শরিকদের পাশে টানতে মরিয়া কংগ্রেস
খুচরো-বিতর্কে অনড়ই, বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী
খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে সবক’টি বিরোধী দল এমনকী শাসক জোটের দুই শরিকও যখন খড়্গহস্ত, তখন অবিচল থাকারই বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। সরকারের মনোভাব স্পষ্ট করে আজ প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, “কোনও রকম তাড়াহুড়ো করে এই সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। বরং ভেবেচিন্তেই পদক্ষেপ করেছে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের জন্য কৃষিপণ্য নষ্ট না হওয়ায় কৃষকরা যেমন আরও ভালো দাম পাবেন, তেমনই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের পাইকারি ও খুচরো মূল্যের ফারাক কমে উপকৃত হবেন উপভোক্তারা।” পাশাপাশি রাজনৈতিক বিরোধিতার মোকাবিলায় কৌশলী প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য, “কেন্দ্র এই সিদ্ধান্ত রূপায়ণে কারও সঙ্গেই জবরদস্তি করছে না। খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির সম্ভাব্য সুফল সম্পর্কে কোনও রাজ্যের সংশয় থাকলে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত রূপায়ণ না করার অধিকারও তাদের রয়েছে।”
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি প্রশ্নে মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর এই প্রথম মুখ খুললেন মনমোহন। আম-আদমির কাছে সরাসরি সংস্কারের বার্তা পৌঁছে দিতে কৌশলে বেছে নিলেন রাহুল গাঁধীর ডাকা যুব কংগ্রেসের অধিবেশন মঞ্চকে। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি এলে যে নতুন প্রযুক্তি আসবে এবং আরও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে, সে কথা তুলে ধরতে চাইলেন নবীন প্রজন্মের সামনে। কিন্তু একই মঞ্চে থেকেও সনিয়া বা রাহুল খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে কোনও মন্তব্য না করায় প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। বিজেপি-র প্রশ্ন, গাঁধী পরিবার এ নিয়ে নীরব কেন? অনেকে আবার এর মধ্যে সরকার-কংগ্রেস মতান্তর দেখছেন। বিশেষ করে যখন বিক্ষিপ্ত ভাবে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের সমালোচনায় কংগ্রেসের কিছু নেতা-সাংসদও এখন মুখ খুলছেন। যা থামাতে আগামিকাল দলের সাংসদদের সামনে খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির বিষয়টি বিশদে ব্যাখ্যা করবেন লোকসভার নেতা তথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়।
পরামর্শ আরোগ্যের পরে এই প্রথম জনসভায় বক্তৃতা সনিয়া গাঁধীর। তারই ফাঁকে
আলোচনা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। নয়াদিল্লিতে মঙ্গলবার। ছবি: এ এফ পি
খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির বিষয়ে সনিয়া-রাহুলের মুখ না খোলা নিয়ে বিতর্কের জবাবে কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “কৌশলেই সংস্কারের বিষয় নিয়ে মন্তব্য করার থেকে বিরত থাকেন রাহুল-সনিয়া। বরং গত সাত বছরের ইউপিএ শাসনে এটাই দস্তুর যে, সংস্কারের কথা বলবেন মনমোহন, রাহুল-সনিয়া বলবেন আম-আদমির সামাজিক সুরক্ষার কথা।” কংগ্রেস সূত্রে আরও বলা হচ্ছে, গত কাল দলের কোর গ্রুপের বৈঠকের পরেই আজ খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন মনমোহন। গত কালের ওই বৈঠকে সনিয়া নিজেই উপস্থিত ছিলেন। আজ মনমোহন যখন সরকারের সিদ্ধান্তে অনড় থাকার কথা ঘোষণা করেন, তখনও সনিয়া পাশে ছিলেন। দলের এক শীর্ষ নেতার প্রশ্ন, “সনিয়ার সায় না থাকলে মনমোহন ওই ভাবে সরকারের কড়া সিদ্ধান্তের কথা বলতে পারতেন?” একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, আগামিকাল দলের সাংসদদের সঙ্গে প্রণবের বৈঠকেও উপস্থিত থাকবেন সনিয়া। সুতরাং খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তে তাঁর যে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে, তা-ও স্পষ্ট।
প্রধানমন্ত্রী সরকারের মনোভাব স্পষ্ট করে দেওয়ার পরে এখন প্রশ্ন উঠেছে, সংসদের অচলাবস্থা কাটবে কী করে? খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে খড়্গহস্ত বিরোধীদের বোঝাতে আজ সর্বদল বৈঠক ডেকেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। এবং তা ভেস্তেও যায়। বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, কেন্দ্র সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করলেই সমস্যার সমাধান হবে। আর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে, সংসদে মুলতবি প্রস্তাব ও তার পর সেই প্রস্তাবে ভোটাভুটি মেনে নিক সরকার। ওই মুলতুবি প্রস্তাবে ‘সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের কথা’ বলা থাকবে। অন্য দিকে বামেদের দাবি, আগে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুক কেন্দ্র। তার পরে আলোচনা হবে সংসদে।
বিদেশি লগ্নির পক্ষে বিপক্ষে
সর্বদল বৈঠক ভেস্তে যাওয়ায় আজও অচল ছিল সংসদ। বৈঠকে প্রণববাবু জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তিনি বিরোধীদের জানাবেন। প্রণববাবু নিজেও আজ যুব কংগ্রেসের অধিবেশনে যোগ দেন এবং খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্তের পক্ষেই সওয়াল করেন। টানা সংসদ অচল থাকায় প্রধানমন্ত্রী আজ বিরোধীদের তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁর অভিযোগ, “বিশ্ব জোড়া অর্থসঙ্কটের মধ্যে একমাত্র কংগ্রেসই পারে মানুষকে সুরাহা দিতে। কংগ্রেস সে পথে হাঁটতেও চাইছে। সংসদে আইন পাশ করাতে চাইছে। কিন্তু বিরোধীরা সংসদ চলতে দিচ্ছে না। মানুষের সঙ্গে অন্যায় করছে।” এই আক্রমণ-প্রতি আক্রমণের মাঝে অবশ্য সংসদ চালানোর জন্য মাথা ঘামনোর প্রক্রিয়াও চালাচ্ছে সরকার। কারণ খাদ্য সুরক্ষা ও লোকপাল বিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব বিল সংসদে পেশ করার দায় রয়েছে কেন্দ্রের। সূত্রের খবর, সে জন্য শেষ পর্যন্ত মুলতবি প্রস্তাবও মেনে নিতে পারে সরকার। তবে সে ক্ষেত্রে প্রস্তাবের ভাষা আরও লঘু করতে চাপ দেওয়া হচ্ছে বিরোধীদের। সূত্রের খবর, ‘সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের’ কথা সেখানে যাতে না বলা হয়, সে জন্য চাপ দিচ্ছে সরকার। তবে বিরোধীরা সে দাবি কতটা মানবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বস্তুত ভোটাভুটির আশঙ্কায় সরকার ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা শুরু করে দিয়েছে। ভোটাভুটি হলেও সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতার সমস্যা যাতে না হয়, সে জন্য তৎপর কংগ্রেস। গত কালই ডিএমকে নেতা করুণানিধির সঙ্গে কথা বলেন প্রণববাবু। আজ তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী পবন বনশল। মুলতুবি প্রস্তাবের বিষয়টি যে সরকারের বিবেচনাধীন, সে কথা সুদীপকে জানিয়ে তিনি এ ব্যাপারে তৃণমূলের অবস্থান জানতে চান। সুদীপ তাঁকে জানান, তৃণমূল খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির ব্যাপারে তাদের অবস্থান আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছে। মুলতুবি প্রস্তাবের বিষয়টি নিয়ে দলে কথা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। সরকারের তরফে লালু, মুলায়ম, বসপা-র সঙ্গেও সমঝোতার চেষ্টা চলছে।
এ সবের মধ্যেই খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির সম্ভাব্য সুফল মানুষের সামনে বেশি করে তুলে ধরার ব্যাপারেই এখন তৎপর সরকার। যার প্রতিফলন আজ দেখা গিয়েছে মনমোহন-প্রণবের কথায়। যুব কংগ্রেসের সমাবেশ মঞ্চ থেকে দু’জনেই আজ বলেন, বিরোধীরা বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের ফলে ছোট ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কিন্তু বিশ্বের অন্য দেশের অভিজ্ঞতা বলছে, বিদেশি লগ্নি এলে বড় ও ছোট উভয় ব্যবসায়ীদের সহাবস্থান সম্ভব। তা ছাড়া খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি এলে ছোট ও মাঝারি শিল্পেরও উন্নতি হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.