বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের নবগ্রাম শাখায় ভল্ট ভেঙে প্রায় দশ লাখ টাকা ডাকাতি করে চম্পট দিল দুষ্কৃতীরা। সোমবার রাতে সাড়ে তিনটে নাগাদ দুষ্কৃতীরা ওই ব্যাঙ্কের পিছনের পুকুরপাড় দিয়ে দেওয়াল ভেঙে ভিতরে ঢোকে। বঙ্গীয় গ্রামীন বিকাশ ব্যাঙ্কের মুর্শিদাবাদ রিজিওনের ম্যানেজার (আর এম) নিখিলেশ মিত্র বলেন, “দুষ্কৃতীরা সেফ ভল্ট ভেঙে ৯ লক্ষ ৮২ হাজার ৪৭ টাকা ডাকাতি করেছে।” ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার সচল দত্ত বলেন, “এক তলায় সিঁড়ির দেয়ালের ইট খুলে সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে একে একে ৪টি তালা ভেঙে দুষ্কৃতীরা ব্যাঙ্কের ভিতরে ঢোকে। সেখানে গার্ডওয়াল ভেঙে প্রায় ৫০০ কেজি ওজনের সেফ ভল্ট টেনে বের করে লাখ দশেক টাকা লুঠ করে দুষ্কৃতীরা। তাতে মনে হচ্ছে দোতলায় ব্যাঙ্কের ভিতরে অন্তত ৪ জন দুষ্কৃতী ঢুকেছিল।” তবে পুলিশের অনুমান, ওই ব্যাঙ্ক ডাকাতির ঘটনায় দুষ্কৃতীরা সংখ্যায় জনা দশেক ছিল। |
|
|
ডাকাতির তদন্তে পুলিশ। ছবি গৌতম প্রামাণিক। |
|
ব্যাঙ্কটির নিজস্ব কোনও নৈশরক্ষী না থাকলেও স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির দু’জন নৈশপ্রহরী রাতে এলাকায় পাহারা দেয়। তাঁদের এক জন বিশ্বনাথ মণ্ডল দুষ্কৃতীদের দেখতেও পান। তাঁকে তখন হাত-পা-মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে ব্যাঙ্কের নীচতলার শৌচালয়ের মধ্যে আটকে রাখে দুষ্কৃতীরা। মুর্শিদাবাদ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মৃণাল মজুমদার বলেন, “ওই ব্যাঙ্ক ডাকাতির ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। ডাকাতি করার সময় যে নৈশপ্রহরীকে দুষ্কৃতীরা ব্যাঙ্কের নীচের শৌচালয়ে বেঁধে রেখেছিল তাঁকে ও আরও কয়েক জনকে জিজ্ঞাসবাদ করে দুষ্কৃতীদের সম্বন্ধে জানার চেষ্টা চলছে।”থানা থেকে মাত্র শতিনেক গজ দূরে বাজারের মধ্যে একটি ভাড়া বাড়ির দোতলায় রয়েছে বঙ্গীয় গ্রামীন বিকাশ ব্যাঙ্কের নবগ্রাম শাখা। বাড়িটির সামনের দিকে রয়েছে নবগ্রাম-খড়গ্রাম রাজ্য সড়ক ও পিছনে রয়েছে একটি বিশাল পুকুর। ওই পুকুর পাড়ে ব্যাঙ্কের একতলায় শৌচালয় লাগোয়া একটি ঘরে রয়েছে জেনারেটর। জেনারেটরটি দেখভাল করেন স্থানীয় যুবক মনিরুজ্জামান শেখ। প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবারও সকাল ৮টা নাগাদ তিনি পুকুর পাড়ে জেনারেটর দেখতে যেতেই শৌচালয়ের সামনে একটি তালা ও একটি টর্চ লাইট পড়ে থাকতে দেখেন। শৌচালায় থেকে মানুষের গোঙানির আওয়াজও শুনতে পান। মনিরুজ্জামান বলেন, “শৌচালয়ের দরজায় বাইরে থেকে শিকল দেওয়া। ভিতর থেকে গোঙানির শব্দ আসছিল। ভয় পেয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়ে ব্যাঙ্কের বাড়িটির মালিক অনুপ মার্জিতকে সব কথা জানাই। তারপরে আরও কয়েকজনকে ডেকে নিয়ে ফের সেখানে যাই। শিকল খুলে দেখি ব্যবসায়ী সমিতির নৈশপ্রহরী বিশ্বনাথবাবুর হাত-পা-মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা। তার পর নজর পড়ে দোতলার ব্যাঙ্কের ঘরে যাওয়ার জন্য শৌচালয় লাগোয়া সিঁড়ির দেওয়ালের অনেক গুলি ইট খুলে ফেলা হয়েছে। ফলে ব্যাঙ্কে ডাকাতি হয়েছে বলে তখনই সন্দেহ হয়।” তার পরই থানায় খবর দেওয়া হয়। খবর দেওয়া হয় স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক তথা ওই ব্যাঙ্কের অস্থায়ী কর্মী মর্তেশ্বর মণ্ডলকে। মর্তেশ্বরবাবু বলেন, “ব্যবসায়ী সমিতি থেকে দু’জন নৈশপ্রহরী রাখা হয়েছে। প্রতি রাতের মতো এ দিনও রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ বাসুদেব মণ্ডল নামে এক নৈশপ্রহরী সবে বাড়ি চলে গিয়েছেন। অপর জন বিশ্বনাথবাবুও বাড়ির পথে পা বাড়িছেন। এমন সময় পুকুরে দিকে ব্যাঙ্কের পিছনে কয়েক জন গেল বলে বিশ্বনাথবাবুর মনে হয়। ফলে তিনি পুকুর পাড়ের দিকে যেতেই তাঁকে পাকড়াও করে দুষ্কৃতীরা।” ওই নৈশপ্রহরী বিশ্বনাথবাবু বলেন, “আমার হাত-পা-মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধে ৪ জন দুষ্কৃতী। নড়াচড়া করলে বা চিৎকার করলে আমাকে গুলি করবে বলে ওরা আমাকে হুমকিও দেয়। আমার মাথায় পিস্তলও ধরে। তাদেরই আর একটি দল তখন দোতলায় ব্যাঙ্কের ভিতরে ডাকাতি করছিল।” ব্যাঙ্ককর্তা নিখিলেশবাবু বলেন, “বিমা করা থাকায় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের কোনও শাখাতেই নিরাপত্তা কর্মী, বা নৈশপ্রহরী রাখা হয় না।” |