বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসঘরে বসে খাতা দেখছেন শিক্ষকেরা। পর্যাপ্ত ঘর নেই, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ। আবার পরীক্ষক শিক্ষকেরা এসেছেন যে সব কলেজ থেকে, শিক্ষকের অভাবে সেখানেও পঠন-পাঠন সঙ্কটে।
বারাসতের পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার হাল নিয়ে এখন এমনই অভিযোগ। উত্তরপত্র দেখার ক্ষেত্রে ‘স্পট ইভ্যালুয়েশন সিস্টেম’ চালু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ পরীক্ষকেরা পরীক্ষার খাতা দেখবেন বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যুক্তি, এতে কে কী ভাবে খাতা দেখছেন, সে দিকে নজর রাখা যায়। খাতা হারানোর ভয় থাকে না। উপরন্তু দ্রুত ফল প্রকাশ করা সম্ভব হয়। কিন্তু অভিযোগ, প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ছাড়াই ব্যবস্থাটি চালু হওয়ায় নানা সমস্যা হচ্ছে।
এই ‘নানা সমস্যার’ অন্যতম, খাতা দেখার সময়ে ক্লাসঘরের অভাবে পঠনপাঠন বন্ধ থাকছে। পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে ৩১টি বিভাগ। ১২ অক্টোবর নতুন ব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত পরীক্ষার খাতা দেখা শুরু হওয়ার পর থেকে স্নাতকোত্তরের ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাসঘর পাচ্ছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সম্পাদক নারায়ণ ঘোড়ুইয়ের কথায়, “এমনিতেই এখনও সব বিভাগে ক্লাস নেওয়ার পর্যাপ্ত ঘর নেই। তার উপরে মূল বিল্ডিংয়ের কয়েকটা ঘর বাদ দিয়ে পুরোটাই প্রশাসনিক কাজকর্ম আর খাতা দেখার জন্য ব্যবহার হচ্ছে। নতুন বাড়ি শেষ হয়নি। তারই মধ্যে আটটা ঘরে কোনওক্রমে ক্লাস চলছে। পরীক্ষার খাতা দেখার জন্য কখনও সেই ঘরও ছাড়তে হচ্ছে।”
|
ক্লাস কী রকম ব্যাহত হচ্ছে? বাংলা স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষের ছাত্র মৃন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ঘরের অভাবে আমাদের সপ্তাহে আঠারোটার জায়গায় দশটার মতো ক্লাস হচ্ছে।” নিভা রায়-তমাল সাহা-মুকুল বিশ্বাসের মতো স্নাতকোত্তরের পড়ুয়াদের আক্ষেপ, ক্লাসঘরের সঙ্কট তো আছেই, পাশাপাশি পানীয় জল, শৌচাগার নিয়েও নানা অসুবিধে। নতুন ভবনে পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই, শৌচাগারও নেই। উপাচার্য অশোকরঞ্জন ঠাকুরের বক্তব্য, “বাড়ি পুরোপুরি তৈরি হলে সমস্যা থাকবে না।”
তবে শুধু স্নাতকোত্তরে নয়, বারাসত বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন কলেজে স্নাতকস্তরেও পঠনপাঠন ধাক্কা খাচ্ছে বলে অভিযোগ। কারণ, কলেজের শিক্ষকেরা পালা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন খাতা দেখতে। যেমন বিধাননগর সরকারি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ প্রবীর দাস বলেন, “পুজোর ছুটিতে শিক্ষকদের বাড়িতে খাতা দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ রাজি হননি। এমনিতেই বিভিন্ন কলেজে যথেষ্ট শিক্ষক নেই। তার উপরে ওঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে খাতা দেখতে হচ্ছে বলে কলেজের ক্লাস বিঘ্নিত হচ্ছে।”
বারাসতের পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার অধীনস্থ কলেজগুলো মিলিয়ে অন্তত এক লক্ষ পড়ুয়া। গড়ে প্রত্যেকের ছ’টি বিষয় ধরলে বছরে ছ’লক্ষেরও বেশি উত্তরপত্র শিক্ষকদের যাচাই করতে হচ্ছে। এটা কি বেশি চাপ হয়ে যাচ্ছে না? এতে তো পড়াশোনাতেও বাধা পড়ছে! বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই অভিযোগকে তেমন আমল দিচ্ছেন না। উপাচার্য বরং বর্তমান সঙ্কটের জন্য কার্যত শিক্ষকদের দিকেই আঙুল তুলছেন। অশোকবাবু বলছেন, “ক্লাস নেওয়ার পাশাপাশি খাতা ঠিকঠাক দেখাটাও শিক্ষকের দায়িত্ব। অক্টোবরে পুজোর ছুটি না-নিয়ে খাতা দেখলে শিক্ষকদের এখন পড়াতে সমস্যা হতো না। আর সব শিক্ষক খাতা দেখতে রাজি হলে কয়েক জনের উপরে এত চাপও পড়ত না।” |