খেলার মাঠের জমি নিয়েও প্রকাশ্যে চলে এল তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
বর্ধমান পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে কানাই নাটশালে প্রায় চার বিঘে জুড়ে ছড়ানো খেলার মাঠের মধ্যে এক টুকরো জমির মালিক অনিল শিকদার নামে এক জন। মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর আত্মীয়, তৃণমূলের স্থানীয় নেতা সনৎ বক্সী ট্রাক্টর নামিয়ে ওই জমি চাষ করতে গেলে স্থানীয় ক্লাবের সদস্যেরা বাধা দেন। বাবলু পাল নামে তৃণমূলের আর এক নেতাকে ডেকে আনেন তাঁরা। এই নিয়ে মারপিটে এক তৃণমূল সমর্থক সামান্য আহত হয়েছেন।
কানাই নাটশালের ওই খেলার মাঠ দীর্ঘদিন ধরেই একটি ক্লাবের দখলে রয়েছে। স্থানীয় কয়েকটি প্রাথমিক স্কুল, বৈকুন্ঠপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের শীতকালীন খেলা ও পাড়ার বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ওই মাঠেই হয়। ক্লাবের সম্পাদক প্রশান্ত আদকের দাবি, প্রায় চার দশক ধরে মাঠটি তাঁদের দখলে রয়েছে। ১৯৮৮ সাল থেকে মাঠের মালিকদের কাছ থেকে ধাপে ধাপে কেনা হয়েছে জমি। কেউ আবার ক্লাবকে জমি দান করেছেন। অনিল শিকদার এখনও ১১ কাঠা জমি নিজের হেফাজতে রেখেছেন। সেই অংশও ক্লাব কিনতে চায়। কিন্তু তিনি অস্বাভাবিক দাম চাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। |
দুপুরে সনৎবাবু সেই মাঠে ট্রাক্টর ঢোকানোয় ক্লাবের ছেলেরা বাধা দেন। মাঠের সামনে বসে পড়েন বেশ কিছু যুবক। তাঁদের দাবি, খেলাধুলো ছাড়া অন্য কোনও প্রয়োজন কাউকে আপাতত মাঠে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। প্রশান্তবাবুর বক্তব্য, অনিলবাবুর জমি মাঠের মাঝখানে। তাতে পৌঁছনোর কোনও রাস্তা নেই। যেতে হলে বাকি মাঠের উপর দিয়েই যেতে হয়। তাই মাঠ বাঁচাতে ওখানে ট্রাক্টর ঢোকাতে বারণ করা হয়েছে। মাঠটি সম্পূর্ণ ভাবে কিনতে ‘মাঠ বাঁচাও কমিটি’ তৈরি করা হবে বলেও তিনি জানান। তৃণমূলের বাবলুবাবু বলেন, “এলাকায় অন্য মাঠ নেই। আট-দশটি স্কুলের খেলাধুলোর জায়গা এটাই। এখানে অতীতে রাজ্য পর্যায়ের ভলিবল, বাস্কেটবল প্রতিযোগিতাও হয়েছে। এই মাঠ আমরা নষ্ট হতে দিতে পারি না। এলাকার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে নামব।”
সনৎবাবু পাল্টা বলেন, “ওই ১১ কাঠা জমির মালিকানার কাগজপত্র, খাজনার রসিদ সব কিছুই আমাদের কাছে রয়েছে। ওই জমি আমরা বিক্রি করতে চাই না। কিন্তু ক্লাব জোর করে ওই জমি দখলে রেখেছে।” তাঁর দাবি, দলের জেলা নেতা খোকন দাস ও সুভাষ মণ্ডলের অনুমোদন নিয়েই ওই মাঠে তিনি চাষ করতে গিয়েছিলেন। পুলিশ সুপার এবং থানার আইসি-কেও জানানো হয়েছিল। তাঁর হুঁশিয়ারি, “দরকার হলে পুলিশ দিয়ে মাঠে চাষ হবে।” খোকনবাবু এবং সুভাষবাবু অবশ্য দাবি করেন, এই ব্যাপারে তাঁরা বিন্দুবিসর্গ জানতেন না। পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “ঘটনার পরে সনৎ বক্সী আমায় ফোন করেছিলেন। তাঁকে বলেছি, বৃহস্পতিবার জমির কাগজপত্র নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে। ওঁদের দাবি কতটা সঠিক, তা বিবেচনা করব।” |