মহকুমায় বেহাল ময়না-তদন্ত, ফের দেখাল ঝাড়গ্রাম |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রাজ্যের মহকুমা হাসপাতালগুলোয় ময়না-তদন্ত-পরিকাঠামোর যে কী দুরবস্থা, কিষেণজির মৃত্যুর পরে তা আরও এক বার স্পষ্ট হয়ে গেল।
ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিহত মাওবাদী শীর্ষনেতার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ‘রেফার’ করে দিয়েছিলেন মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালে। কারণ হিসেবে বলা হয়, ‘ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পরিকাঠামো নেই।’ আর এই ঘটনার পরেই স্বাস্থ্য দফতর নড়েচড়ে বসে। ঝাড়গ্রাম হাসপাতালকে শো-কজ করেন রাজ্যের স্বাস্থ্য-সচিব। শনিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার উত্তর পাঠান। কোন পরিস্থিতিতে কিষেণজির দেহ ময়না-তদন্তের জন্য মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল, ওই জবাবে তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। ‘পরিস্থিতি’টা কী রকম ছিল?
ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য: ময়না-তদন্ত করার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক (মেডিকো লিগ্যাল অফিসার) তাঁদের নেই। আপাতত সেখানে ময়না-তদন্তের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন এমবিবিএস পাশ এক জন ডাক্তার। কর্তৃপক্ষের যুক্তি, এমবিবিএস পাশ যে কেউই ময়না-তদন্ত করতে পারেন ঠিকই, কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাঁরা ঝুঁকি নিতে চাননি। ঝাড়গ্রাম হাসপাতালের সুপার সুদীপ কাঁড়ারের কথায়, ‘কিষেণজির মতো কারও দেহের ময়না-তদন্ত যে হেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ (হাই-প্রোফাইল) ব্যাপার, তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া সে কাজ করার ঝুঁকি নেওয়া হয়নি। কেননা পরে কোনও সমস্যা হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই জবাবদিহি করতে হতো।’
আর তাই ময়না-তদন্তের জন্য কিষেণজির দেহটিকে মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ। যার জন্য তাঁদের কারণ দর্শাতে বলেন স্বাস্থ্য-সচিব সঞ্জয় মিত্র। দফতরের প্রশ্ন, ঝাড়গ্রাম থেকে মেদিনীপুরে আনার পথে ‘হাই-প্রোফাইল’ ওই মাওবাদীর মৃতদেহের কোনও ক্ষতি হলে তার দায়িত্ব কে নিত?
শুধু ঝাড়গ্রাম নয়, গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়েই যে বিভিন্ন মহকুমা হাসপাতালে ময়না-তদন্তের জন্য ‘ফরেন্সিক মেডিসিন’-এর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব রয়েছে, স্বাস্থ্য দফতরের তরফে তা স্বীকার করা হয়েছে। ঝাড়গ্রাম হাসপাতাল-সূত্রের খবর, ময়না-তদন্তের জন্য ডোমও সেখানে নেই। আগে যিনি ছিলেন, দরকার পড়লে তাঁর ছেলেকে ডেকে এনে কাজ চালাতে হচ্ছে। এই অবস্থা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য দফতর সেখানে ডোম বহাল করেনি বলে অভিযোগ।
বস্তুত এই সব কারণেই কিষেণজির দেহের ময়না-তদন্ত সংক্রান্ত ঘটনায় ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করা থেকে স্বাস্থ্য-কর্তারা আপাতত বিরত থাকছেন বলে সরকারি সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে। |