পর্ষদের রিপোর্ট জমা পড়েনি, মাছের মড়কের কারণ অস্পষ্ট
দু’দিন কেটে গেলেও ঠিক কী কারণে করলা নদীতে মাছের মড়ক শুরু হয়েছে তা স্পষ্ট হয়নি। কারণ, মঙ্গলবার দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের যে রিপোর্ট প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়ার কথা ছিল তা জমা পড়েনি। কিন্তু দেরির কোনও কারণ পর্ষদের তরফে জানানো হয়নি। এমনকী পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কান্তি দত্ত এ নিয়ে মুখ খোলেননি। অথচ নদীর দু’পাড়ের মানুষ জলের বিষক্রিয়া নিয়ে শঙ্কিত।
তবে পর্ষদের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, রিপোর্ট দিতে আরও ৩-৪ দিন সময় লাগবে। আপাতত প্রতিদিনই নদীর জলের নমুনা সংগ্রহের কাজ চলবে। সেই মতো মঙ্গলবারও পর্ষদের বিশেষজ্ঞেরা করলা নদীর বিভিন্ন এলাকা থেকে জলের নমুনা সংগ্রহ করেন। করলার ঘটনার পরে পুরসভা লাগাতার প্রচার চালাচ্ছে। এ দিনও জলপাইগুড়ি শহরে মাছ বাজারে লাগাতার নজরদারি চলেছে।
হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন (ন্যাফ)-এর মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “আমরা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের করলার জল, মাছ ও জলজ প্রাণির দেহ পরীক্ষা করে কারণ নির্ণয়ের অনুরোধ করেছি। ওঁরা রাজি হয়েছেন।”
পুরসভার পক্ষ থেকে করলা নদী দূষণমুক্ত করার চেষ্টা চলছে। ছবি: সন্দীপ পাল।

পুরসভা সূত্রের খবর, সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত করলায় মৃত মাছ ভেসে ওঠে। পুরসভার পক্ষ থেকে রাত ১১টা নাগাদ ফের শহর জুড়ে মাইকে সর্তক করা হয়। সকালে নদীর জলে চুন ও ফটকিরির মিশ্রণ ছড়ানো শুরু করে পুরসভা। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র বলেন, “দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্ট এখনও মেলেনি। আপাতত করলা নদীর মাছ ধরা ও জল কোনও কাজে ব্যবহার না করার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।”
এই অবস্থায় জলপাইগুড়ির আনন্দচন্দ্র কলেজের বিশেষজ্ঞদের একটি দল প্রাথমিক তদন্তের পরে সন্দেহ প্রকাশ করেছে, করলা নদীর গর্ভেই বোরো ধানের বীজতলা ইঁদুরের উৎপাত থেকে রক্ষা করতে বিষ প্রয়োগ করায় নদী বিষাক্ত হয়েছে। নদী গর্ভে এক কাঠা জমির কিছু কম এলাকায় বীজতলা হয়েছে। সেই এলাকাটিকে লাল কাপড় দিয়ে ঘিরে রবিবার বিষ দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে। ঘটনাচক্রে ওই এলাকার পর থেকেই গোটা নদীতে মাছের মড়ক শুরু হয়েছে। কৃষি দফতর থেকেও এলাকাটি খতিয়ে দেখা হয়েছে। কিন্তু, কৃষি দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, সামান্য পরিমাণ জমিতে বীজতলা হয়েছে। সেখানে যেটুকু বিষ দেওয়া প্রয়োজন তা থেকে গোটা নদীতে মাছের মড়ক সম্ভব নয়। জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “আপাতত করলা নদীর জলকে বিষমুক্ত করা শুরু হয়েছে। সব দফতরের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।”
নদী বিশেষজ্ঞ তথা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রধান সুবীর সরকার বলেন, “করলা নদীতে ধান চাষ নতুন কোনও ঘটনা নয়। অতি অল্প পরিমাণ জমিতে ধান চাষ হয়েছে। নদীতে ধান চাষে দূষণ হয়, তবে এত পরিমাণ মাছের মৃত্যু সম্ভব নয়। এর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে। সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।”
জলপাইগুড়ি শহর ছাড়িয়ে করলা নদী তিস্তায় গিয়ে মিশেছে। সেই কারণে তিস্তা নদীর মাছেও প্রভাব পড়তে পারে বলে কোনও কোনও মহল থেকে মনে করা হচ্ছে। তবে নদী বিশেষজ্ঞ সুবীরবাবু বলেন, “তিস্তার যা প্রবাহ রয়েছে তাতে খুব একটা ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। অনেক মাছ উত্তরবঙ্গ থেকে অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বলে এতদিন মনে করা হত। কিন্তু সোমবার সেই সব মাছগুলিকে ভেসে উঠতে দেখা গিয়েছে। অর্থাৎ করলায় এসব মাছ ছিল!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.