|
|
|
|
সেজ-এর রাস্তা খোলা রাখছেন মমতাও |
রোশনী মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (সেজ) গঠনের রাস্তা ‘খোলা রাখল’ তৃণমূল নেতৃত্বধীন রাজ্য সরকার।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের জমি নীতির খসড়ায় সেজ-এর সংস্থান রেখে দেওয়ার ঘটনাকে শিল্পায়নের জন্য ‘ইতিবাচক পদক্ষেপ’ বলেই মনে করছে প্রশাসন এবং শিল্প মহলের একাংশ। তাদের বক্তব্য, উদ্যোগপতিরা সেজ আইনের আওতায় বিশেষ ছাড় পেলে রাজ্যে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। অন্যথায় বেসরকারি বিনিয়োগ টানায় রাজ্য পিছিয়ে পড়বে। অর্থাৎ শিল্পায়ন হবে না। যার অর্থ, উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের প্রশ্নে রাজ্যের পিছিয়ে পড়া।
তাঁর সরকারের জমি-নীতি তৈরি করার জন্য প্রাক্তন ভূমি আমলা দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সোমেন্দ্রচন্দ্র বসুকে নিয়ে মমতা যে কমিটি গড়েছিলেন, তাদের তৈরি ‘পশ্চিমবঙ্গের ভূমি ব্যবহার বিধি’র খসড়ার ১৩ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে: ‘বর্তমান সরকার বলতে পারে যে, তারা রাজ্য সেজ আইন, ২০০৩ বাতিল করবে এবং কেন্দ্রীয় আইনের আওতায় সেজের জন্য কোনও জমি অধিগ্রহণ করবে না। কিন্তু কোনও উদ্যোগপতি, যাঁর সেজ গড়ার জন্য নিজের জায়গা আছে, তিনি যদি রফতানি বাজারে প্রতিযোগিতায় সুবিধা পেতে সেজের জন্য প্রস্তাব দেন, তা হলে বিশেষজ্ঞ কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। সে ক্ষেত্রে দেখা হবে, তাঁর দাবির সত্যতা আছে কি না। যদি তা থাকে এবং প্রস্তাবক একাই যদি সেই জায়গার মালিক হন, তা হলে তা সেজ হিসাবে ঘোষণা করা যেতে পারে। তবে সরকার সেজের জন্য কোনও জমি অধিগ্রহণ করবে না’। খসড়াটি অবশ্য এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশিত নয়।
সেজ-এর রাস্তা খুলে রাখার এই নীতিকে প্রশাসন ও শিল্প মহলের একাংশ ‘প্রশাসক’ মমতার ‘ইতিবাচক’ পদক্ষেপ হিসেবে দেখলেও একে ‘রাজনীতিক’ মমতার ‘প্রতারণা’ বলে মনে করছে বিধানসভা ভোটে তাঁর পক্ষে সওয়াল করে-আসা বিভিন্ন মহল। বামপন্থীদের একাংশ তাঁর জমি-নীতির এই অংশের বিরুদ্ধে সরব তো বটেই। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্ব থেকে বহু বার প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, তিনি সেজের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাঁর সরকারই জমি-নীতিতে এমন সংস্থান রাখল কী করে, সেই প্রশ্ন উঠেছে। বস্তুত, মমতার কমিটি যে যুক্তি দেখিয়েছে, প্রায় একই যুক্তিতে বামফ্রন্ট জমানায় ২০০৩ সালে রাজ্যে সেজ আইন চালু হয়েছিল। কিন্তু সেজ নিয়ে সিপিএম তথা বামফ্রন্টের অন্দরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, নিরুপম সেনদের সঙ্গে একাংশের তীব্র মতপার্থক্য ছিল। শেষ পর্যন্ত সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামকে কেন্দ্র করে সেজ-বিরোধী গণ আন্দোলনের জেরেই বামফ্রন্টের নির্বাচনী ভরাডুবি হয় বলে ফ্রন্টের বাইরে এবং ভিতরের একাধিক দল মনে করে।
সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ বলেন, “সেজ মানেই শ্রম আইন লঙ্ঘন এবং শিল্পমালিককে নানা ধরনের কর-ছাড়। মমতা সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে অজস্র বার বলেছেন, তিনি সেজের বিরুদ্ধে। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষও বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা সেজ চান না। অথচ মমতার সরকার সেজের রাস্তা খোলা রাখছে। এটা রাজ্যবাসীর সঙ্গে প্রতারণা।”
বিতর্কিত তৃণমূল সাংসদ কবীর সুমনের কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে বহু বার প্রকাশ্যে বলেছেন, তিনি সেজের বিরুদ্ধে। এখন সেজ গড়তে অনুমতি দিলে তা তাঁর বিশ্বাসঘাতকতা।” নাট্যব্যক্তিত্ব কৌশিক সেন বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “রাজ্য সরকার সেজ গড়তে অনুমতি দিলে সেটা হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই লড়াই। আসলে বিরোধী থাকলে যা বলা যায়, ক্ষমতায় গেলে তা সব সময় করা যায় না!”
শুধু সেজ নয়, ‘পশ্চিমবঙ্গের ভূমি ব্যবহার বিধি’র খসড়ার ৪৬-এ পৃষ্ঠায় ভূমি সংস্কারকে ‘জমি ডাকাতি’ও বলা হয়েছে। পার্থবাবুর বক্তব্য, “জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন মেনে ভূমি সংস্কার করলে জমি ডাকাতি কেন হবে?” রাজ্য সরকারের প্রস্তাবিত ‘ভূমি ব্যবহার বিধি’ ও কেন্দ্রের নয়া জমি-নীতি বাতিলের দাবিতে আজ, বুধবার সংসদের সামনে বিক্ষোভ করবে লিবারেশনের কৃষক সংগঠন ‘সারা ভারত কিষাণ মহাসভা’। |
|
|
|
|
|