সম্পাদকীয় ১...
অচলায়তন
মর আবদুল্লা একটি দাবি তুলিয়াছেন। পূর্বেও বলা হইয়াছে, ওমর আরও এক বার বলিলেন, হল্লা করিয়া সংসদ অচল করিয়া রাখিলে সাংসদদের ভাতা কাটিয়া নেওয়া উচিত। কাজ করিলে ভাতা, না করিলে নহে, তিনি এই পথের পক্ষপাতী। দুঃখের বিষয়, ভাতা বন্ধ করিয়া সাংসদদের কর্মনিষ্ঠ হইবার কথা ভাবিতে হইল। আরও দুঃখের ইহাই যে, পরিস্থিতিসাপেক্ষে কথাটি সত্যই বিবেচনার দাবি রাখে। প্রশ্ন হইল, ওমর আবদুল্লার বক্তব্য প্রতিবাদীগণের কর্ণে প্রবেশ করিয়াছে হয়তো, মরমে পশিবে কি? প্রতিবাদের পদ্ধতি বিবিধ। তাহার ভিতর একটি বিশেষ পথে অবশ্য ভারতীয় রাজনীতিকদের প্রবল উৎসাহ আইনসভা অচল করিয়া দেওয়া। শীতকালীন অধিবেশন শুরু হইয়াছে। একটি সপ্তাহ অতিক্রান্ত। এখনও পর্যন্ত কোনও কাজ হয় নাই। খুচরা ব্যবসায়ে বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করিতে সাংসদদের এমনই উৎসাহ যে তাঁহারা ক্রমাগত সংসদের কর্মদিবস বানচাল করিতেছেন। পূর্বেও এমন কাণ্ড একাধিক বার ঘটিয়াছে। সেই কুনাট্য এখনও চলিতেছে। প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রে যাঁহারা নির্বাচিত হইয়া সংসদে আসিয়াছেন, এবং সাংসদ হইবার কারণে জনতারই প্রদত্ত অর্থে বিবিধ সুযোগসুবিধা ভোগ করিতেছেন, তাঁহারা বিভিন্ন সময় সংসদ অচল করিয়া দেওয়াকেই সাফল্যের পরাকাষ্ঠা বলিয়া ভাবেন। কেন, তাহার একটি সহজ উত্তর অনায়াসে দেওয়া হয়। জনগণের স্বার্থরক্ষা! অতঃপর?সংসদ কেন আছে? জনতার হিতকল্পে বিভিন্ন বিষয়ে তর্কবিতর্ক ইত্যাদির মাধ্যমে কিছু গঠনমূলক সমাধানে উপনীত হইবার জন্য। ইহাই আদর্শ, সাংসদগণও ইহার সহিত একমত হইবেন, নিশ্চিত। কার্যক্ষেত্রে অবশ্য বিষয়টি বিশেষ নির্বিঘ্ন থাকে না। কিছু দর কষাকষি চলে, বোঝাপড়া হয়, সংসদের বাহিরের রাজনীতির কিছু প্রভাব, কিছু ছায়া আসিয়া পড়ে গণতান্ত্রিক প্রাঙ্গণে। এই পর্যন্ত সহজবোধ্য। কিন্তু, সংসদে তাণ্ডব এবং তুমুল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকেই যদি জন-স্বার্থরক্ষার উপযুক্ত উপায় বলিয়া জ্ঞান করা হয়, তখনই সংকট। প্রথমত, প্রতিবাদের পদ্ধতি এবং কিছু গঠনমূলক কাজ করিবার রাস্তা কখনওই সংসদকে অচলায়তন বানাইয়া আসিতে পারে না। দ্বিতীয়ত, প্রতিবাদের কারণ এবং তাহার প্রেক্ষাপটগুলিও গভীর ভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। লোকসভায় প্রধান বিরোধী দল বি জে পি বর্তমানে খুচরা ব্যবসায় বিদেশি পুঁজির প্রতিবাদে গগন বিদীর্ণ করিতেছে। অথচ, ইতিহাস বলিবে, মাত্র সাত বৎসর পূর্বে বি জে পি-ই তাহার নির্বাচনী ইস্তাহারে খুচরা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রটিকে বাজারের সম্মুখে উন্মুক্ত করিয়া দিবার প্রতিশ্রুতি দিয়াছিল। এক্ষণে প্রতিবাদ করিলে কিছু খুচরা হাততালি মিলিবে, তাই ঘোলা জলে মৎস্য শিকারের অভিলাষে বি জে পি নামিয়া পড়িয়াছে। অর্থাৎ, নিহিত আদর্শ নহে, বরং যেন তেন প্রকারেণ প্রতিবাদের নেশা এবং বিনিময়ে কিছু রাজনৈতিক সুবিধার আগ্রহেই খুচরা ব্যবসায়ে বিদেশি পুঁজির বিরুদ্ধে এই আস্তিন গুটাইয়া নামা। ইহার সহিত জনস্বার্থের কী সম্পর্ক, তাহা দূরবীক্ষণ দিয়া খুঁজিয়া দেখিবার বিষয়। মধ্যখান হইতে সংসদ অচল হইবার জন্য প্রতিদিন শুধু বিপুল অর্থনাশ হইতেছে তাহাই নহে, মতবিরোধের প্রকৃত কারণগুলিও আড়ালে চলিয়া যাইতেছে। সেই কারণগুলি যদি তুলিয়া ধরা হয়, যদি তাহা লইয়া আলোচনা চলে, তাহা হইলেই বরং উদ্দেশ্যটি যথার্থ রূপে সাধিত হইবার কথা। অন্যথায়, জনস্বার্থটি নষ্টই হইবে শুধু।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.