ক্রিকেটে মুখরক্ষা
কটকে: ১ উইকেটে রুদ্ধশ্বাস জয়
ক্যারিবিয়ান ইনিংস শেষ হতে না হতে টুইটারে ভেসে এসেছিল জনৈক সহবাগ ভক্তের বার্তা, “বীরুর ব্যাট চললে আমরা ৩০ ওভারে জিতছি। না চললে ৪৫ ওভারও লাগতে পারে!”
আর ৩০ ওভার! বীরুর ব্যাট তো নয়ই, চলল না গম্ভীর, কোহলি বা রায়নার ব্যাটও। ২১১-র মতো নিরামিষ স্কোর তাড়া করতে গিয়ে ভারত কি না ১১.২ ওভারে ৫৯-৫। সন্ধের আলো-ঝলমলে বরাবাটিতে তখন হঠাৎই অঘটনের সুনিশ্চিত হাতছানি। একের পর এক উইকেট প্লেটে করে সাজিয়ে দেওয়া হচ্ছিল ক্যারিবিয়ানদের জন্য। সহবাগ যেমন। লেংথ বল, সিমে পড়ে ভিতরে ঢুকছে। ব্যাট যদি কটকে থাকে তো প্যাড ভুবনেশ্বরে! ফাঁক দিয়ে গলে বল চুমু খেল মিডল স্টাম্পে। গম্ভীরের খোঁচা তার আগে গিয়েছে কিপারের গ্লাভসে আর ফর্মে থাকা কোহলির স্টাম্প উপড়ে নিয়েছে কেমার রোচের ইনসুইঙ্গার। সুরেশ রায়নার আউট তো কহতব্য নয়। যে আলতো ড্রাইভ মিড অফের হাতে জমা পড়ল, টিমের ওই পরিস্থিতিতে ওই শট খেলে ফিরলে অনূর্ধ্ব ১৭-র ভাগ্যেও কোচের থাপ্পড় থাকা খুব স্বাভাবিক ঘটনা।
সহজ উইকেটে আগে ব্যাট করে মেরেকেটে ২১১। এত অল্প পুঁজি নিয়ে ঘরের মাঠে ভারতকে পেড়ে ফেলা পেট্রোলের দাম কমিয়ে দেওয়ার চেয়েও কঠিন। তা সেই অসাধ্য সাধন করার দিকেও পা বাড়িয়েছিল ডারেন স্যামির ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হল না, কারণ প্রথমে রোহিত শর্মার ৯৯ বলে ৭২। আর তারপরে অনন্ত চাপের মুখে দুই ভারতীয় তরুণের হার না মানা সংকল্প। পেস বোলিংয়ের জোড়া ফলা দশ ও এগারো নম্বর বরুণ অ্যারন ও উমেশ যাদব।
বরাবটি থ্রিলারের নায়ক রোহিত। ছবি: পিটিআই
বরাবাটির রুদ্ধশ্বাস থ্রিলারে রক্তচাপ বাড়ানো অসহ্য টেনশন হাজার চল্লিশেক দর্শককে ধাওয়া করেছে বারবার। কখনও কঠিন ম্যাচ ঠাণ্ডা মাথায় বের করার মুখে রোহিতের বোল্ড হওয়া। কখনও চাপ সামলাতে না পেরে বিনয় কুমারের ফেরা। স্কোরবোর্ডে ২০১-৯। একটা একটা করে রান এসেছে আর মাঠের ধারে বসে টেনশনে ছটফট করেছেন রোহিত। শেষমেশ উমেশের উইনিং স্ট্রোক আর গোটা টিমের উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া। ম্যান অব দ্য ম্যাচ হলে কী হবে, রোহিতের মনে রাখা দরকার, ‘ফিনিশার’ তাকেই বলে যে ম্যাচটা ‘ফিনিশ’ করে আসে। জিতিয়ে ফিরলে তাঁকে বলতে হত না, “না জিতলে চরম হতাশায় ডুবে যেতাম। নিজেকে বারবার দোষ দিতাম। এখন স্বস্তি। একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। সেটা কাজে লাগাতে পেরেছি।”
মাত্র ক’দিন আগে টুইটারে রামিজ রাজা লিখেছেন, “এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা তরুণ ব্যাটিং প্রতিভা হল রোহিত। ভারত ওকে ঠিকঠাক ব্যবহারই করছে না। ও বিরাটের চেয়ে অনেক ভাল ব্যাট।” মুম্বইয়ের হয়ে এ বার রঞ্জিতে তিনটে ম্যাচে একটা ডাবল সেঞ্চুরি, একটা সেঞ্চুরি। বরাবাটি দেখল তাঁর ব্যাটিংয়ের রাজকীয় কর্তৃত্ব। শট বাছার দেখনদারিই হোক বা ড্রাইভ করার সময় টাইমিংয়ের আমেজ, রোহিতের ব্যাটিং যেন অনেকক্ষণ বদ্ধ ঘরে লোডশেডিংয়ের পরে হঠাৎ আলোর জ্বলে ওঠা আর পাখার ফুরফুরে বাতাস। এই দাপুটে ব্যাটিং ধরে রাখতে পারলে অস্ট্রেলিয়ায় তাঁর জন্য টেস্ট দলের দরজা খুলতেই পারে।
দুপুরে জরুরি টসটা জিতেছিলেন সহবাগ। টস জিতলে যে কেউ এখানে চোখ বুজে ফিল্ডিং নেবে। কারণ শিশির ফ্যাক্টর। সন্ধের পরে শিশিরের জন্য স্পিনারদের বল গ্রিপ করতে সমস্যা হবেই। বরাবাটির বাইশ গজে বল পড়ে স্বাভাবিক গতিতে ব্যাটে আসছিল। স্ট্রোক প্লে ব্যাহত হওয়ার প্রশ্ন নেই। সন্ধের দিকে। সহজ উইকেটে অন্তত পৌনে তিনশো মতো তুলতে পারলে সহবাগরা চাপে পড়তেনই। কিন্তু ২১১? নাহ! ভারতের মিডল অর্ডারের মতোই স্কোরারকে সারাক্ষণ ব্যস্ত রেখে উইকেট উপহার দিয়ে গেল ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং। ক্যারিবিয়ান-বধের চিত্রনাট্যে সুপারডুপার হিট তিন পেসার উমেশ-বিনয়-বরুণ। ন’টা উইকেটের পাঁচটা জোরে বোলারদের ঝাঁপিতে। তিন জনের মধ্যে সেরা অবশ্যই যাঁর ব্যাট থেকে এল জয়ের রান। উমেশ যাদব। স্পিডোমিটারে কাঁটা লাগাতার পাক খেল ১৪০-১৪৫ কিলোমিটারের ঘরে! বিদর্ভের ২৩ বছরের উমেশ যাদব অস্ট্রেলিয়ায় নায়ক হয়ে গেলে চোখ কপালে তুলবেন না। শুধু গতিতেই ‘বিট’ করার ক্ষমতা রাখেন সেরাদের। নিটোল ছন্দবদ্ধ অ্যাকশন, হাতে একটা মুচমুচে আউটসুইং আছে। মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টে এই ছেলেটির প্রথম এগারোয় থাকা দরকার। জাহির আর খেলবেন বড়জোর দু’বছর। ইশান্ত-শ্রীসন্থ-আরপি-মুনাফরা বহু সুযোগ পেয়েও জাহিরের নির্বিকল্প সঙ্গী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ। উমেশ-বিনয়-বরুণরা বরং পড়ে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন। ঝকঝকে হাইওয়ে দিয়ে বেশ মসৃণ গতিতেই এগোচ্ছে ভারতীয় পেস বোলিংয়ের ভবিষ্যৎ।
ব্যাটিংয়ে ক্যারিবিয়ানদের প্রাপ্তির খাতা অবশ্য শূন্য। ভিভ-লারাদের দেশে কি না ব্যাটসম্যান নেই! নিদেনপক্ষে একটা ক্রিস গেইলও নেই। আদর্শ আবহ ছিল পৌনে তিনশো তোলার। স্পিনের জুজু নেই পিচে, রকেট গতির আউটফিল্ড। কিন্তু টপ অর্ডারের একজনকে তো গোটা তিরিশ ওভার খেলতে হবে, যার কাঁধে ভর দিয়ে ইনিংসটা জমাট বাঁধবে। একা ব্র্যাভো রোজ টানতে পারেন নাকি? তা-ও ২১১ যে করা গিয়েছে, তার পিছনে তাঁর ৬০ রানের ইনিংস।
সিরিজ ভারতের পক্ষে ৫-০ না হলে একটা কারণেই হবে না। বীরুর টিমের আত্মতুষ্টি। ২১১ মানেই হাসতে হাসতে চোখ বুজে জিতব মনোভাব থেকেই কিন্তু ৫৯-৫ বা ১৫৯-৭ হয়েছিল। কাজেই বিশাখাপত্তনমে শুক্রবার নামার আগে ডানকান ফ্লেচারের ক্লাসে একটাই স্লোগান হওয়া উচিত।
‘আত্মতুষ্টি ভাগাও, টিম বাঁচাও!’

কটকের স্কোরবোর্ড

ওয়েস্ট ইন্ডিজ
সিমন্স বো উমেশ ১৯,
বারাথ ক পার্থিব বো বিনয় ১৭,
স্যামুয়েলস বো অ্যারন ১০,
ব্র্যাভো বো রায়না ৬০,
হায়াত রান আউট ৩১,
পোলার্ড ক বিরাট বো অশ্বিন ১৩,
রামদিন ক ও বো উমেশ ১৪,
স্যামি বো জাডেজা ০,
রাসেল বো অ্যারন ২২,
রোচ ন.আ. ১২,
মার্টিন ন.আ. ৩
অতিরিক্ত: ১০, মোট: ২১১-৯ (৫০ ওভারে)।
পতন: ১৮, ৪৬, ৫২, ১২৭, ১৫৪, ১৫৯, ১৬৯, ১৮৩, ২০০।
বোলিং: বিনয় ৬-০-২৭-১, উমেশ ৮-১-৩৩-২, অ্যারন ৯-০-৪৭-২,
অশ্বিন ১০-১-৩০-১, জাডেজা ১০-০-৪২-১, রায়না ৫-০-২০-১, রোহিত ২-০-৮-০।

ভারত
পার্থিব ক মার্টিন বো রোচ ১২,
সহবাগ বো রাসেল ২০,
গম্ভীর ক রামদিন বো রোচ ৪,
বিরাট বো রোচ ৩,
রোহিত বো মার্টিন ৭২,
রায়না ক ব্র্যাভো বো রাসেল ৫,
জাডেজা ক সিমন্স বো পোলার্ড ৩৮,
অশ্বিন রান আউট ৬,
বিনয় ক রোচ বো স্যামি ১৮,
অ্যারন ন.আ. ৬,
উমেশ ন.আ. ৬,
অতিরিক্ত: ২৩, মোট: ২১৩-৯ (৪৮.৫ ওভারে)।
পতন: ৩৭, ৪১, ৪৭, ৫১, ৫৯, ১৪২, ১৫৯, ২০১, ২০১।
বোলিং: রোচ ১০-০-৪৬-৩, মার্টিন ৬-১-৩৫-১, রাসেল ৯-১-২৯-২,
স্যামি ৮.৫-১-৪০-১, স্যামুয়েলস ১০-০-৩৭-০, পোলার্ড ৫-০-২৩-১।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.