার ছাগশিশুর অবুঝ মাথাগুলো পড়ে আছে নিথর। ভোরের আলো ফুটতেই বিকিয়ে যাবে একশোয়। কী হবে? বোল্লা মায়ের ট্রাস্টি বোর্ডে জমা হবে, পরের বার মায়ের গহনা ভারী হবে! মণিহারে জুড়ে যাবে দুর্মূল্য পাথর। এ ভাবেই মা’কে বরণ করে নেবে ভক্তরা! আজ গোবিন্দমাণিক্যের বড় প্রয়োজন, খুব প্রয়োজন প্রতিবাদী হাতগুলোর। প্রতি বছরের এ রক্তোৎসবে কি সত্যিই ঐতিহ্য বাঁচে? ছাগশিশুর মুণ্ডহীন দেহ বস্তাবন্দি করে মেলায় দৌড়, আর বিন্দু বিন্দু রক্তময় পথে ভক্তির সহযাত্রী পাপ! এর পরও মা সন্তুষ্ট হন, এর পরও দিঘি ভরা জল, সোনালি ধানের আশ্বাস আর সুখের প্রতিশ্রুতি! সুখ কেনার বাৎসরিক উদ্যাপন এ মেলা। সারা বছর দুর্ঘটনা, মৃত্যুর আগাম প্রতিষেধক বাতলে দেবে বলি? ‘কে তোমার বিশ্বমাতা, মোর শিশু চিনিবে না তারে’ কাল আপনার সন্তান দুধেভাতে থাকবেই, ভরসায় চোখ বন্ধ হয়ে দু’হাত জড়ো হয়ে উঠে আসে বুকে! এর পরও বলির কী প্রয়োজন? অবলার বোল, অগতির গতি, অনাথের নাথ মায়ের বরপ্রার্থী অগণিত ভক্তরা আসছে বছর বলি বন্ধ রাখলে কি সুখের সামনে বেড়ে উঠবে অভিমানের দেওয়াল, না কি মায়ের রোষে পাল্টে যাবে সংসার! কোনও প্রমাণ নেই, এ ভাবনার দলিল যাদের হাতে, সেই সব ভক্তদের একবার সাহায্য চাই! দেখবেন, মাটির মূর্তিও কাঁদে, বিসর্জনের দিন আটকে যায় রথের চাকা তবু বলির কী প্রয়োজন! বলবেন, স্বপ্নে দেখা মায়ের আদেশ! স্বপ্নের তো কোনও রি-টেক হয় না। যেমন মৃত্যু, যেমন কড়িকাঠে ছাগশিশু প্রত্যাবর্তনের পথ নেই! প্রগতি, শিক্ষার চর্ব্য-চোষ্য-লেহ্যর পরও পেট ভরেনি। সংস্কারের প্রদীপটা ঝড়ে আগলে রাখার পাঠ নিচ্ছে প্রত্যহ! তবে কীসের চেতনা, কীসের মগজ? কীসের বলে জগতের বুদ্ধিমান প্রাণীর গৌরব?
|
প্রতিভা |
|
স্বাতী চাকী। স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রফুল্ল চাকীর বংশধর। কিন্তু সেটাই তাঁর পরিচয় নয়। স্বাতী বহুগুণান্বিত। তাঁকে কেউ দেখেছেন সুরেলা কণ্ঠে মঞ্চে গাইতে, কেউ অভিনয় করতে, উদাত্ত কণ্ঠে আবৃত্তি করতে, বাংলা-ইংরেজি ভাষায় চূড়ান্ত সপ্রতিভ ভাবে মঞ্চ সঞ্চালনা করতে। নৃত্যশিল্পী হিসেবেও দেখা যায় তাঁকে। ১৯৮২-র ২৬ জানুয়ারি স্বাতীর জন্ম আলিপুরদুয়ারে। আকাশবাণী শিলিগুড়ির শিশুমহল বিভাগে গান ও আবৃত্তির মধ্য দিয়ে তাঁর পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে সাত বছর বয়সেই। মায়ের হাত ধরে সাংস্কৃতিক জগতে পা ফেলা। কালী বিশ্বাসের কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীত শেখেন। ন’ বছর বয়সে আকাশবাণী শিলিগুড়ি নাট্য বিভাগে অডিশনে পাশ করে নিয়মিত নাটক করার সুযোগ ঘটে। ‘ভ্রূণ’ নাটকে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় তাঁকে উত্তরবঙ্গের বুকে বারে বারে এনে দেয় শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার। ‘বহুরূপী’ নাটকে অভিনয় করে ‘মহকুমা শ্রেষ্ঠ’, ‘রাজ্য শ্রেষ্ঠ’, ‘জেলা শ্রেষ্ঠ’ পুরস্কার মিলেছে। সংঘশ্রী যুব নাট্য সংস্থার কর্ণধার পরিতোষ সাহার হাত ধরে মঞ্চ অভিনয়ে পথ চলা। তপন সাহার নিয়মিত তালিম তাঁকে ‘দক্ষ অভিনেত্রী’ করে তোলে। নাট্য পরিচালনাতেও তিনি দক্ষ। উত্তরবঙ্গের প্রেক্ষাপটে নির্মিত বাংলা ছায়াছবি ‘দেয়াল’-এ অভিনয় ও পরিচালনার দায়িত্ব সকলকে অবাক করেছে। মেঘনাদ ভট্টাচার্য ও চন্দন সেনের স্নেহ-সান্নিধ্য লাভ তাঁর জীবনে বাড়তি পাওনা বলে তিনি জানান। আরও একটি ছায়াছবি নির্দেশনায় বর্তমানে তিনি ব্যস্ত।
|
সংস্কৃতি-কেন্দ্র |
জলদাপাড়া অভয়ারণ্য লাগোয়া বর্ধিষ্ণু শালকুমারহাটের নাম সর্বজনবিদিত। এখানে বিভিন্ন জনজাতির ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে মিশ্র ভাব গড়ে উঠেছে। যুগের হাওয়ায়, সময়ের ব্যবধানে, লৌকিক সংস্কৃতির ধারা-উপধারাগুলো আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতির সেই সব আঙ্গিককে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট মহল থেকে বিশেষ উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। আর সেই উদ্দেশ্যেই শালকুমারহাটে গড়ে তোলা উচিত লোকসংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র। সবুজে ঘেরা শালকুমারহাট এলাকার জলদা পাড়া, সুরি পাড়া, মুন্সি পাড়া, প্রধান পাড়া, সিড় বাড়ি, কলাবাড়িয়া প্রভৃতি গ্রামে বসবাস করছেন বহু প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কিছু জনজাতি-সহ নানা সম্প্রদায়ের মানুষ। শালকুমারহাট এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে আছেন রাভা সম্প্রদায়ের মানুষ। রাভাদের পাশাপাশি কিছু কিছু এলাকায় রয়েছে মেচ, গারো, নেপালি ভাষাভাষী মানুষের বসতি। তবে, জনসংখ্যার নিরিখে শালকুমারহাট এলাকার সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজবংশী ক্ষত্রিয় সম্প্রদায়ের মানুষ। মুণ্ডা, ওরাওঁ প্রভৃতি আদিবাসী পরিবারও বিক্ষিপ্ত ভাবে বাস করছে। এ ছাড়াও এলাকায় কিছু কায়স্থ ও মুসলিম পরিবারের বাস আছে। সব মিলিয়ে জনসংখ্যা দেড় লক্ষাধিক। শালকুমারহাট এলাকার চলতি ভাষায় রাজবংশী ভাষার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। ওই সম্প্রদায়ের পাশাপাশি এলাকায় বসবাসকারী অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও রাজবংশী ভাষাকেই কথ্য ভাষা হিসেবে ব্যবহার করেন। অন্য ভাষার ব্যবহার তুলনামূলক কম। বিভিন্ন ভাষাভাষীর সহাবস্থানের দৌলতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানও ঘটেছে। গড়ে উঠেছে মিশ্র সংস্কৃতির বাতাবরণ। অনেক ক্ষেত্রেই রাজবংশী, মেচ, রাভা প্রভৃতি জনজাতির মানুষ নিজ নিজ কৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। প্রবীণদের দৌলতে শালকুমারহাট এলাকায় বারো মাসে ১৩ পার্বণের মতো নানা লৌকিক আচার-অনুষ্ঠান বছরের নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়। নানা লৌকিক দেব-দেবীকে কেন্দ্র করে পুরনো রীতিনীতির পাশাপাশি লোকসংগীতের উপস্থাপন ও লোকবাদ্যযন্ত্রের সুমধুর ধ্বনি এখনও শোনা যায় শালকুমারহাট এলাকায়। ভাওয়াইয়া সংগীতজগতের খ্যাতনামা শিল্পী অন্ধ ফটিক রায়ের বাড়ি শালকুমারহাট এলাকায়। দোতারা ডাম্বা-সহ মন মাতানো ভাওয়াইয়া গান করে তিনি এখনও আসর মাতিয়ে দেন। ইতিমধ্যে আরও কিছু নবীন শিল্পী ভাওয়াইয়া গানের জগতে পদার্পণ করেছেন। অল্প দিনের মধ্যে তাদের প্রতিভাও বিকশিত হবে বলে আশা। |
|
|
|
|
|